অগ্ন্যাশয় (Pancreas) | অগ্ন্যাশয় এর কাজ কি

জীববিজ্ঞান

অগ্ন্যাশয় (Pancreas) কি

অবস্থানঃ অগ্ন্যাশয় পাকস্থলির নিচে অবস্থিত এবং উদর গহ্বরের ডিওডেনামের অর্ধবৃত্তাকার কুন্ডলীর ফাঁক থেকে প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত।

Pancreas
অগ্ন্যাশয় এর ছবি

গঠনঃ অগ্ন্যাশয় ২০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৫ সেন্টিমিটার চওড়া একটি মিশ্র গ্রন্থি এর চওড়া যে দিকটি ডিওডেনামের কুন্ডলির ফাঁকে থাকে তার নাম মাথা; যে অংশ সংকীর্ণ হয়ে প্লীহা পর্যন্ত বিস্তৃত সেটি লেজ; এবং মাথা ও লেজের মাঝের অংশকে দেহ বলে। অগ্ন্যাশয়ের গ্রন্থিগুলো থেকে ছোট ছোট নালিকা বেরিয়ে একত্রিত হয় এবং উইর্সাং নালি (duct of, Wirsung) গঠন করে। এ নালি গ্রন্থির দৈর্ঘ্য বরাবর এসে ডিওডেনামের কাছে অভিন্ন পিত্তনালির সাথে মিলিত হয়ে ভ্যাটার এর অ্যাম্পুলার মাধ্যমে ডিওডেনামে প্রবেশ করে । অগ্ন্যাশয়ের গ্রন্থিকোষগুলো ছোট ছোট নালিকার প্রান্তে আঙ্গুরের গোছার মতো সাজানো। এগুলোর বাইরে ক্ষুদ্র বহুভুজাকার কোষ একত্রিত হয়ে একেকটি আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস (islets of Langerhans) গঠন করে। এগুলো অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে। আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস থেকে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোন ক্ষরিত হয়। দেহের শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণে এসব হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অগ্ন্যাশয় এর কাজ কি

কাজঃ খাদ্য পাকস্থলি থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে যাওয়ার সময় ক্ষারীয় তরলরূপী অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত হয়। অগ্ন্যাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ থেকে দুধরনের ক্ষরণ মিলে অগ্ন্যাশয় রস গঠন করে : (১) পরিপাক এনজাইম এবং (২) একটি ক্ষারীয় তরল

অগ্ন্যাশয় রসে কোন এনজাইম থাকে

এ রসে যে ৩টি প্রধান এনজাইম থাকে তা হচ্ছে অ্যামাইলেজ, লাইপেজ ও প্রোটিয়েজ। অ্যামাইলেজ স্টার্চকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্রতর কার্বোহাইড্রেট ও চিনির অণুতে পরিণত করে। লাইপেজ পিত্ত লবণের উপস্থিতিতে ফ্যাটকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে। প্রোটিন বিশ্লেষকারী বিভিন্ন এনজাইম (প্রোটিয়েজ) পেপটাইড অণুকে ক্ষুদ্রতর পেপটাইডে পরিণত করে। দেহে অধিকাংশ প্রোটিন পরিপাক হয় অগ্ন্যাশয় রসের বিভিন্ন প্রোটিয়েজের মাধ্যমে। অগ্ন্যাশয়ের বহিঃক্ষরা অংশ যে সব প্রোটিয়েজ ক্ষরণ করে তার মধ্যে প্রধান দুটি হচ্ছে ট্রিপসিনকাইমোট্রিপসিন। এগুলো বড় প্রোটিন অণুকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্রতর পেপটাইডে পরিণত করে। (পেপটাইড থেকে অ্যামিনো এসিডে পরিণত হওয়ার বিষয়টি অন্যান্য পেপটাইডেজের ক্রিয়ায় ক্ষুদ্রান্ত্রে সংঘটিত হয়)।

 অগ্ন্যাশয়ের  বহিঃক্ষরা অংশ থেকে অগ্ন্যাশয় রসের অংশ হিসাবে নিঃসৃত হয় বাইকার্বনেট আয়ন।

