ক্রিকেট-ক্রিকেট খেলার সমস্ত ইতিহাস

Cricket world ক্রিকেট খেলা

প্রাচীন এবং প্রাথমিক পর্যায় (16শ শতক – 18শ শতক)

ক্রিকেটের ইতিহাসের সূত্রপাত 16শ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে। প্রথমদিকে এটি শিশুদের খেলা হিসেবে পরিচিত ছিল। ক্রমে এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। প্রাথমিক ধাপে খেলাটি মূলত দড়ির ওপর দিয়ে ছোট্ট একটি বল পিচ করা এবং ব্যাট দিয়ে আঘাত করা ছিল।

প্রথম রেকর্ডেড ম্যাচ এবং নিয়মাবলী (17শ শতক – 18শ শতক)

একা 1611 সালে, প্রথম লিখিত রেকর্ডে ক্রিকেট উল্লেখ করা হয়। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পরিচিত রেকর্ডেড ম্যাচটি 1719 সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। 1744 সালে, ক্রিকেটের প্রথম নিয়মাবলী লিখিতভাবে তৈরি করা হয়। মারিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব (MCC) 1787 সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা ক্রিকেটের নিয়মাবলী প্রণয়ন ও মান নিয়ন্ত্রণে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।

টেস্ট ক্রিকেটের উত্থান (19শ শতক – 20শ শতক)

1877 সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচটির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়। 1882 সালে, ওভালে ইংল্যান্ডের কাছে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের মাধ্যমে “অ্যাশেজ” সিরিজের সূচনা হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজটি ক্রিকেটের ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে।

একদিনের আন্তর্জাতিক (ওডিআই) এবং টি-২০ (20শ শতক – বর্তমান)

1971 সালে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক (ওডিআই) ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। 1975 সালে প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডে, যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন হয়। 2003 সালে, টি-২০ ক্রিকেটের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়, যা ক্রিকেটের নতুন একটি রূপ নিয়ে আসে। 2007 সালে প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় এবং ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়।

আইসিসি এবং ক্রিকেটের বিশ্বব্যাপী বিস্তার

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) 1909 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কাজ করে। আইসিসি বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করে, যেমন ক্রিকেট বিশ্বকাপ, টি-২০ বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ইত্যাদি। এছাড়া, আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপও আয়োজন করে, যা টেস্ট ক্রিকেটের গুরুত্ব বাড়িয়েছে।

ক্রিকেটের বিশিষ্ট দেশ এবং খেলোয়াড়

ক্রিকেটের ইতিহাসে বিভিন্ন দেশ এবং খেলোয়াড় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রধান শক্তি হিসেবে পরিচিত।

অস্ট্রেলিয়ার ডন ব্র্যাডম্যান, ভারতের শচীন টেন্ডুলকার, পাকিস্তানের ইমরান খান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা, দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস এবং শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরন সহ অনেক কিংবদন্তি খেলোয়াড় ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজেদের নাম অমর করে রেখেছেন।

নারী ক্রিকেট

নারী ক্রিকেটের ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম নারী আন্তর্জাতিক ম্যাচটি 1934 সালে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। 1973 সালে প্রথম নারী বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। 2009 সালে, আইসিসি নারী ক্রিকেটকে আরও প্রমোট করার জন্য টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজন করে, যেখানে ইংল্যান্ড প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়।

প্রযুক্তির প্রভাব এবং আধুনিক ক্রিকেট

টেকনোলজির ব্যবহার ক্রিকেটে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ডিআরএস (ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম), হকআই, স্নিকোমিটার এবং আল্ট্রা এজ প্রযুক্তি ক্রিকেটের খেলার মান উন্নত করেছে। এছাড়া, ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক লিগগুলি, যেমন আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ), বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ), বিগ ব্যাশ লিগ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে।

ক্রিকেটের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব

ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয়, এটি অনেক দেশের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশে ক্রিকেট ধর্মের মতো উপাসিত হয়। বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন ও সংঘর্ষে ক্রিকেট বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।

ক্রিকেটের ইতিহাস দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য। এর বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন পরিবর্তন ও উন্নতি হয়েছে, যা খেলাটিকে আরও আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় করেছে। ভবিষ্যতে, ক্রিকেট আরও নতুন নতুন রূপ ও প্রযুক্তি দিয়ে সমৃদ্ধ হবে এবং বিশ্বব্যাপী আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করবে।



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

ten + sixteen =