ইতিহাস জানতে হলে কোন না কোন উৎসের উপর নির্ভর করতে হয়। তেমনি প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন উৎস বা উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। আবার এসব উৎসসমূহ দুটি ভাগে বিভক্ত। যেমন লিখিত উৎস ও অলিখিত উৎস। আর গৌড়রাজ শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে দাঁড়ায়। আর ঐ নাজুক অবস্থার অবসান ঘটিয়ে পাল বংশের প্রথম শাসক গোপাল পাল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। যেসব উৎসের মাধ্যমে আমরা পাল বংশের ইতিহাস জানতে পারি নিচে তা আলোচনা করা হলো :
পাল বংশের ইতিহাস পাল রাজাদের উত্থান সম্বন্ধে যেমন কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না, ঠিক তেমনি তাদের আদি রাজ্য কোথায় ছিল সেই সম্বন্ধেও সঠিক কোন সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয় না। সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাবে পাল ইতিহাস সম্পূর্ণ পুনর্গঠন করা সম্ভব নয়। তারপর ও খালিসপুরের তাম্রফলক থেকে বাংলার পাল সম্রাট ধর্মপাল সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত “রামচরিত” গ্রন্থে বরেন্দ্র বা উত্তর বাংলা পাল রাজাদের ‘জনকভূ’ বা পিতৃভূমি বলে উল্লেখ আছে। রাষ্ট্রকূট রাজ্যের প্রশস্তিতে উল্লেখ আছে যে, ধর্মপাল ও চক্রায়ূধ উভয়েই তৃতীয় গোবিন্দের আনুগত্য স্বীকার করেন। খালিসপুরের তাম্রশাসনে আরো বর্ণনা আছে যে, তৎকালীন বাংলার সর্বত্র জীবনের সর্বস্তরে ধর্মপালের গুণকীর্তন করা হতো। এছাড়া গুরুস্তম্ভ লিপিতে দেবপালের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি উৎকুলকে ধ্বংস, দ্রারিড় ও গুর্জর প্রতিহারদের দর্প খর্ব ও হুন গর্ব হরণ করেছিলেন। এসব ছাড়াও সমসাময়িক কালের পর্যটক হিউয়েন সাং, লামা তারনাথের বিবরণ, বৌদ্ধগ্রন্থ আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প, বৈদ্যদেবের কৌমলি তাম্রলিপি, বানগড় তাম্রলিপি ইত্যাদি উৎস থেকে পাল ইতিহাস জানা যায়।
পরিশেষে বলতে পারি যে, পাল শাসন আমলের বিস্তারিত ইতিহাস জানা না গেলেও তৎকালীন সময়ের যেসব উপাদান আমরা পাই তা থেকে পাল বংশের ইতিহাস পুনর্গঠনে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।