চরিত্র রচনা | চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ

রচনা

ভূমিকা : চরিত্র মানুষের সৎ গুণাবলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মানুষের কথায়, কাজে, চিন্তায়, আচরণে পূত-পবিত্র ভাবকেই চরিত্র বলে। চরিত্র মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ- মানুষের শ্রেষ্ঠ অলঙ্কার। ধন-দৌলত, আভিজাত্য, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি- এর কোনোটিই মানুষের প্রকৃত পরিচয় নয়, চরিত্রই হচ্ছে মানুষের প্রকৃত পরিচয়।

চরিত্রের লক্ষণ : সত্যনিষ্ঠা, আত্মসংযম, ন্যায়পরায়ণতা, গুরুজনের প্রতি ভক্তি প্রভৃতি চরিত্রর লক্ষণ। যার মধ্যে উক্ত গুণাবলির সমাবেশ ঘটে, তিনিই চরিত্রবান। চরিত্রবান ব্যক্তি কখনো সত্য থেকে বিচ্যুত হন না, ক্রোধে উন্মত্ত হন না, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না কিংবা গুরুজনদের প্রতি দুর্বিনীত আচরণ করেন না। তিনি সব সময় সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে, কল্যাণের পথে অবিচলিত থাকেন। সমাজের ন্যায়-নীতি, ধর্মের বিধি-বিধান, বিবেকের শাসন মেনে চলাই চরিত্রবানের বৈশিষ্ট্য। যিনি আদর্শবান, চরিত্র গুণে মহৎ তিনি সকল মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র। দৃঢ় চরিত্রশক্তির অধিকারী মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে। চরিত্রবান ব্যক্তি সমাজে আলোকবর্তিকাস্বরূপ। চরিত্র মানুষকে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে।

চরিত্র রচনা

চরিত্র গঠনের উপায় : শৈশব থেকেই চরিত্র গঠনের পর্ব শুরু হয়। গৃহ বা পারিবারিক পরিবেশই চরিত্র গঠনের উপযুক্ত স্থান। মাতা-পিতাই শিশুর চরিত্র গঠনে প্রথম ও প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবারে বড়দের আদর্শ অনুসরণ করেই শিশু চরিত্র গঠনের সুযোগ পায়। শিক্ষকদের ওপরেও রয়েছে শিশু-কিশোরদের চরিত্র গঠনের গুরু দায়িত্ব। চরিত্র গঠনে পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিশেষ ভূমিকা আছে। পরিবেশ চরিত্র গঠনকে নিয়ন্ত্রণ করে। কুসংসর্গ চরিত্র গঠনের অন্তরায়। শিশু যাতে কুসংসর্গে না পড়ে সেদিকে অভিভাবকদের লক্ষ রাখতে হবে। চরিত্র সাধনার ফসল। চরিত্র সাধনার বলে অর্জন করতে হয়, সাধনা দিয়েই একে রক্ষা করতে হয়। লোভ-লালসা, কু-প্রবৃত্তি, মিথ্যা প্রলোভন চরিত্র গঠনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলো পরিহার করে দৃঢ় মনোবল নিয়ে চরিত্র গঠনের সাধনা করতে হয়। সৎ-চিন্তা, সৎকর্ম ও সৎসঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি করে সুশিক্ষার মাধ্যমে চরিত্র গঠনের আগ্রহ থাকলে সাফল্য লাভ করা যায়। চরিত্র গঠনে ধর্মের প্রভাবও কম নয়। ধর্ম মানুষকে ন্যায়, নীতি, আদর্শ, সততা শিক্ষা দেয়। ধর্ম অসত্য, অন্যায়, পাপ, ক্রোধ, হিংসা, দ্বেষ থেকে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। ধর্মীয় বিধানকে নিজেদের জীবনে যথার্থরূপে চর্চা করলে মানুষের চারিত্রিক মহিমা ও উৎকর্ষ বৃদ্ধি পায়। সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হতে হলে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত। অবিরাম সংগ্রাম করতে হয়। সামান্য লোভ-লালসা থেকেও হঠাৎ করে কারো চরিত্রস্থলন ঘটতে পারে। সকল প্রকার অন্যায়, পাপ, পঙ্কিলতা বর্জন করে সৎ মানুষের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারলেই চরিত্রবান হওয়া সম্ভব। সততা, কর্তব্যপরায়ণতা, পরোপকারিতা, নিয়মানুবর্তিতা, সৎসাহস, স্বাবলম্বন, অধ্যবসায়, বিনয়, শিষ্টতা ইত্যাদি গুণ অর্জন করেই চরিত্র গঠন করতে হয়।

