কারক ও বিভক্তি
‘পদ ও পদের শ্রেণিবিভাগ’ পরিচ্ছেদে আমরা আগেই দেখেছি, বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেকটি অংশের নামপদ এবং পদমাত্রই বিভক্তিযুক্ত শব্দ বা ধাতু। বিভক্তি হলো কতকগুলো বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যেগুলো শব্দ ও ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পদ তৈরি করে।
পদপ্রধানত দু’প্রকার : নাম পদ ও ক্রিয়াপদ।
বিভক্তি দু’প্রকার : শব্দবিভক্তি ও ক্রিয়াবিভক্তি।
শব্দের সঙ্গে যে বিভক্তি যুক্ত হয়ে নামপদ তৈরি করে তাকে শব্দবিভক্তি বা নামবিভক্তি এবং ধাতুর সঙ্গে যে বিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ তৈরি করে তাকে ক্রিয়াবিভক্তি বলে।
শব্দবিভক্তি বাক্যের অন্তর্গত নামপদের কারক নির্দেশ করে এবং ক্রিয়াবিভক্তি ক্রিয়ার কাল ও পুরুষ নির্দেশ করে।
[ দ্রষ্টব্য : ক্রিয়াবিভক্তি সম্পর্কে পরে ‘ক্রিয়াবিভক্তি ও ক্রিয়ারূপ’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে আলোচনা করা হবে।]
কারক
বাক্যের অন্তর্গত পদগুলোর মধ্যে ক্রিয়াপদই প্রধান। এ ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য নামপদের অন্বয় বা সম্পর্ক থাকে।
যেমন—‘জেলেটি নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরছে’-এ বাক্যে ‘ধরছে’ ক্রিয়াপদ।
কে ধরছে?—জেলেটি;
কী ধরছে?—মাছ;
কী দিয়ে ধরছে?—জাল দিয়ে;
কোথায় ধরছে?—নদীতে।
দেখা যায়, ‘ধরছে’ ক্রিয়ার সঙ্গে নামপদগুলোর প্রত্যেকটির এক এক ধরনের সম্পর্ক আছে। এ সম্পর্ক বা সম্বন্ধই কারক।
সুতরাং, বাক্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের যে সম্বন্ধ, তাকে কারক বলে।
তে, এ, রে, কে, দিয়ে, থেকে ইত্যাদি কিছু শব্দাংশ বা শব্দ এক একটি নামপদের পরে যুক্ত হয়ে ক্রিয়ার সঙ্গে ঐ নামপদের সম্পর্ক বা কারক নির্দেশ করে। এ শব্দাংশ বা শব্দাংশগুলো শব্দবিভক্তি বা নামবিভক্তি বা কারক-বিভক্তি।
সুতরাং, যে শব্দাংশ বা শব্দ বাক্যের অন্তর্গত নামপদের কারক নির্দেশ করে, তাকে শব্দবিভক্তি বা কারক-বিভক্তি বলে।
কারক ও বিভক্তি কাকে বলে বা কারক ও বিভক্তির পার্থক্য
শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নামপদ তৈরি করে বলে এদের নাম শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি; আবার নামপদের কারক নির্দেশ করে বলে এদের অন্য নাম কারক-বিভক্তি। যথা- ০ (শূন্য) বা অ, কে, রে, এ, তে, দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হইতে, দিয়ে, থেকে ইত্যাদি।
বাক্যের অন্তর্গত কোনো পদই বিভক্তিহীন নয়; কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাক্যের অন্তর্গত কোনো কোনো পদে বিভক্তির চিহ্ন দেখা যায় না। এরূপ ক্ষেত্রে ঐ পদটিতে ‘শূন্য’ বা ‘অ’ বিভক্তি যুক্ত আছে বলে ধরতে হয়।
কারক ও বিভক্তি মনে রাখার কৌশল
বিভক্তি | একবচন | বহুবচন |
