মানব শারীরতত্ত্ব পরিপাক ও শোষণ + pdf নোট

জীববিজ্ঞান
পরিপাক কি

পরিপাক কি ?

শরীরের কাজে লাগানোর জন্য বিভিন্ন এনজাইমের  তৎপরতায় খাদ্যবস্তুকে পরিপাক (digestion) নামের এক বিশেষ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে হয়।

এ প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রথমে সরল দ্রবণীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার পরে কোষে প্রবেশের উপযোগী হয়। সবশেষে রক্ত এ পরিপাককৃত খাদ্যকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। কিছু খাদ্য যেমন পানি, খনিজ লবণ, ভিটামিন ইত্যাদি আহারের পর কোন পরিবর্তন ছাড়াই সরাসরি দেহে শোষিত হতে পারে। কিন্তু কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও লিপিড জাতীয় খাদ্য এভাবে কোষ আবরণী ভেদ করতে পারে না। তাই কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) জাতীয় খাদ্যকে গ্লুকোজ, প্রোটিন (আমিষ)-কে অ্যামিনো এসিড এবং লিপিড বা স্নেহ জাতীয় খাদ্যকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিবর্তিত হতে হয়। পরিপাককৃত খাদ্য শরীরে শক্তি জোগায়, প্রোটোপ্লাজম গঠন করে,হরমোন ও অন্যান্য বিশেষ উপাদান উৎপন্ন করে শরীরের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের জন্য জমা থাকে।

পরিপাক কাকে বলে ?

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় মানুষের পৌষ্টিকনালির ভেতরে গৃহীত জটিল, অদ্রবণীয়, অশোষণীয় খাদ্য উপাদানসমূহ হরমোনের প্রভাবে নির্দিষ্ট এনজাইমের সহায়তায় সরল, দ্রবণীয় ও তরল খাদ্যসারে পরিণত হয়ে দেহকোষের শোষণ উপযোগী হয় তাকে পরিপাক বলে।

মুখগহ্বরে খাদ্য পরিপাক (Digestion in Buccal Cavity)

মানুষের মুখগহ্বরের দুপাশে তিনজোড়া লালাগ্রন্থি (salivary gland) অবস্থিত। এগুলো হচ্ছে দুপাশের কানের নিচে প্যারোটিড গ্রন্থি (parotid gland), নিচের চোয়ালের ভেতর দিকে সাবম্যান্ডিবুলার গ্রন্থি (submandibular gland) এবং জিহ্বার তলায় সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি (sublingual gland)।

গ্রন্থিগুলো রস ক্ষরণকারী এবং এপিথেলিয়ামে আবৃত গোল বা ডিম্বাকার থলি (sac) বিশেষ। থলির প্রাচীরে যে সেরাস কোষ ও মিউকাস কোষ রয়েছে তা থেকে রস ক্ষরিত হয়। লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারস (saliva) কিছুটা অম্লীয় এবং এর অধিকাংশই পানি (৯৫.৫%)। একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ১২০০-১৫০০ মিলিলিটার লালা ক্ষরণ করে। মুখগহ্বরে খাদ্যবস্তু দুভাবে পরিপাক হয় রাসায়নিক (chemical) ও যান্ত্রিক (mechanical)।

যান্ত্রিক পরিপাক

যান্ত্রিক পরিপাক কাকে বলে ?

