ইন্টারনেট রচনা || ইন্টারনেট অনুচ্ছেদ

রচনা

ভূমিকা : আজকের যুগ বিজ্ঞানের প্রম সাফল্যের যুগ। বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদান হলো কমপিউটার। মানবসভ্যতার কোনো এক শুভক্ষণে বিজ্ঞানের যে যাত্রা সূচিত হয়েছিল, তা আজ চরম সার্থকতায় এসে উপনীত হয়েছে। এ সার্থকতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন কমপিউটার। কমপিউটারের ব্যবহার এখন এত বিচিত্র ও ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে যে তা কিছুদিন আগেও কল্পনাতীত ছিল। বিজ্ঞান আজ পর্যন্ত মানবসভ্যতাকে যা দিয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনব ও অবিশ্বাস্য অবদান হলো। ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের বদৌলতে মানুষের জীবনের ধারাই পাল্টে গেছে। জীবনের চলার পথ সহজতর হয়েছে। কমপিউটারকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন আবিষ্কার ও তার প্রয়োগ শ্রম বিস্ময়ের ব্যাপার রূপে প্রতিভাত হচ্ছে। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইন্টারনেট এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে।
ইন্টারনেটের সংজ্ঞা : ইন্টারনেট একাধিক বিষয়ের একটি জটিল সমন্বিত রূপ। এর বাহাত কোনো সীমাবদ্ধতা নেই, এর দ্বারা অনেক কিছুই করা যায়। অনেকগুলো নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্ববিস্তৃত বৃহৎ কমপিউটার নেটওয়ার্কই ইন্টারনেট। সংক্ষেপে বলা যায়, নেটওয়ার্কভুক্ত কমপিউটারগুলোকে অন্যান্য নেটওয়ার্কভুক্ত কমপিউটারের সঙ্গে সংযুক্তির মাধ্যমে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাই ইন্টারনেটের লক্ষ্য।
ইন্টারনেটের আদি-কথা : ১৯৬১ সালে বিশ্বের দুই প্রাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের কারণে দুই দেশের সমর বিশেষজ্ঞরা পরস্পরকে ভয় করছিল। হাইড্রোজেন বোমার আক্রমণ হলে সম্পূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে যাবে বলে তাদের মধ্যে আশঙ্কা ছিল। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর স্টোগনে তখন কমপিউটার ব্যবহৃত হচ্ছিল। বিশেষজ্ঞরা টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে কমপিউটার থেকে কমপিউটারে তথ্য আদান-প্রদানের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন। পারমাণবিক আক্রমণ প্রতিহত ও বৈজ্ঞানিক তথ্যসহ অন্যান্য তথ্যাদি বিনিময়ের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ কর্তৃক ১৯৬৯ সালে
উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তিই ইন্টারনেট। প্রথম দিকে এর নাম ছিল ‘মিলনেট”। সামরিক প্রয়োজনে উদ্ভাবিত হলেও পরবর্তীকালে ইন্টারনেট প্রযুক্তি বেসামরিক পর্যায়েও গৃহীত হয়।

ইন্টারনেট রচনা


ইন্টারনেটের বিকাশ : সত্তর ও আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। গবেষণাগারে কমপিউটার থেকে কমপিউটারের তারের যোগাযোগ ঘটিয়ে এই নেটওয়ার্ককে বড় করে তোলা হয়। আরো পরে টেলিফোনের এক্সচেঞ্জকে উন্নত করে কমপিউটার চালিত ইলেকট্রনিক সুইচের ব্যবহার সূচিত হয়। আগে যেখানে টেলিফোন নেটওয়ার্কের জন্যে তামার তার ব্যবহার হতো, সেখানে মাইক্রোওয়েতের সঙ্গে অপটিক্যাল ফাইভার ব্যবহৃত হতে লাগল। এভাবে প্রবর্তীকালে টেলিনেটওয়ার্ক আসে। সীমিত অঞ্চলের মধ্যে ব্যবহৃত হলে তাকে ‘লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক’ বা “ল্যান” (Lan) এবং বৃহত্তর পরিমণ্ডলে ব্যবহৃত হলে তাকে ‘ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক’ বা ‘ওয়ান’ (Wan) বলে। অপটিক্যাল ফাইভারের মাধ্যমে ল্যানের সংযোগ হয় এবং মাইক্রোওয়েভ ব্যবহৃত হয় ‘ওয়ানে’র জন্যে। বর্তমানে ইন্টারনেটের দ্রুত প্রসার ঘটছে। কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে আন্তদেশীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯৮৪ সালে ‘ডাইরেক্ট ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট চালু হয়। এখন ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের সঙ্গে ডিজিটাল টিভি, মাইক্রোচিপ্‌স কমপিউটার লিংকন সমন্বয়ে ‘কন্ফাভিশন’ তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে আজকাল বিভিন্ন দেশের জ্ঞানী-গুণী- পেশাজীবীরা পরস্পর সরাসরি আলোচনা করতে পারেন। সত্তর দশকের দিকে ই-মেইল শুরু হয়। ‘ল্যান’ প্রযুক্তির মাধ্যমে কমপিউটার থেকে কমপিউটারে চিঠিপত্র আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াই ই-মেইল। পরবর্তীকালে অপটিক্যাল ফাইবার ও স্যাটেলাইট টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার বিস্তৃতি ঘটল। ইন্টারনেটের সাহায্যে দু’প্রান্তে দুটি সবল কমপিউটারের মাধ্যমে চিঠিপত্র আদান-প্রদানের প্রযুক্তি বিস্তার লাভ করল।

