উপকারী ভূমিকা ঃ মাইগ্রেশনের ফলে পাখি আবহাওয়ার প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা পায়; বিচিত্র ও পর্যাপ্ত আহার পায় এবং পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা হ্রাস পায়; গ্রীষ্মে স্বদেশ ভূমিতে এসে উপযোগী ও নিষ্কন্টক জনন ক্ষেত্র ফিরে পায়, কম কষ্টে পর্যাপ্ত আহার পায়, তখন জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটে। বিভিন্ন প্রজাতির মিলনে জিন সংযুক্তির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
অপকারী ভূমিকা : মাইগ্রেশন পাখির জন্য বেশ বিরূপ প্রভাব ফেলে, যেমন- অনেক সময় বিরতিহীন
ভ্রমণে ক্লান্ত অসংখ্য পাখি সমুদ্রে পড়ে মারা যায়; আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তনে, যেমন- প্রবল বর্ষণ, তুষারপাত ও ঝড়ে পড়ে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী পাখি মৃত্যুবরণ করে; তরুণ পাখিরা দূর পরবাসে অনেক প্রাকৃতিক শত্রুর মুখোমুখি হয়; বৈদ্যুতিক তার ও লাইট হাউজ ছাড়াও অগনিত পাখি মানুষের শিকারে পরিণত হয়; এবং মানুষের শিকারে পরিণত হয়ে অকালে প্রাণ হারায়।
বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি :
বাংলাদেশ প্রধানত শীতকালে পরিযায়ী পাখির আগমনে মুখরিত থাকে। সারা বছরই পরিযায়ী পাখির আনাগোনা অব্যাহত থাকে। এসব পাখি দেশের পাখি হতে পারে, আবার বিদেশিও হতে পারে। সময়কাল ভেদে এগুলো গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন পাখি নামে পরিচিত। কিছু পাখি আছে যা অন্যদেশে যাওয়ার আগে দুএকদিন বাংলাদেশে অবস্থান করার
পর নির্দিষ্ট দেশে উড়াল দেয়। এসব পাখি ট্রানসিয়েন্ট পরিযায়ী ।
বাংলাদেশে যে সব বিদেশি পাখি পরিযায়ী হয় তার বেশির ভাগ আসে হিমালয় ও তার বাইরে থেকে। অনেক প্রজাতির আগমন ঘটে ইউরোপ ও দূরপ্রাচ্য (যেমন সাইবেরিয়া) থেকে। অর্থাৎ ইউরেশিয়া থেকে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও -পূর্ব এশিয়ায় শীতে পাখি পরিযায়ী হয়। শরৎ ও বসন্তকালেও কিছু পাখির যাতায়াত চোখে পড়ে। আর দেশি পাখির
পরিযান সারা বছরই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হতে থাকে। বাংলাদেশের প্রায় ৫০০ প্রজাতির স্থায়ী পাখি রয়েছে, অস্থায়ী বা বিদেশি পাখি প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৩০০। অনেক বিদেশি পরিযায়ী পাখি রয়েছে যা স্বদেশে বিপন্ন বা অতিবিপন্ন হয়ে আছে এমন পাখিও বাংলাদেশে এসে কিছু দিনের জন্যে হলেও স্বাচ্ছন্দে কাটিয়ে যায় (যেমন-Spoon- billed Sandpiper)। বাংলাদেশে হাঁস, রাজহাঁসসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলচর পাখিসহ অসংখ্য শিকারি পাখিও (চিল,বাজ) পরিযায়ী হয় । এসব পাখি দেশের বড় বড় হাওড়, নদী ও উপকূল জুড়ে বিস্তৃত থাকে । লক্ষ লক্ষ সদস্যের দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখির পাশাপাশি অদৃশ্য পতঙ্গভুক্ত পাখিরা বন-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। অক্টোবর-মার্চ মাস পর্যন্ত মাইগ্রেটরি পাখি দেখার ধূম পড়ে যায়। সমস্ত হাওর এলাকা পরিযায়ী পাখির জন্য সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে, আইনে বিশেষ বিধান করে এগুলো সুরক্ষারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপসংহার ঃ পাখি প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি। এদের পরিযান হচ্ছে একদিকে প্রাণিজগতের অন্যতম সর্বাপেক্ষা চমকপ্রদ, অন্যদিকে, অন্যতম রহস্যময় ঘটনা। শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ তা অবলোকন করেছে, নানাভাবে ব্যাখ্যা করেছে। একবিংশ শতাব্দীতেও এর রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি। কিসের আশায় ও কিসের নেশায় পাখি পরিযায়ী হয়, প্রাকৃতিক নির্বাচনের সেই নিগূড় রহস্য উন্মোচন করতে পারলে হয়তো মানব প্রজাতিও তা কাজে লাগাতে
পারবে।