পাকস্থলিতে আংশিক পাচিত খাদ্য (অর্থাৎ কাইম) গ্যাস্ট্রিনের কর্মকান্ডে অতিমাত্রায় আম্লিক থাকে। বাইকার্বনেটের প্রকৃতি ক্ষারীয় হওয়ায় অর্ধপাচিত খাদ্য নিরপেক্ষ হয়ে যায়। ফলে এ খাদ্য ক্ষুদ্রান্ত্রে গেলেও আন্ত্রিক প্রাচীরের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। বাইকার্বনেট আয়ন ক্ষরিত হয় বহিঃক্ষরা অগ্ন্যাশয়ের নালিপ্রাচীরের কোষ থেকে। অগ্ন্যাশয় রস এভাবে অম্ল-ক্ষারের সাম্য, পানিসাম্য, দেহতাপ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে।

অগ্ন্যাশয় থেকে নির্গত চিনির বিপাক নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন কোনটি

অগ্ন্যাশয় থেকে নির্গত চিনির বিপাক নিয়ন্ত্রণকারী গ্লুকাগন (Glucagon) হরমোন রক্তের গ্লুকোজ (চিনির) মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। গ্লুকাগন (Glucagon) আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় এবং এটিকে খুব কম হতে বাধা দেয়, যেখানে ইনসুলিন, অন্য হরমোন, রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে।

পরিপাকে স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের ভূমিকা (Role of Nervous System and Hormone is Digestion)

খাদ্য পরিপাক ও শ্বসন যে জটিল প্রক্রিয়া তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এসব প্রক্রিয়া শেষে উৎপন্ন হয় শক্তি। শক্তির সুষ্ঠু ব্যবহারই হচ্ছে সুস্থ জীবন অব্যাহত রাখার একমাত্র কৌশল। শক্তির সংরক্ষণ ও ব্যবহার প্রক্রিয়া যে কত সূক্ষ্মভাবে দেহে পরিচালিত হচ্ছে সে বিষয়টি পরিষ্কার জানতে হলে পরিপাকে স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের ভূমিকা সম্বন্ধে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

পরিপাকের জন্য বিভিন্ন এনজাইম ও অন্যান্য পদার্থের (যেমন-HCI) ক্ষরণ হয় শক্তির বিনিময়ে। শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার কখনও বৃথা যায় না। এ কারণে খাদ্যের অনুপস্থিতিতে শক্তি ও পদার্থ উৎপন্ন হয় না। বরং খাদ্য পরিপাকের উদ্দেশেই বিপুল পরিমাণ গ্যাস্ট্রিক জুস উৎপন্ন ও ক্ষরিত হয়। পরিপাকের প্রত্যেক ধাপের কর্মকান্ডে স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনতন্ত্র (অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র / এন্ডোক্রিনতন্ত্র) নিম্নোক্তভাবে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।

১। লালাক্ষরণঃ দুধরনের প্রতিবর্ত ক্রিয়া মুখগহ্বরে লালাক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রথমটি হচ্ছে অনপেক্ষ প্রতিবর্ত, দ্বিতীয়টি সাপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া

খাদ্য মুখগহ্বরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে অনপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া (unconditional reflex) শুরু হয়ে যায়। জিভের স্বাদ কুঁড়ির রিসেপ্টর খাদ্যের স্বাদে উদ্দীপ্ত হয়। এসব রিসেপ্টর থেকে সেন্সরি নিউরোন স্নায়ুউদ্দীপনা (nerve impluse) মস্তিষ্কে বহন করে। মস্তিষ্ক থেকে মোটর নিউরোনের সাহায্যে স্নায়ু উদ্দীপনা লালাগ্রন্থিতে এলে সেখান থেকে লালা ক্ষরিত হয়। যে প্রতিবর্ত ক্রিয়া মস্তিষ্ক হয়ে অতিক্রম করে তাকে করোটিক প্রতিবর্ত (cranial reflex) বলে।

দ্বিতীয় প্রতিবর্ত ক্রিয়া হচ্ছে সাপেক্ষ প্রতিবর্ত (conditional reflex)। খাবার দেখে, গন্ধ শুঁকে, চিন্তাভাবনা শেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এ প্রতিবর্তের অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি একান্তে বসে তেঁতুল যা চালতার আচার মুখে দেওয়ার কথা চিন্তা করে তাহলে হয়তো লালা ক্ষরণ শুরু হয়ে যাবে। এসব আচার খাওয়ার অভিজ্ঞতা যার আছে তার ক্ষেত্রে এমনটি ঘটবে।

অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষা গ্রহণকে সাপেক্ষ প্রতিবর্ত বলে। (আচরণ অধ্যায়ে বিজ্ঞানী Pavlov-এর এ সংক্রান্ত গবেষণার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।)