যান্ত্রিক পরিপাকঃ সামান্যতম স্বাদ, গন্ধ ও খাদ্য গ্রহণে স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্ক যে সংকেত পায় তার প্রেক্ষিতে মস্তিষ্ক লালাগ্রন্থিগুলোতে লালা ক্ষরণের বার্তা পাঠায়। লালা মূলত পানিতে গঠিত এবং খাদ্যকে এমনভাবে নরম ও মসৃণ করে যাতে দাঁতের কাজ দ্রুত ও সহজ হয়। চার ধরনের দাঁত যেমন- ইনসিসর (Incisor), ক্যানাইন (Canine), প্রিমোলার (Pre-molar) ও মোলার (Molar)-এর নানা ধরনের কর্মকান্ডের ফলে বড় খাদ্যখন্ড কাটা-ছেঁড়া, পেষণ- নিষ্পেষণ শেষে হজম উপযোগী ছোট ছোট টুকরায় পরিণত হয়। জিহ্বা নড়া-চড়া ও সংকোচন-প্রসাণরণক্ষম পেশল অংশ। স্বাদ নেওয়া ছাড়াও দাঁতে আটকে থাকা খাদ্যকণা সরাতে, মুখের চারপাশে ঘুরিয়ে বিভিন্ন দাঁতের নিচে পৌঁছাতে, লালা মিশ্রণে এবং সবশেষে গিলতে সাহায্য করে। যান্ত্রিক পরিপাকের সময় খাদ্যখন্ড নিষ্পেষিত হয়ে নরম
খাদ্যমন্ড (bolus)-তে পরিণত হয়। জিহ্বার উপরতল যখন খাদ্যমন্ডকে শক্ত তালুর (hard palate) বিপরীতে রেখে চাপ দেয় তখন খাদ্যমন্ড পেছন দিকে যেতে বাধ্য হয়। পেছনে কোমল তালু (soft palate) থাকায় খাদ্যপিন্ড নাসাছিদ্রপথে‌ প্রবেশে বাঁধা পায়। কোমল তালু পার হলেই খাবার গলবিলে এসে পৌঁছায়। গলবিল থেকে দুটি নালি চলে গেছে- একটি শ্বাসনালি (trachea), অন্যটি অন্ননালি (oesophagus)। জিহ্বার গোড়ার দিকে শ্বাসনালির অংশে ছোট উদগত অংশ হিসেবে অবস্থিত আলজিহ্বা (epiglottis) অনুনালির উপর এমন এক উর্ধ্বগামী বলপ্রয়োগ করে যাতে চিবানো খাদ্য শ্বাসনালির ভেতর প্রবেশ না করে অন্ননালির ভেতর প্রবেশ করে।

দন্ত সংকেত

দন্ত সংকেত কি ?

দন্ত সংকেত (Dental formula) : স্তন্যপায়ী প্রাণিদের মোট দাঁতের সংখ্যা যে সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে দন্ত সংকেত বা ডেন্টাল ফর্মুলা বলে।

মানুষের দন্ত সংকেত বা সূত্রটি লেখ

মানুষের চোয়ালে চার ধরনের দাঁত থাকে। একটি সরল রেখার উপর ও নিচে বিভিন্ন প্রকার দাঁতের ইংরেজি নামের প্রথম অক্ষর লিখে ঐ ধরনের দাঁত প্রতি চোয়ালের অর্ধাংশে কয়টি আছে তা লেখা হয়। অতঃপর প্রতি চোয়ালের অর্ধাংশের মোট দাঁতের সংখ্যাকে ২ দ্বারা গুণ করে উভয় চোয়ালের দাঁতের সংখ্যা যোগ করলে মোট দাঁতের সংখ্যা পাওয়া যয়। এ নিয়ম অনুযায়ী মানুষের দত্ত সংকেত হচ্ছেঃ

ICPM÷ ICPM= ৮ X ২ ÷ ৮ X ২ = ১৬+১৬ = ৩২

রাসায়নিক পরিপাক কাকে বলে ?

রাসায়নিক পরিপাকঃ লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারসে টায়ালিনমল্টেজ (অল্প) নামে শর্করা বিশ্লেষী, এনজাইম পাওয়া যায়। এগুলো জটিল শর্করাকে মল্টোজ এবং সামান্য মল্টোজকে গ্লুকোজে পরিণত করে। টায়ালিনের ক্রিয়া মুখগহব্বীর করা হলেও এর পরিপাক ক্রিয়া সংঘটিত হয় পাকস্থলিতে লালারসে আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য (লিপিড) পরিপাককারী এনজাইম না থাকায় এধরনের খাদ্যের কোন রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না।

i. জটিল শর্করা- টায়ালিন মল্টোজ।

ii. মল্টোজ মলটেজ গ্লুকোজ।

লালামিশ্রিত, চর্বিত ও আংশিক পরিপাককৃত শর্করা গলবিল ও অন্ননালির মাধ্যমে পাকস্থলিতে পৌঁছায়।

পাকস্থলিতে খাদ্য পরিপাক (Digestionin Stomach)