চরিত্রের গুরুত্ব : জীবনের প্রতিটি স্তরে চরিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। চরিত্রবান ব্যক্তি পরিবারে ও সমাজে সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। চরিত্রগুণের কারণেই পৃথিবীতে মহাপুরুষেরা অমর হয়ে আছেন। সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্মরণীয়-বরণীয় হতে হলে চরিত্রের প্রয়োজন। চরিত্র মানুষের জীবনে যাবতীয় সাফল্যের পূর্বশর্ত। কথায় বলে, চরিত্র আছে তো সবই আছে, চরিত্র নেই তো কিছুই নেই। যার চরিত্র যত উৎকৃষ্ট, বাস্তব জীবনে তিনি তত মর্যাদাবান। প্রকৃত চরিত্রবান ব্যক্তি কেবল নিজের জন্য বাঁচে না, বাচে সমাজের জন্য, দেশের জন্য, বাচে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য। পরশ পাথরের স্পর্শে যেমন লোহা সোনা হয়ে ওঠে, তেমনি চরিত্রবান ব্যক্তির সংসর্গে অধম ব্যক্তিও উত্তম হয়ে ওঠার সৌভাগ্য অর্জন করে। যে সমাজে বা দেশে চরিত্রবান লোক আছে, সে সমাজ বা দেশ সব রকমের পাপ ও কলুষতা থেকে মুক্ত। মানবজীবনের সকল সম্পদ অপেক্ষা চরিত্রের মহিমা। অধিক মূল্যবান। চরিত্রে বলে বলীয়ান হয়ে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে।

চরিত্রহীন ব্যক্তি ঘৃণার পাত্র : চরিত্রহীন মানুষ পশুর চেয়েও অধম। চরিত্রহীন লোককে সমাজে কেউ সম্মানও করে না, পছন্দও করে না। চরিত্রহীন ব্যক্তির জীবন বৃথা। তাকে সবাই ঘৃণা করে। চরিত্রহীন লোকের ধন-সম্পদ, বিদ্যা-বুদ্ধি, প্রভাব- প্রতিপত্তির কোনো মূল্য নেই। যার চরিত্র নেই, তার সংস্পর্শে কেউ আসতে চায় না। তাকে সবাই এড়িয়ে চলে— সে সমাজের কলঙ্ক। সরল বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি

মহাপুরুষদের আদর্শ : পৃথিবীতে যেসব মহাপুরুষ অমর হয়ে আছেন তাঁরা সবাই উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ, হযরত ঈসা, সক্রেটিস, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, হাজী মুহম্মদ মহসীন, জগদীশচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক, আব্রাহাম লিঙ্কন, নেলসন ম্যান্ডেলা, মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ মনীষী অসাধারণ চরিত্র মহিমায় পৃথিবীতে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন।

উপসংহার : চরিত্র মানুষকে শ্রেষ্ঠ ও মহীয়ান করে। চরিত্র মানবজীবনের মুকুটস্বরূপ। অর্থ-প্রতিপত্তি দিয়ে নয়, চরিত্র দিয়েই মানুষকে মূল্যায়ন করতে হয়। চরিত্রই মানুষের জীবনের চলার পথে মূল্যবান পাথেয়। মহাপুরুষদের জীবন আদর্শ অনুসরণ করে আমাদেরকেও চরিত্রবান হওয়ার সাধনা করতে হবে। চরিত্রবান ব্যক্তির জীবন সার্থক ও সুন্দর। নিষ্ঠা, সততা ও সাধনা থাকলে আামাদের জীবনও সার্থক ও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে।



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

four × 4 =