প্রথমা | o (অ), এ (য়, য়ে), তে (এতে) | রা (এরা) |
দ্বিতীয়া | কে, রে (এরে), এ (য়, য়ে) | দিগকে (দেরকে), দিগেরে (দেরে), দিগে |
তৃতীয়া | এ (য়, য়ে), তে (এতে), দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক | দিগ দ্বারা, দিগের দ্বারা (দের দ্বারা), দিগ দিয়া (দের দিয়ে), দিগ কর্তৃক |
চতুৰ্থী | চতুৰ্থী কে, রে (এরে), এ (য়, য়ে) | দিগকে (দেরকে), দিগেরে (দেরে), দিগে |
পঞ্চমী | হইতে, থেকে | দিগ হইতে, দিগ থেকে (দের থেকে, দের হ’তে) |
ষষ্ঠী | র (এর> য়ের) | দিগের, দের |
সপ্তমী | এ (য়, য়ে), তে (এতে) | দিগেতে, দিগে |
বিভক্তিগুলোকে এ-বিভক্তি, তে-বিভক্তি, কে-বিভক্তি ইত্যাদিও বলা হয়।
কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ কৌশল
বাংলায় বিভক্তির কোনো বচন নেই; অর্থাৎ বিভক্তির একটিই রূপ— একবচন ও বহুবচনে বিভক্তির পৃথক কোনো রূপ নেই।বহুবচনের বিভক্তি বলে ব্যবহৃত শব্দ বা শব্দাংশ প্রকৃতপক্ষে বহুবচনবোধ চিহ্ন বা প্রত্যয় ও বিভক্তির সমষ্টিমাত্র।
একবচন | বহুবচন |
o | রা+০=রা |
o | এরা+০=এরা |
এ | দিগ+এ=দিগে |
কে | দিগ+কে=দিগকে |
এর | দিগ+এর=দিগের |
এতে | দিগ+এতে=দিগেতে |
দ্বারা | দিগ+দ্বারা=দিগ দ্বারা |
এখানে রা, এরা, দিগ— এগুলো বহুবচনবোধক প্রত্যয় এবং ০, এ, কে, এর, এতে, দ্বারা— এগুলো বিভক্তি। দেখা যায়, উভয় ক্ষেত্রে বিভক্তির রূপ একই। সুতরাং, বাংলায় বহুবচনে ও একবচনে একই বিভক্তি ব্যবহৃত হয়। ড. মুহম্মদ এনামুল হক, মুনীর চৌধুরী প্রমুখ ভাষাবিজ্ঞানীরাও অনুরূপ মত পোষণ করেন।
শব্দবিভক্তির তালিকায় দেখা যায়, এতে কিছু শব্দাংশ (এ, কে, রে, তে ইত্যাদি) এবং কিছু শব্দ (‘দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হইতে’ ইত্যাদি) রয়েছে।
(ক) মূল বিভক্তি
মূল বিভক্তি বলতে এমন কিছু শব্দাংশকে (বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে) বোঝায়, যেগুলো পদের অংশরূপে যুক্ত হয়ে পদটির কারক নির্দেশ করে। ভাষায় এদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বা ব্যবহার নেই, কিংবা পদের অংশরূপে যুক্ত না হয়ে পৃথকভাবে থাকলে এদের কোনো অর্থও হয় না। এ মূল বিভক্তিগুলোই যথার্থ বা প্রকৃত বিভক্তি। বাংলায় এরূপ মূল বিভক্তি আছে ছয়টি: ০ (শূন্য) বা অ, এ, তে, কে, রে, র।
(খ) বিভক্তিস্থানীয় শব্দ
দ্বারা, দিয়া, হইতে, থেকে ইত্যাদি কিছু শব্দ বিভক্তির কাজ চালায়, অর্থাৎ এসব শব্দ নামপদের পরে যুক্ত হয়ে নামপদের কারক নির্দেশ করে। ভাষায় এদের পৃথক অবস্থান দেখা যায়। এদের স্বতন্ত্র অর্থ আছে এবং বাক্যে স্বাধীন পদরূপে এগুলো ব্যবহৃত হতে পারে। এরা মূল বিভক্তি নয়, বরং বিভক্তিস্থানীয় অব্যয় শব্দ। ভাষায় শব্দবিভক্তিরূপে ব্যবহৃত এ অব্যয় শব্দগুলোর নাম অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয়।
কারকের প্রকারভেদ
