বাংলার অবস্থান সম্পর্কে নীহার রঞ্জন রায় বলেন, একদিকে সুউচ্চ পাহাড়, দুই পাশে শক্ত পাথুরে ভূমি আর একদিকে বিস্তীর্ণ সমুদ্র, মাঝখানে সমভূমি, এটাই বাঙালির ভৌগোলিক অবস্থান। প্রাচীনকালে, বিশেষ করে প্রাক-মুসলিম যুগে বাংলার ছোট ছোট ভৌগোলিক এলাকায় বহু মানুষ বাস করত।
এই সকল এলাকায় বসবাসকারী জনগণের সমষ্টিকে জনপদ বলা হতো। বাংলার এই জনপদগুলোর নাম পাওয়া যায় খ্রিস্টীয় সেন আমলে। কালের পরিক্রমায় এ ভূখণ্ডে বিভিন্ন জনপদগুলোর উত্থান, বিকাশ ও পতন ঘটে।
জনপদ: প্রাচীনকালে বাংলা এখনকার মতো একক রাজ্য ছিল না। সে সময় বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল অনেক ছোট ছোট অঞ্চল বা এলাকায় বিভক্ত ছিল। এই সমস্ত অঞ্চল বা অঞ্চলের শাসকরা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী শাসন করতেন। সংক্ষেপে, বাংলার এই অঞ্চল বা এলাকাগুলোকে সমষ্টিগতভাবে জনপদ বলা হয়। বাংলার এই জনপদগুলির মধ্যে রয়েছে: (১) গৌড়; (2) বাংলা; (3) পুন্ড্র; (4) Horicle; (5) সমতল; (6) বরেন্দ্র; (7) তামার ধাতুপট্টাবৃত; (8) চন্দ্রদ্বীপ; (9) ধূসর; (1) সূক্ষ্ম; (11) বাংলা বা বাঙ্গালা এবং (12) দণ্ড। প্রাচীন বাংলার জনপদগুলির সঠিক পরিধি ও পরিধি নির্ণয় করা কঠিন। ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে এসব জনপদের সীমানা বেড়েছে বা কমেছে। এর বিভিন্ন অংশের নামও ছিল ভিন্ন ভিন্ন। উত্তর পশ্চিমবঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গের পুন্ড্র ও বরেন্দ্র। রাঢ় ও তাম্রলিপি, দক্ষিণবঙ্গে সমতট ও হারিকেন এবং পূর্ববঙ্গে চির বাংলা। এছাড়া উত্তর পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চল গৌড় নামে পরিচিত ছিল।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীনকালে অখণ্ড বাংলার কোনো প্রশাসন পাওয়া যায়নি, বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন জনপদ নামে পরিচিত ছিল। যা ধীরে ধীরে বাংলায় পরিণত হয়।