যান্ত্রিক পরিপাকঃ মুখ থেকে চর্বিত খাদ্য অন্ননালি পথে পাকস্থলিতে এসে ২-৬ ঘন্টাকাল অবস্থান করে। এসময় HCI ক্ষরিত হয়ে খাদ্য বাহিত অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। মসৃণ পেশির ৩টি স্তরে নিয়ে পাকস্থলি গঠিত। পেশিস্তর বিভিন্ন দিকমুখি হওয়ায় পাকস্থলি প্রাচীর নানাদিকে সঞ্চালিত হয়ে (মোচড় দিয়ে, সংকুচিত হয়ে কিংবা চাপা হয়ে) মুখগহ্বর থেকে আসা অর্ধচূর্ণ খাদ্যকে পিষে পেস্ট(paste) -এ পরিণত করে। এসময় গ্যাস্ট্রিক জুস (gastric juice) ক্ষরিত হয়ে পাকস্থলির যান্ত্রিক চাপে পিষ্ট খাদ্যের সঙ্গে মিশে ঘন সুপের মতো মিশ্রণে পরিণত হয়। খাদ্যের এ অবস্থা কাইম (chyme) বা মন্ড নামে পরিচিত। এর উপর গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি নিঃসৃত বিভিন্ন এনজাইমের পরিপাক কাজ শুরু হয়ে যায়।

রাসায়নিক পরিপাকঃ পাকস্থলির প্রাচীর পেশিবহুল এবং গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি সমৃদ্ধ। গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি এক ধরনের নলাকার গ্রন্থি এবং চার ধরনের কোষে গঠিত। প্রত্যেক ধরনের কোষের ক্ষরণ আলাদা। সম্মিলিতভাবে গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থির ক্ষরণকে “গ্যাস্ট্রিক জুস” বলে। এর ৯৯.৪৫%ই পানি। গ্যাস্ট্রিন (gastrin) নামক হরমোন এই জুস ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষে দিনে প্রায় দুই লিটার গ্যাস্ট্রিক জুস উৎপন্ন হয়। পাকস্থলি থেকে শর্করাবিশ্লেষী কোন এনজাইম নিঃসৃত হয় না। ফলে এর আর কোন পরিবর্তন ঘটে না। গ্যাস্ট্রিক জুসে পেপসিনোজেনপ্রোরেনিন নামক নিষ্ক্রিয় প্রোটিওলাইটিক (আমিষ বিশ্লেষী) এনজাইম থাকে। এ দুটি নিষ্ক্রিয় এনজাইম গ্যাস্ট্রিক জুসের HCI-এর সাথে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে পেপসিনরেনিন নামক সক্রিয় এনজাইমে পরিণত হয়। পেপসিন অম্লীয় মাধ্যমে জটিল আমিষের আর্দ্র বিশ্লেষণ ঘটিয়ে প্রোটিওজপেপটোন-এ পরিণত করে। রেনিন দুগ্ধ আমিষ কেসিনকে প্যারাকেসিনে পরিণত করে।

আমিষ + পানি —->>পেপসিন–>>  প্রোটিওজ + পেপটোন

কেসিন + পানি —>>রেনিন–>   প্যারাকেসিন

প্যারাকেসিন –>>পেপসিন—>  পেপটোন

অর্ধপাচিত এ খাদ্য অম্লীয় কাইম-এ পরিণত হয় এবং ধীরে ধীরে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে। পাকস্থলির প্রাচীর থেকে গ্র্যাস্ট্রিক লাইপেজ নামক এনজাইম নিঃসৃত হয়। প্রশমিত অবস্থায় এটি চর্বিকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল-এ পরিণত করে। পাকস্থলির পাইলোরিক প্রান্তে অবস্থিত স্ফিংক্টার (sphincter = পেশির বেড়ী যা ছিদ্রপ্রথকে বেষ্টন করে থাকে) পাকস্থলি থেকে ডিওডেনামে খাদ্যের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে।

এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আমাদের পরবর্তী আর্টিকেল যান

আরও বিস্তারিত জানান ইংরেজি আর্টিকেল থেকে National Library of Medicine



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

five + five =