ক্রিয়ার সঙ্গে নামপদের সম্বন্ধই কারক। বাংলা বাক্যে ক্রিয়ার সঙ্গে অন্যান্য নামপদের ছয় রকমের সম্বন্ধ বা সম্পর্ক দেখা যায়।
যেমন—“ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ দরবারে থলি থেকে হাত দিয়ে দরিদ্রদের টাকা দিতেন।” —এ বাক্যে ‘দিতেন’ ক্রিয়াপদ।
ক্রিয়াপদটিকে নানাভাবে প্রশ্ন করে এর সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন নামপদের ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্ক নির্ণয় করা যায় :
(১) কে দিতেন?—সলিমুল্লাহ;
(২) কী দিতেন?—টাকা;
(৩) কী দিয়ে দিতেন?—হাত দিয়ে;
(৪) কাকে দিতেন?—দরিদ্রদের;
(৫) কোথা থেকে দিতেন?—থলি থেকে;
(৬) কোথায় দিতেন?-দরবারে;
বাংলা বাক্যে ক্রিয়ার সঙ্গে নামপদের সম্বন্ধ ছয়টির বেশি হতে পারে না।
কাজেই বাংলায় কারক ছয় প্রকার এবং ‘ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ দরবারে থলি থেকে হাত দিয়ে দরিদ্রদের টাকা দিতেন।’ —এ বাক্যে ছয়টি কারকই আছে :
(১) কর্তৃকারক—ক্রিয়াকে ‘কে’ প্রশ্ন করে উত্তর পেলে, তা কর্তৃকারক। যেমন— ‘সলিমুল্লাহ’।
(২) কর্মকারক—ক্রিয়াকে ‘কী’ বা ‘কাকে’ প্রশ্ন করে উত্তর পেলে, তা কর্মকারক। যেমন—‘টাকা”।
(৩) করণকারক—ক্রিয়াকে ‘কী দিয়ে’ বা ‘কীসের সাহায্যে’ প্রশ্ন করে উত্তর পেলে, তা করণকারক। যেমন—‘হাত দিয়ে’।
(৪) সম্প্রদান কারক—ক্রিয়াকে ‘কাকে’ বা ‘কার জন্য’ প্রশ্ন করে উত্তর পেলে, তা সম্প্রদান কারক। যেমন—‘দরিদ্রদের’।
(৫) অপাদান কারক—ক্রিয়াকে ‘কোথা থেকে’ প্রশ্ন করে উত্তর পেলে, তা অপাদান কারক। যেমন—‘থলি থেকে’
(৬) অধিকরণ কারক—ক্রিয়াকে ‘কোথায়’ বা ‘কখন’ প্রশ্ন করে উত্তর পেলে, তা অধিকরণ কারক। যেমন—‘দরবারে’।
কর্তৃকারক
বাক্যের অন্তর্গত যে বিশেষ্য বা সর্বনামপদ ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে কর্তা বা কর্তৃকারক বলে।
কর্তৃকারকে, সাধারণত কোনো বিভক্তির চিহ্ন যুক্ত থাকে না। তাই এর বিভক্তিকে শূন্য বা অ-বিভক্তি বলে।
যেমন— জামিলা গান করিতেছে।
শামীম বই পড়িতেছে।
আহসান মাঠে খেলতে যাচ্ছে।
আমরা আগেই বলেছি, বাংলায় নির্দিষ্ট কারকে কোনো নির্দিষ্ট বিভক্তি নেই। কর্তৃকারকেও তাই প্রথমা বিভক্তি ছাড়া অন্যান্য বিভক্তির ব্যবহার দেখা যায় ৷
কর্তৃকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
প্রথমা বিভক্তি :
শূন্য —জল পড়ে, পাতা নড়ে।
—পাখিসব করে রব রাতি পোহাইল।
দ্বিতীয়া বিভক্তি :
কে—আমাকে যেতে হবে।
চতুৰ্থী বিভক্তি :
কে—আমাকে ভিক্ষা লওয়া মানাবে না।
পঞ্চমী বিভক্তি :
হইতে > হতে—আমা হতে হেন কাজ হবে না সাধন।
ষষ্ঠী বিভক্তি :
র—আমার খাওয়া হবে না।
–তার ঢাকা যাওয়া উচিত।
এর-করিমের পড়া শেষ হয় নি।
সপ্তমী বিভক্তি :
এ–পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়।
–লোকে বলে।
এ>য়ে—গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল।
–মায়ে-ঝিয়ে ঝগড়া করছে।
