কুকুরের লালার প্রতিবর্তী ক্রিয়া

জীববিজ্ঞান
বিজ্ঞানী প্যাভলভ প্রতিবর্ত ক্রিয়াকে দুভাগে ভাগ করেছেন : (১) অনপেক্ষ (unconditioned) এবং (২) সাপেক্ষ (conditioned) প্রতিবর্ত ক্রিয়া। অনপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া সহজাত বা জন্মগত এবং কোনো শর্তের অধীন নয়। অন্যদিকে, সাপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়া সহজাত নয়, বারংবার অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জিত হয়, এবং শর্তের অধীন । কুকুরের লালা ক্ষরণের সাপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিজ্ঞানী প্যাভলভ।বিজ্ঞানী প্যাভলভ কুকুরের দেহে পরিপাকের শারীরবৃত্ত নিয়ে গবেষণা করেন। কুকুরদের খাওয়া পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলেন গবেষণাগারের নির্দিষ্ট টেকনিশিয়ান। প্যাভলভ লক্ষ করলেন শুধু খাবার দেখলেই কুকুরের লালাক্ষরণ হতো না, যে টেকনিশিয়ান খাবার পরিবেশন করতেন তাঁর গায়ের সাদা গবেষণা কোট (lab-coat) দেখলেই লালাক্ষরণ শুরু হয়ে যেত। এ পর্যবেক্ষণ থেকে প্যাভলভ ধারণা করেন যে খাবার দেওয়ার সময় সুনির্দিষ্ট উদ্দীপনা যদি কুকুরের চারপাশে থাকে তাহলে সেই উদ্দীপনা খাবারের সঙ্গে মিশে গিয়ে কুকুরের লালাক্ষরণকে উদ্দীপ্ত করে। এ উদ্দীপনাকে তিনি মানসিক উদ্দীপনা (psychic stimulation) নামকরণ করেছেন। প্রাথমিক এ ধারণার ভিত্তিতে প্যাভলভ প্রকৃত গবেষণায় নিয়োজিত হন।বিজ্ঞানী প্যাভলভ গবেষণার খাতিরে একটি ক্ষুধার্ত কুকুরকে বিশেষভাবে নির্মিত শক্ত মঞ্চে দাঁড় করিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বেল্ট লাগিয়ে দিলেন যেন কোনো অসুবিধা না হয়। বিশেষ প্রক্রিয়ায় লালা নালির সঙ্গে একটি নলের সংযোগ করে দেওয়া হলো। খাবার হিসেবে মাংসচূর্ণ দেওয়ার পর তিনি লালাক্ষরণের পরিমাণ রেকর্ড করে রাখেন। পরিমাণ মাংসচূর্ণ মুখে গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ লালা ক্ষরণ হতে দেখা যায়। প্যাতলও ক্ষুধাত কুকুরের মুখে মাংসম্পূর্ণ দেওয়ার ঠিক আগমূহূর্তে ঘন্টা বাজান। প্রথম দিকে বেশ কয়েকবার (১২বার) সমলয়ে ঘন্টাধ্বনি শোনানো ও মাংসম্পূর্ণ সরবরাহের পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্ততঃ ১২ বার ঘন্টাধ্বনির পর উদ্দীপনার প্রতি সাড়া পাওয়া গেছে। তখন শুধু ঘন্টাধ্বনি শুনলেই কুকুরের লালাক্ষরণ শুরু হয়েছে। ঘন্টাধ্বনির সঙ্গে এমন সামজস্য রচিত হলো যে মাংসচূর্ণ না দিয়ে প্যাভলভ যতবার ঘন্টা বাজিয়েছেন ততবারই কুকুরে লালাক্ষরণ হয়েছে। ক্ষরণের পরিমাণ শুধু মাংসম্পূর্ণ নিলে যতোখানি হয় ঠিক ততোখানি ।উপরোক্ত গবেষণার আলোকে প্যাভলোভিয়ান কন্ডিশনিং (Pavlovian conditioning) বা চিরায়ত সাপেক্ষণ (classical conditioning)-কে সংক্ষেপে নিম্নোক্তভাবে উপস্থাপন করা যায়।১। এমন অনেক বিষয় আছে যা একটি কুকুরের জানার প্রয়োজন নেই- এ ধারণা থেকে প্যাভলভ তাঁর গবেষণা শুরু করেন। যেমন – যখন আহার দেখবে তখন লালাক্ষরণ করবে এমন বিষয় শেখার দরকার নেই। এ প্রতিবর্ত কুকুরে নিহিত আছে । এটি একটি অনপেক্ষ সাড়া (unconditioned response, অর্থাৎ উদ্দীপনা-সাড়াদান শেখার বিষয় নয়)।২। প্যাভলভ আবিষ্কার করেন যে খাবারের সঙ্গে এমন কিছু (যেমন- গবেষণা টেকনিশিয়ান) জড়িত রয়েছে যা অনপেক্ষ সাড়াদানকে উসকে দেয়।৩। গবেষণা টেকনিশিয়ানের সাদা ল্যাব-কোট প্রথমে নিরপেক্ষ উদ্দীপনা (neutral stimulus) ছিল। কারণ এটি কোনো সাড়া (response) সৃষ্টি করেনি। কিন্তু ল্যাব-কোট গায়ে দেওয়া মানুষটি (নিরপেক্ষ উদ্দীপনা) থানারূপী অনপেক্ষ উদ্দীপনার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে।৪। প্যাভলভ তাঁর গবেষণায় একটি ঘন্টাকে নিরপেক্ষ উদ্দীপনা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি কুকুরকে খাবার দেওয়ার ঠিক পূর্বমুহূর্তে ঘন্টা বাজাতেন।৫। দেখা গেল, অনেকবার পুনরাবৃত্তির পর কুকুরটি ঘণ্টাধ্বনি ও খাদ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত এক নতুন আচরণে শিক্ষিত হয়েছে। যেহেতু সাড়াটি শিক্ষণজনিত (বা সাপেক্ষ) তাই একে সাপেক্ষ সাড়া (conditioned response) বলে। এভাবে নিরপেক্ষ উদ্দীপনা অনপেক্ষ উদ্দীপনার সঙ্গে মিলিত হয়ে সাপেক্ষ উদ্দীপনা (conditioned stimulus) – পরিণত হয়েছে।


About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

18 − 4 =