২। গ্যাস্ট্রিক জুস (রস) ক্ষরণ : গ্যাস্ট্রিক জুসের ক্ষরণ হয় ৩টি ধাপে, প্রথমটি স্নায়ুবিক, দ্বিতীয়টি গ্যাস্ট্রিক এবং তৃতীয়টি আন্ত্রিক ধাপ।

■ মুখগহ্বরে খাদ্যের উপস্থিতি ও গলাধকরণের সঙ্গে সঙ্গে স্নায়ুবিক প্রতিবর্ত (স্নায়ুউদ্দীপনা) শুরু হয়ে যায়। এ উদ্দীপনা মস্তিষ্ক থেকে ভ্যাগাস স্নায়ুর মাধ্যমে পাকস্থলিতে পৌছায়। খাদ্য দেখা, গন্ধ ও স্বাদ নেওয়া, এমনকি চিন্তা করলেও একই অবস্থা হবে। পাকস্থলির গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থিগুলো গ্যাস্ট্রিক জুস ক্ষরণে উদ্দীপ্ত হয়। এটি হচ্ছে প্রস্তুতি পর্ব। পাকস্থলিতে খাদ্য পৌঁছার আগেই এটি ঘটে এবং এভাবে পাকস্থলি খাদ্য গ্রহণে প্রস্তুত হয়। পাকস্থলির ক্ষরণে স্নায়ুবিক পর্যায় প্রায় এক ঘন্টা স্থায়ী হয়।

গ্যাস্ট্রিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয় পাকস্থলিতে। এখানে স্নায়ুবিক ও হরমোনাল উভয় তন্ত্রেরই ভূমিকা থাকে। খাদ্য ধারণে পাকস্থলি প্রসারিত হলে প্রসারণ গ্রাহক (stretch receptor) উদ্দীপ্ত হয় এবং পাকস্থলির সাবমিউকোসায় অবস্থিত মেইসনার-এর জালিকায় (Meissner’s plexus) স্নায়ুউদ্দীপনা প্রেরণ করে। সেখান থেকে স্নায়ু-উদ্দীপনা গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থিতে পৌছে জুস ক্ষরণে উদ্দীপ্ত করে। পাকস্থলির প্রসারতা এবং খাদ্যের উপস্থিতি মিউকোসায় অবস্থিত বিশেষএন্ডোক্রিন কোষকে গ্যাস্ট্রিন হরমোন ক্ষরণে উদ্দীপ্ত করে। গ্যাস্ট্রিন রক্ত-সংবহনের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থিতে এসে HCl – সমৃদ্ধ গ্যাস্ট্রিক জুস ক্ষরণে প্ররোচিত করে। গ্যাস্ট্রিক জুস ক্ষরণ প্রায় ৪ ঘন্টা স্থায়ী হয়।

■ তৃতীয় পর্বটি ক্ষুদ্রান্ত্রে সংঘটিত আন্ত্রিক পর্ব। এসিডধর্মী কাইম যখন প্রবেশ করে এবং ডিওডেনামের প্রাচীর স্পর্শ করে তখন স্নায়ুবিক ও হরমোনাল উভয় ধরনের সাড়া প্রদানকে উৎসাহিত করে। ক্ষুদ্রান্ত্র প্রাচীরের রিসেপ্টরগুলো খাদ্যের উপস্থিতিতে উদ্দীপ্ত হওয়ার খবর মস্তিষ্কে পৌঁছালে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার অংশ হিসেবে মস্তিষ্ক গ্যাস্ট্রিক জুসের ক্ষরণ কমিয়ে দেয় এবং পাকস্থলি থেকে কাইমের নির্গমন গতি মন্থর করে দেয়। এর ফলে একসঙ্গে বেশি খাদ্য অস্ত্রে প্রবেশ করতে পারে না। শুধু তাই নয়, ডিওডেনামের মিউকোসা দুধরনের হরমোন ক্ষরণ করে, কোলেসিস্টোকাইনিন (Cholecystokinin,CCK) এবং সিক্রেটিন(Secretin)। CCK আবার প্যাংক্রিওজাইমিন Pancreozymin) নামেও পরিচিত। উভয় হরমোনই রক্তে সংবহিত হয়ে পাকস্থলি, অগ্ন্যাশয় ও যকৃতে পৌঁছায়। সিক্রেটিন পাকস্থলিতে গ্যাস্ট্রিক জুস ক্ষরণে বাধা দেয়,আর CCK পাইলোরিক স্ফিংক্টারের পেশিকে সংকুচিত করে পাকস্থলি শূন্য হতে বাধা দেয়।



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

nine + 19 =