— জিনতত্ত্ব সহজভাবে বুঝতে হলে নিম্নোক্ত শব্দগুলো সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।
১। ফ্যাক্টর (Factor) বা জিন (Gene) : DNA অণুর একটি খন্ডাংশ যা জীবের বংশগতির মৌলিক ভৌত ও কার্যিক একক এবং বংশ থেকে বংশান্তরে জীবের বৈশিষ্ট্য বহন করে।
২। লোকাস (Locus) : ক্রোমোজোমে জিনের নির্দিষ্ট স্থান-এর নাম ক্রোমোজোমের একই লোকাসে অবস্থান করে।
৩। অ্যালিল বা অ্যালিলোমরফ (Allele or Allelomorph) ( সমসংস্থ (homologous) ক্রোমোজোম জোড়ের নির্দিষ্ট লোকাসে অবস্থানকারী নির্দিষ্ট জিন-জোড়ার একটিকে অপরটির অ্যালিল বলৈ।) অ্যালিলদুটি একই ধর্মী (যেমন—TT) অথবা একে অপরের বিপরীত ধর্মী (যেমন—Tt) হতে পারে । যখন দুটি বিপরীতধর্মী অ্যালিল থাকে তখন একটিকে প্রকট অ্যালিল (অর্থাৎ T), অন্যটিকে প্রচ্ছন্ন অ্যালিল (t) বলে ।
৪।হোমোজাইগাস (Homozygous) ঃ কোনো জীবে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী অ্যালিলদুটি সমপ্রকৃতির হলে, তাকে হোমৌজাইগাস বলে। যেমন-BB = কালো পশম, bb = বাদামী পশম ইত্যাদি।
৫।হেটারোজাইগাস (Heterozygous) ৪ কোনো জীবে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী অ্যালিলদুটি অসমপ্রকৃতির হলে, তাকৈ হেটারোজাইগাস জীব বলে । যেমন T এবংt অর্থাৎ Ti-ধারী জীবটি লম্বা হলেও তা হেটারোজাইগাস।
৬। প্রকট বৈশিষ্ট্য (Dominant character) ঃ একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হোমোজাইগাস জীবে (TT এবং t) সংকরায়ণ ঘটালে F। জনুতে সৃষ্ট হেটারোজাইগাস জীবে যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়, তাকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন- F। জনুর মটরগাছে লম্বা ও খাটো উভয় ধরনের লক্ষণের জন্যে একটি করে জিন থাকলেও (Tt) শুধুমাত্র লম্বা বৈশিষ্ট্যই প্রকাশিত হয়। অতএব মটরগাছে লম্ব বৈশিষ্ট্যটি প্রকট।
৭। প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য (Recessive character) ঃ হেটারোজাইগাস জীবে দুটি বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের উপাদান একত্রে থাকলেও একটিমাত্র বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়, অন্যটি অপ্রকাশিত থাকে। জীবের অপ্রকাশিত বৈশিষ্ট্যকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে। যেমন- F। জনুর
মটরগাছে লম্বা ও খাটো উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্যের জন্য একটি করে জিন থাকলেও (Tt) শুধুমাত্র লম্বা বৈশিষ্ট্যই প্রকাশিত হয় । অতএব মটরগাছে (খাটে) বৈশিষ্টাটি প্রচ্ছন।
(৮) ফিনোটাইপ (Phenotype) ঃ জিনোটাইপ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত জীবের বাহ্যিক লক্ষণকে ফিনোটাইপ বলে । এটি জীবের আকার আকৃতি, বর্ণ প্রভৃতি প্রকাশ করে। সদৃশ ফিনোটাইপধারী দুটি জীবের জিনোটাইপ একই রকম বা ভিন্ন হতে পারে। যেমন-বিশুদ্ধ লক্ষণযুক্ত লম্বা ও খাটো মটর গাছের মধ্যে পরাগসংযোগ ঘটাত্রে F জনুতে সবগুলো উদ্ভিদই লম্বা আকৃতির হয় যদিও এদের মধ্যে দুধরনের ফ্যাকটরই (Tt) থাকে।
৯। একসংকর বা মনোহাইব্রিড ক্রস (Monohybrid cross) : জীবের একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের উপর দৃষ্টি রেখে যে সংকরায়ণ বা ক্রস ঘটানো হয়, তাকে একসংকর ক্রস বা মনোহাইব্রিড ক্রস বলে। যেমন-কালো ও বাদামী বর্ণের গিনিপিগের মধ্যে ক্রস। মনোহাইব্রিড ক্রসে ২য় বংশধরে (F, জনু) প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের অনুপাত সাধারণত ৩ঃ১ হয়। মেণ্ডেল তাঁর প্রথম সূত্রটি একসংকর ক্রসের উপর ভিত্তি করেই প্রণয়ন করেছিলেন।
১০। দ্বিসংকর বা ডাইহাইব্রিড ক্রস (Dihybrid cross) : জীবের দুজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের উপর দৃষ্টি রেখে সংকরায়ণ বা ক্রস । যেমন ঃ কালোবর্ণ-ছোটলোমধারী ও বাদামীবর্ণ-লম্বালোমযুক্ত গিনিপিগের ক্রস । ডাইহাইব্রিড ক্রসে ২য় বংশধরে (F, জনু) জিনের স্বাধীন সঞ্চারণের ফলে সাধারণত ৯ঃ৩ঃ৩০১ অনুপাতে চার ধরনের বৈশিষ্ট্যসমন্বিত সন্ততি পাওয়া যায়।
১১। টেস্ট ক্রস (Test cross) 8 F, বা F2 জনুর বংশধরগুলো হোমোজাইগাস না হেটারোজাইগাস তা জানার জন্য সেগুলোকে মাতৃবংশের বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন লক্ষণবিশিষ্ট জীবের সাথে সংকরায়ণ বা ক্রস। এভাবে এদের F, এবং F, জনুর জিনোটাইপ বের করা যায়। যেমন-সংকর লম্বা মটরগাছ (Tt) এবং বিশুদ্ধ খাটো মটরগাছ (tt) এর সংকরায়ণ ঘটালে এদের ফিনোটাইপিক এবং জিনোটাইপিক অনুপাত হবে ১ঃ১।
২৯৩। ব্যাক ক্রস (Back cross) 8 F, জনুর একটি হেটারোজাইগাস জীবের সাথে পিতৃ-মাতৃবংশীয় এক সদস্যের সঙ্গে সংকরায়ণ।