রচনা আমাদের গ্রাম তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি
সূচনা : আমাদের গ্রামের নাম তারাটি। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলা শহর থেকে মাত্র ১ কি. মি. উত্তর দিকে আমাদের গ্রামটি অবস্থিত। প্রতিটি মানুষের কাছে তার জন্মভূমি খুবই প্রিয়। তাই কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর নিজ মাতৃভূমির কথা বলতে গিয়ে কবির গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত নদীর পানিকে মায়ের দুধের সাথে তুলনা করেছেন। আমার কাছেও আমার গ্রাম পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ও মনোরম।
বর্ণনা : আমাদের গ্রামখানি ছবির মতো। নানা জাতের গাছে গ্রামখানা ছায়া-সুনিবিড়। গ্রামের পাশে একটি বিরাট বিল আছে। এ বিলের নাম দারিয়াচিতল বিল। তাছাড়া দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ গ্রামটিকে করেছে আরও সুন্দর।
আয়তন ও লোকসংখ্যা : আমাদের গ্রামের আয়তন প্রায় ৫ বর্গমাইল। লোকসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজারের মতো। এত বড় গ্রাম খুব কমই দেখা যায়। ছোটবড় দশটি পাড়া নিয়ে এ গ্রাম। এ গ্রামের কৃষি জমির পরিমাণ বেশি। তাই গ্রামবাসীদের অধিকাংশই কৃষক। তাছাড়া আমাদের গ্রামে কামার, কুমোর, জেলে, তাঁতি, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে। প্রতিষ্ঠান : আমাদের গ্রামে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি দাখিল মাদরাসা, দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়া আমাদের গ্রামে একটি পোস্ট অফিস, একটি পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক এবং অন্যান্য সেবামূলক সংগঠন ও হাট রয়েছে। উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগও উত্তম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য : আমাদের গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই সুন্দর। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরা আমাদের গ্রামখানি। আমাদের গ্রামের যেদিকে চোখ যায় আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল, সুপারি, তালগাছ এবং আরও নানা রকমের গাছে ছায়া সুনিবিড় হয়ে থাকে।
উপসংহার : শিক্ষাদীক্ষায়, সম্পদে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বাংলাদেশের সেরা গ্রামসমূহের একটি গ্রাম আমাদের তারাটি গ্রাম। এ গ্রামে জন্মগ্রহণ করে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি।
রচনা আমাদের গ্রাম ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি
ভূমিকা : আমাদের গ্রামের নাম রাজারকুল। কক্সবাজার জেলার রামু থানার অন্তর্গত এই গ্রাম। এটি জেলা সদর থেকে পনেরোকিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে ও থানা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বাঁকখালী নদী।
আয়তন ও লোকসংখ্যা : এ গ্রামের আয়তন প্রায় ১৮ বর্গকিলোমিটার। এখানে প্রায় ষোল হাজার লোক বাস করে। অধিবাসীদের মধ্যে প্রায় শতকরা নব্বই ভাগ লোক মুসলমান। অবশিষ্ট দশ ভাগ হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোক। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক এখানে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে।
অধিবাসীদের পেশা : গ্রামটিতে কৃষি জমির পরিমাণ বেশি। এ কারণে গ্রামের অধিকাংশ লোক কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানে বহু ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীও আছেন। এছাড়া আছেন শিক্ষক, ডাক্তার ও আইনজীবী। কৃষক ব্যতিরেকে দরিদ্রের মধ্যে বহু শ্রেণির শ্রমিকও আছে। বিত্তের দিক থেকে এ গ্রামে তিন শ্রেণির লোক আছে : উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র। উচ্চবিত্ত লোকেরা সাধারণত বহু জমি-জমার মালিক অথবা বড় ব্যবসায়ী কিংবা উচ্চ-চাকরিজীবী। এদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। শিক্ষক, ডাক্তার, ছোট ব্যবসায়ী ও ছোট চাকরিজীবীদেরকে মধ্যবিত্ত পর্যায়ে ধরা যায়। দরিদ্র লোকেরা সাধারণত কৃষি বা কুটির শিল্পে নিয়োজিত; অন্যরা শ্রমিক ও দিনমজুরের কাজ করে