ইন্টারনেটে প্রবেশের জন্যে প্রয়োজনীয় উপকরণ : চারটি জিনিসের প্রয়োজন হয় ইন্টারনেটে প্রবেশের জন্যে। যথা- (ক) কমপিউটার, (খ) মডেম, (গ) টেলিফোন লাইন এবং (ঘ) ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার। এগুলোর কাজ নিম্নরূপ
(ক) কমপিউটার : বিভিন্ন তথ্য টাইপ করতে কমপিউটার সাহায্য করে এবং তথ্যগুলো নিজের মেমোরিতে রাখে। এরপর প্রাপকের কাছে তথ্য পাঠানোর প্রাথমিক কাজগুলো নেটওয়ার্কিং সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন করে।
(খ) মডেম : এই মডেম সাধারণ টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য পাঠানোর উপযোগী করার উদ্দেশ্যে এক
কমপিউটার থেকে অন্য কমপিউটারে সংশ্লিষ্ট তথ্য ডিজিটাল থেকে এনালগে এবং এনালগ থেকে ডিজিটালে পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
(গ) টেলিফোন লাইন : তথ্যাদি দ্রুত স্থানান্তর করতে টেলিফোন লাইন ব্যবহৃত হয়।
(ঘ) ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার : এর কাজ অনেকটা পোস্ট অফিসের ন্যায়। এটি নির্দিষ্ট চার্জের বিনিময়ে এর
মক্কেলদেরকে নিজস্ব শক্তিশালী কমপিউটার ফাইবার অপটিক্স বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে অন্যান্য ইন্টারনেট সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়।
ইন্টারনেটের উপকারিতা : বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেটের উপকারিতা বহুমুখী। আজকাল ইন্টারনেট যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, খেলাধুলা, বিনোদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তথ্যাদি আদান-প্রদানের মাধ্যমে ইন্টারনেট এক যুগান্তকারী অবদান সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশও ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে নেই। ১৯৯৬ সালের দিকে বাংলাদেশ প্রথম ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। টিঅ্যান্ডটি বোর্ড, আই.এস.এন., রয়টারসহ মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে ভিস্যাট স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা হয়।
উপসংহার : ইন্টারনেট প্রযুক্তি আধুনিক জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত গতিশীল ও প্রাগ্রসর করে তুলেছে। এই প্রযুক্তি যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত করেছে। ইন্টারনেট বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অবদান। এটি বিশ্বের এক প্রান্তের মানুষের সঙ্গে অন্য প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ অকল্পনীয়রূপে সহজ করে দিয়েছে। ইন্টারনেটের বদৌলতে বিশাল বিশ্ব একটি পরিবারের রূপ পরিগ্রহ করেছে। তৃতীয় বিশ্বে ইন্টারনেটের ব্যবহার অতি সম্প্রসারিত না হলেও অদূর ভবিষ্যতে সারাবিশ্বে এর ব্যাপক প্রসার ঘটার সম্ভাবনা লক্ষ করা যাচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে আমাদের বাংলাদেশও ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলাতে পারবে বলে আশা করা যায়।



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

5 × 2 =