কর্তৃকারকের প্রকারভেদ
বাক্যে ক্রিয়া সম্পন্ন করার বৈশিষ্ট্য অনুসারে কর্তৃকারক চার রকমের হয় :
(১) মুখ্য কর্তা : যে নিজেই ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তাকে মুখ্য কর্তা বলে। যেমন—
সেলিমা বই পড়ছে।
তিনি অফিসে যাচ্ছেন।
(২) প্ৰযোজক কর্তা : মুখ্য কর্তা যখন কোনো কাজ নিজে না করে অন্যকে দিয়ে করায়, তখন তাকে প্রযোজক কর্তা বলে যেমন-
মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
ডাক্তার রোগীকে বিছানায় শোয়ালেন।
(৩) প্রযোজ্য কর্তা : প্রযোজক কর্তা নিজে না করে যাকে দিয়ে কাজটি করায়, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। উপরের উদাহরণগুলোতে ‘মা’ ও ‘ডাক্তার’ প্রযোজক কর্তা এবং ‘শিশুকে’ ও ‘রোগীকে’ প্রযোজ্য কর্তা প্রযোজক কর্তায় শূন্য বিভক্তি ও প্রযোজ্য কর্তায় সাধারণত কে বিভক্তি ব্যবহৃত হয়।
(৪) ব্যতিহার কর্তা : বাক্যে যদি দুটো কর্তা পরস্পর কোনো এক জাতীয় ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তবে তাদেরকে ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন—
পণ্ডিতে পণ্ডিতে তর্ক করছেন।
রাজায় রাজায় লড়াই করছে।
(খ) উদ্দেশ্য কর্ম ও বিধেয় কর্ম : কোনো ক্রিয়ার দুটো পরস্পর অপেক্ষিত কর্ম থাকলে প্রধান কর্মটিকে বলা হয় উদ্দেশ্য কর্ম এবং তার অপেক্ষিত কর্মটিকে বলা হয় বিধেয় কর্ম।
যেমন—মিথ্যাবাদীরা দিনকে রাত, রাতকে দিন করতে পারে। জাদুকর একটি আলুকে ডিম বানাল।
—বাক্যগুলোতে ‘দিনকে’, ‘রাতকে’, ‘আলুকে’, উদ্দেশ্য কর্ম এবং ‘রাত’, ‘দিন’, ‘ডিম’ বিধেয় কর্ম। উদ্দেশ্য কর্মে দ্বিতীয়া বিভক্তি এবং বিধেয় কর্মে শূন্য বিভক্তি হয়।
(গ) সমধাতুজ কর্ম : ক্রিয়ার একই ধাতু থেকে তৈরি কর্মকে সমধাতুজ কর্ম বলে। সমধাতুজ কর্মে শূন্য বিভক্তি হয়। যেমন—
কি মারটাই না মারলে।
আমি কি এক ঘুম্ ঘুমালাম।
কর্মকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
দ্বিতীয়া বিভক্তি :
কে— সেলিমকে মেৱো না। পাপীকে ধিক্
ডাক্তারকে ফি দাও। ধোপাকে কাপড় দাও।
রে—‘আমারে তুমি করিবে ত্রাণ, এ নহে মোর প্রার্থনা’।
মিথ্যারে করো না উপাসনা।
‘আমারে করহ তোমার বীণা।
সপ্তমী বিভক্তি:
এ- ‘বিহগে ললিত গীত শিখায়েছ ভালোবাসি।’
বৃথা গঞ্জ দশাননে।
জিজ্ঞাসিব জনে জনে।
ইয়-তোমায় দেখলেও পাপ।
করণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার :
প্রথমা বিভক্তি :
০ (শূন্য)–ছেলেরা মাঠে বল খেলছে।
‘তাস খেলে পড়া নষ্ট কত ছেলে করে।’
দ্বিতীয়া বিভক্তি :
কে- পুরাতন তাসকে খেলা যায় না।
পঞ্চমী বিভক্তি ;
হইতে— এই সন্তান হইতে সুখের আশা কম।
থেকে— ছোট কারবার থেকে জীবিকা চলে না।
সপ্তমী বিভক্তি :
এ – পাইলটে ভাল লেখা যায়।
শিকারী বিড়াল গোঁফে চেনা যায়।
য় – টাকায় কিনা হয়।
তে – আমরা নৌকাতে নদী পার হলাম।
সম্প্রদান কারক
সম্প্রদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার :
ষষ্ঠী বিভক্তি :
র – টাকার লোভ মানুষকে ধ্বংস করে।
সপ্তমী বিভক্তি :
এ – না মরে পাষাণ বাপ দিলা হেন বরে।
“অন্ধজনে দেহ আলো, মৃতজনে দেহ প্রাণ।’
য় -‘তোমায় কেন দিই নি আমার সকল শূন্য করে।
তে – আমাদের সমিতিতে তিনি টাকা দিয়েছেন।
অপাদান কারক
যা থেকে কোনো কিছু চলিত, ভীত, গৃহীত, বিচ্যুত, উৎপন্ন, রক্ষিত ইত্যাদি হয়, তাকে অপাদান কারক বলে।
অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি হয়। যেমন—
চলিত–ধর্ম থেকে বিচলিত হয়ো না।
ভীত—সে পাগলা কুকুর হতে ভয় পেয়েছে।
গৃহীত—সাগর থেকে মুক্তা পাওয়া যায়।
বিচ্যুত—গাছ থেকে পাতা পড়ে।
উৎপন্ন—দুধ থেকে ঘি হয়।
রক্ষিত—বিপদ হতে রক্ষা কর।
অপাদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার :
প্রথমা বিভক্তি :
শূন্য— গ্রীন এ্যারো কখন ঢাকা ছাড়ে?বাড়ি ঘুরে এস।
পঞ্চমী বিভক্তি :
হইতে (থেকে)—আসন থেকে উঠবেন না।
থেকে— আমার বাড়ি থেকে আজানের ধ্বনি শোনা যায়।
চেয়ে– কাকলির চেয়ে সবিতা বয়সে ছোট।
ষষ্ঠী বিভক্তি :
র- পাপী ব্যক্তি পশুরও অধম।
এর— যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।
সপ্তমী বিভক্তি :
এ–‘আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে?’
পাপে বিরত হও।
য়- সে তোমায় ভয় পায়।
তে- হাসিতে তার মুক্তো ঝরে।
অধিকরণ কারক
প্রথমা বিভক্তি :
শূন্য— রবিবার স্কুল বন্ধ থাকে।
এ বছর আকাল যাচ্ছে।
তৃতীয়া বিভক্তি :
দিয়া— মধু দিয়ে (মধুতে মিশিয়ে) এই ঔষধটুকু খেও।
পঞ্চমী বিভক্তি :
হইতে (থেকে)— বাড়ি থেকে স্কুল দেখা যায়।
থেকে— ছেলেরা ছাদ থেকে ঘুড়ি ওড়ায়।
সপ্তমী বিভক্তি :
এ— ‘কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল।’
য়— ছায়ায় বস। ঢাকায় ট্রাম গাড়ি নেই।
বিভিন্ন কারকে ‘এ’ বিভক্তির ব্যবহার :
কর্তৃকারকে— পাগলে কি না বলে।
কর্মকারকে— বৃথা গঞ্জ দশাননে।
করণে— পাইলটে ভাল লেখা হয়।
সম্প্রদানে— অন্ধজনে দেহ আলো।
অপাদানে— আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে?
অধিকরণে— এ কলমে বেশি কালি ধরে না।
সম্বন্ধ পদ
বাক্যে যে নামপদের অন্য কোনো নামপদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, তাকে সম্বন্ধ পদ বলে।
বাক্যে ক্রিয়ার সঙ্গে সম্বন্ধ পদের কোনো সম্পর্ক থাকে না। যেমন— ‘ঢাকার নবাব দরিদ্রদিগকে টাকা দিতেন। ‘- এ বাক্যে ‘নবাব’ পদটির সঙ্গে ‘ঢাকার’ নামপদের একটি সম্বন্ধ আছে কিন্তু ‘দিতেন’ ক্রিয়ার সঙ্গে ‘ঢাকার’ কোনো সম্বন্ধ নেই। সুতরা ‘ঢাকার’ পদটি সম্বন্ধ পদ।
ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নেই বলে সম্বন্ধ পদকে কারক বলা হয় না। সম্বন্ধ পদে ষষ্ঠী বিভক্তি হয়।
সম্বন্ধ পদে বিভক্তির ব্যবহার :
সম্বোধন পদ
বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা কারক ও বিভক্তি
প্রশ্ন: তিলে তৈল আছে কোন কারক ও বিভক্তি ?
উত্তর: অধিকরণে সপ্তমী