থাকে। এ গ্রামে উচ্চবিত্তদের কয়েকটি পাকা বাড়ি আছে। মধ্যবিত্তদের ঘর- বাড়ি সাধারণত বাঁশ, কাঠ ও টিনের তৈরি। দরিদ্ররা বাঁশ ও খড়ের তৈরি ঘরে বাস করে। উৎপন্ন দ্রব্য ও হাটবাজার : আমাদের গ্রামের প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য ধান। তাছাড়া পাট, ইক্ষু, নারিকেল, সুপারি ও রবিশস্য প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। বিভিন্ন ঋতুতে আম, কাঁঠাল, তরমুজ, লেবু ইত্যাদিও জন্মে। বিভিন্ন বাড়িতে পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। অনেকেই হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন করে থাকে। এসব উৎপাদিত সামগ্রী থেকে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত অংশ বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে থাকে অনেকেই। গ্রামটির দু’প্রান্তে দুটি বাজার আছে। প্রত্যেকটিতে সপ্তাহে দুবার করে হাট বসে। বাজারদুটি গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ আমদানি-রপ্তানি ও সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষার অবস্থা : আমাদের গ্রামে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি সিনিয়র মাদ্রাসা, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কিভারগার্টেন স্কুল আছে। তাছাড়া থানা সদরে একটি ডিগ্রি কলেজ আছে। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। এ গ্রামের শিক্ষার হার প্রশংসনীয়।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান : আমাদের গ্রামে একটি ডাকঘর, একটি দাতব্য চিকিৎসালয়, একটি টেলিগ্রাফ অফিস, একটি কৃষি অফিস ও একটি ব্যাংক আছে। এখানে আটটি মসজিদ ও দুটি ঈদগাহ্ আছে। তাছাড়া হিন্দুদের একটি মন্দির ও বৌদ্ধদের একটি প্রাচীন প্যাগোড়া রয়েছে। এখানে প্রতিটি সম্প্রদায় অত্যন্ত নির্বিঘ্নে নিজেদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। আমাদের গ্রামটি একটি আদর্শ গ্রাম বলে আমরা মনে করি। কেননা এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধরা পারস্পরিক সম্প্রীতির সঙ্গে বহুকাল থেকে শান্তিতে বসবাস করে আসছে।
যোগাযোগব্যবস্থা : গ্রামের মধ্যে চলাচলের কয়েকটি রাস্তা আছে। গ্রামের পাশের নদীর ওপর একটি সেতু আছে। ওই সেতু এমটিকে থানা সদরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। একটি আধাপাকা সড়ক দিয়ে রিকশা, অটোরিকশা, টেম্পু ও মাইক্রোবাস গ্রামটি থেকে থানা সদর পর্যন্ত চলাচল করে। থানা সদরের ওপর দিয়ে জেলা সদর পর্যন্ত যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত ভালো। তাছাড়া গ্রামের পাশের নদী দিয়ে নৌকা ও সাম্পানযোগে পণ্য আনা-নেওয়ার সুবিধা আছে। আমাদের গ্রামে বৈদ্যুতিক সংযোগ আছে। ফলে কৃষিকাজে পাম্পের সাহায্যে পানি সেচের ব্যবস্থা আছে এবং বাড়ি-ঘরে রেডিও, টেলিভিশন ও কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ আছে।
উপসংহার : আমাদের গ্রাম একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সমৃদ্ধ গ্রাম। গ্রামবাসীদের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও ভ্রাতৃভাব বিদ্যমান। তারা উৎসবে-পার্বণে, বিপদে-আপদে একে অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এমন একটি গ্রামে জন্মেছি বলে আমি সত্যি গর্ব অনুভব করি।
আমাদের গ্রাম সম্পর্কে ১০টি বাক্য
- আমাদের গ্রামের নাম রাজারকুল।
- এ গ্রামের আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার।
- এখানে প্রায় ষোল হাজার লোক বাস করে।
- এ গ্রামের মধ্যে চলাচলের কয়েকটি রাস্তা আছে।
- এ গ্রামে কৃষি জমির পরিমাণ বেশি।
- এ গ্রামের অধিকাংশ লোক কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
- এছাড়াও এখানে বহু ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীও আছেন।
- এ গ্রামে একটি ডাকঘর, একটি চিকিৎসালয়, একটি কৃষি অফিস ও একটি ব্যাংক আছে।
- এ গ্রামের প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য ধান। তাছাড়া পাট, ইক্ষু ও রবিশস্য প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়।
- এমন একটি গ্রামে জন্মেছি বলে আমি সত্যি গর্ব অনুভব করি।