পদার্থ বিজ্ঞানের জনক কে

general knowledge technology

পদার্থবিজ্ঞানের জনক হিসেবে সাধারণত গ্রিক দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী এরিস্টটলকে উল্লেখ করা হয়। তবে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত হলেন গ্যালিলিও গ্যালিলেই। এই প্রবন্ধে গ্যালিলিও গ্যালিলেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের জনক কে- গ্যালিলিও গ্যালিলেই

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

গ্যালিলিও গ্যালিলেই ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৫৬৪ সালে ইতালির পিসা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ভিনসেঞ্জো গ্যালিলেই একজন সঙ্গীতজ্ঞ এবং সঙ্গীত তত্ত্ববিদ ছিলেন। গ্যালিলিও প্রথমে ফ্লোরেন্সের ক্যামালদোলিস মঠে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন শুরু করেন, তবে শীঘ্রই তিনি গণিত এবং প্রাকৃতিক দর্শনের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

গ্যালিলিওর প্রাথমিক গবেষণা

গ্যালিলিওর প্রথম উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল “আইসোক্রোনিসিটি অব পেন্ডুলাম”। ১৫৮৩ সালে, পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন, তিনি লক্ষ্য করেন যে একটি দোলকের দোলনা সময় তার প্রশস্ততা উপর নির্ভর করে না। এই আবিষ্কার পরবর্তীকালে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে দোলক ঘড়ি তৈরির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

মেকানিক্সে গ্যালিলিওর অবদান

গ্যালিলিওর অন্যতম প্রধান অবদান হল গতিসূত্র এবং মেকানিক্সে। তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রমাণ করেন যে সমস্ত বস্তু একই হার দিয়ে পতিত হয় যদি বাতাসের প্রতিরোধ না থাকে। তার বিখ্যাত পরীক্ষাটি পিসার হেলানো টাওয়ার থেকে বিভিন্ন ভরের দুটি বল ফেলে দেওয়ার পরীক্ষা, যা থেকে তিনি দেখান যে দুটি ভিন্ন ভরের বস্তু একই হারেই পতিত হয়।

গ্যালিলিওর “দুই নতুন বিজ্ঞান” গ্রন্থে তিনি গতির প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র উদ্ভাবন করেন, যা পরবর্তীতে নিউটনের গতিসূত্রের ভিত্তি স্থাপন করে। তিনি গতি, শক্তি, এবং ত্বরণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেন যা পদার্থবিজ্ঞানের মূল ভিত্তি গঠন করে।

জ্যোতির্বিজ্ঞান

গ্যালিলিওর জ্যোতির্বিজ্ঞানে অবদানও অসাধারণ। ১৬০৯ সালে, তিনি একটি ডাচ উদ্ভাবন (টেলিস্কোপ) উন্নত করেন এবং আকাশ পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। তিনি চাঁদের পৃষ্ঠে গর্ত এবং পর্বতমালা আবিষ্কার করেন, যা প্রমাণ করে যে চাঁদ একটি মসৃণ গোলক নয়। তিনি বৃহস্পতি গ্রহের চারটি উপগ্রহ (ইউরোপা, গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো এবং আইও) আবিষ্কার করেন, যা গ্যালিলিয়ান উপগ্রহ নামে পরিচিত। এই আবিষ্কারগুলি কপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্বকে সমর্থন করে, যা পদ্ধতিগতভাবে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ধ্যানধারণা পরিবর্তন করে।

গ্যালিলিও বনাম চার্চ

গ্যালিলিওর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত অধ্যায় ছিল তার চার্চের সাথে বিরোধ। কপারনিকাসের তত্ত্ব সমর্থন করার জন্য ১৬১৬ সালে রোমান ক্যাথলিক চার্চ গ্যালিলিওকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৬৩২ সালে, তিনি “ডায়ালগ কনসার্নিং দ্য টু চিফ ওয়ার্ল্ড সিস্টেমস” প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি পটলেমির ভৌগোলিক তত্ত্ব এবং কপারনিকাসের হেলিওসেন্ট্রিক তত্ত্বের মধ্যে তুলনা করেন। চার্চের সাথে বিরোধ তীব্র হলে ১৬৩৩ সালে গ্যালিলিওকে ধর্মীয় আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয় তার জীবনের শেষ পর্যন্ত।

গ্যালিলিওর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি

গ্যালিলিওর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল তার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। তিনি পরীক্ষামূলক পদ্ধতির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন যা পর্যবেক্ষণ, মাপ, এবং পুনরাবৃত্তি পরীক্ষা সমন্বিত। এই পদ্ধতি আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

গ্যালিলিওর প্রভাব এবং উত্তরাধিকার

গ্যালিলিওর কাজ এবং আবিষ্কারগুলি পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করে এবং পরবর্তী বিজ্ঞানীদের জন্য পথপ্রদর্শক হয়। তার কাজগুলি ইশাক নিউটন, আলবার্ট আইনস্টাইন, এবং অন্যান্য অনেক বড় বিজ্ঞানীর কাজের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আধুনিক বিজ্ঞানের মানদণ্ড স্থাপন করেছে এবং বিজ্ঞানীদের পরীক্ষামূলক গবেষণায় উৎসাহিত করেছে।

মৃত্যু এবং পরবর্তী স্বীকৃতি

৮ জানুয়ারি, ১৬৪২ সালে গ্যালিলিও মারা যান। মৃত্যুর পরেও তার কাজ এবং আবিষ্কারগুলি বৈজ্ঞানিক সমাজে প্রচুর প্রভাব ফেলে। ১৯৯২ সালে, প্রায় ৩৫০ বছর পর, পোপ জন পল দ্বিতীয় গ্যালিলিওর সাথে চার্চের বিরোধ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং স্বীকার করেন যে গ্যালিলিওর বিজ্ঞান ছিল সঠিক।

গ্যালিলিও গ্যালিলেইর জীবন এবং কাজগুলি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। তার গবেষণা, আবিষ্কার, এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আধুনিক বিজ্ঞানকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ দিয়েছে এবং আমাদের ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে গভীরতর ধারণা লাভ করতে সহায়তা করেছে। গ্যালিলিও সত্যিই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক, এবং তার অবদানগুলি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

nine + eight =