গর্ভে সন্তান ধারণকারী মাকে গর্ভবর্তী (pregnant) বলা হয়। গর্ভাবস্থায় মায়ের পরিচর্যায় পালনীয় বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
ক. চিকিৎসা সংক্রান্ত পরিচর্যা
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার শুরতেই চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করানো ও তাঁর উপদেশ নেয়া উচিত। প্রথম পরীক্ষার পর ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত মাসে একবার, ২৯-৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত মাসে দুবার ও ৩৭ সপ্তাহ থেকে প্রসব না হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহে একবার পরীক্ষা করানো উচিত। এ ছাড়াও কখনো কোনো সমস্যা দেখা দিলে নির্ধারিত দিনের আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গর্ভাবস্থায় বাচ্চা পেটের কোন পাশে থাকে?
গর্ভাবস্থায়, শিশুর অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে, তবে সাধারণত, শিশুটি জরায়ুর ভিতরে অবস্থান করে, যা পেটের নীচের অংশে অবস্থিত।
এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে শিশুটি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এবং মাঝামাঝি সময়ে বেশ কিছুটা ঘোরাফেরা করতে পারে। যাইহোক, গর্ভাবস্থার অগ্রগতির সাথে সাথে শিশুর অবস্থান আরও স্থিতিশীল হতে পারে। আপনার শিশুর অবস্থান সম্পর্কে আপনার যদি প্রশ্ন থাকে তবে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা ভাল। তারা আল্ট্রাসাউন্ড এবং শারীরিক পরীক্ষা ব্যবহার করে শিশুর অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে এবং যেকোনো উদ্বেগের সমাধান করতে পারে।
খ. গর্ভাবস্থায় অন্যান্য পালনীয় বিষয় ঃ
১. খাদ্য ঃ গর্ভবতী মায়ের পুষ্টির উপরই নির্ভর করে গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি, বিকাশ ও ভবিষ্যৎ জীবনে ভালো থাকা। তাই সুষম সহজপাচ্য ও সঠিক পরিমাণ আহার প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় সুষম আহার বলতে বোঝায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বেশি পরিমাণ প্রোটিন, সঠিক পরিমাণ শর্করা ও কম পরিমাণ চর্বি জাতীয় খাদ্যের সঙ্গে উপযুক্ত পরিমাণ লৌহ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও অন্যান্য পদার্থ, যথা- জিঙ্ক, ফলিক এসিড, পটাসিয়াম, সেলেনিয়াম প্রভৃতি। সম্ভব হলে দিনে ১ লিটার দুধ, ১ বা ২ টুকরা মাছ বা মাংস, ১টি ডিম, ১টি বা ২টি ঋতুকালীন ফল, টাটকা শাকসব্জি এবং ভাত ও ডাল পেট ভরে খাওয়া উচিত। নিরামিষভোজীদের দুধের পরিমাণ বাড়াতে হয়। তা ছাড়া অঙ্কুরিত ছোলাও খাদ্য তালিকায় যোগ করা উচিত। প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাশ ফোটানো পানি খাওয়া প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না?
কিছু শাকসবজি রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মহিলার খাওয়া উচিত নয়:
- না ধোয়া ফল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত নয়, কারণ এই খোসাগুলি টক্সোপ্লাজমা গন্ডি এবং লিস্টেরিয়ার মতো জীবাণু, বিভিন্ন কীটনাশক এবং হার্বিসাইডের সাথে থাকতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
স্প্রাউট, লেটুস এবং বাঁধাকপির মতো কাঁচা সবজি গর্ভাবস্থায় না ধুয়ে খাওয়া উচিত নয় , কারণ এই সবজির স্কিন টক্সোপ্লাজমা গন্ডি এবং লিস্টেরিয়ার মতো ব্যাকটেরিয়াকে আশ্রয় করতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া ফল বেশিক্ষণ ফ্রিজে রাখার পর খাওয়া যাবে না। এবং শাক সবজি ধুয়ে পরিষ্কার বেশি পানি দিয়ে করে রান্না করুন।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য ঃ গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা থাকে। এর সমাধানকল্পে বেশি পরিমাণ শাকসব্জি খাওয়া দরকার। তা ছাড়া শুকনো খেজুর ও বীট খাবার তালিকায় রাখা উচিত।
৩. দাঁত ঃ গর্ভাবস্থায় দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে। তাই এ সময় দাঁত না তোলাই ভাল ।
৪. বিশ্রাম ঃ গর্ভাবস্থায় পরিমিত বিশ্রাম দরকার। দুপুরে দুঘন্টা, রাতে আট ঘন্টা বিশ্রাম নেওয়া উচিত। সব সময় বাঁ পাশে কাত হয়ে শোয়া উচিত। এতে শিশুর বিকাশ স্বাভাবিক হয়।
৫. কাজকর্ম ঃ স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা নেই, তবে ভারী কাজকর্ম করা একেবারেই উচিত নয়।
৬. গোসল ঃ রোজ গোসল করে শরীর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গোসল করার সময় যেন পিছলে পড়ে না যায় সেদিকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।
৭. কাপড় ঃ গর্ভাবস্থায় ঢিলেঢালা কাপড় পড়া উচিত। বাংলাদেশের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে সুতীর কাপড়-চোপড় পড়া স্বাস্থ্যসম্মত।
৮. ভ্রমণ ঃ ঝাঁকুনিযুক্ত ক্লান্তিকর ভ্রমণ গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস ও শেষ দুমাস না করাই ভালো। বাসের চেয়ে রেল ও বিমানে ভ্রমণ-ঝুঁকি অনেক কম।
৯. ধুমপান ও মদ্যপান ঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান অনুচিত। তা না হলে কম ওজনের শিশু কিংবা বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে।
১০. যৌনমিলন ঃ গর্ভের প্রথম তিন মাস ও শেষ দেড় মাস যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা উচিত। এতে গর্ভপাত, অকাল প্রসব ও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।