পাখিমাত্রই অপত্য যত্নে সমৃদ্ধ প্রাণী । সুস্পষ্ট ও সৃশৃঙ্খল অপত্য যত্নে পাখি একটি বৈশিষ্ট্যমন্ডিত প্রাণিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত । কোনো প্রাণীর জনন সাফল্য নির্ভর করে সুস্থ-সবল সন্তানকে প্রকৃতির বুকে স্বাবলম্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। অন্যদিকে, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনার অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে প্রত্যেকটি প্রাণী সম্বন্ধে তার বাস্তুগত ও প্রজননিক যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা রাখা। এখানে ছোট পানকৌড়ি সংক্ষেপে পানকৌড়ি (Little cormorant,
Phalacrocorax niger) পাখির অপত্য যত্নের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো।

বাংলাদেশে পানকৌড়ির জননকাল মে-অক্টোবর । তবে জুলাই-আগস্ট মাসে নীড় বাঁধার হার সবচেয়ে বেশি হয়। জননকালে এদের গায়ের ও মুখমন্ডলের পালকের রংয়ে পার্থক্য দেখা দেয়। পানকৌড়িরা যেখানে বাসা বাঁধে সেখানে ছোট বক (Egretta garzetta) ও কানি বক (Ardeola grayii)-ও বাসা বাঁধে। প্রধানত আম ও বট গাছ, সঙ্গে কড়ই, শেওড়া গাছেও বাসা বাঁধে। পানির ধারে ও সহজে মানুষের হাতের নাগালে পাওয়া যায় না এমন উচ্চতায় (৬-১0 মিটার) বিভিন্ন গাছের খড়কুটা দিয়ে অর্থাৎ বাসা বাঁধার জায়গার আশেপাশে যে সব খড়কুটা পাওয়া যায় তা দিয়ে জোড়ের উভয় সদস্য বাসা বাঁধে। বাসার গড় ব্যাস প্রায় ১৫ সে.মি., গভীরতা প্রায় ৫.৫ সে.মি.। দলবেঁধে বাসা বানানোয় অন্য কোনো ক্ষতিকর প্রাণী সহজে কাছে যাওয়ার সাহস পায় না। কাছে গেলেও সমবেত চিৎকারে পালিয়ে যায় । পাঁচ থেকে এগারো দিনের মধ্যে বাসা বাঁধা শেষ হলে পানকৌড়ি একদিন পর পর ২-৬ টি সাদা বা নীলচে-সাদা ডিম পাড়ে। তবে প্রথম ডিম পাড়ার পর পরই ডিমে তা দিতে শুরু করে। স্ত্রী-পুরুষ উভয় সদস্যই তা’ দেয়ার কাজ ভাগাভাগি করে নেয়। দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে ডিম ফুটে শাবক বেরিয়ে আসে।

পানকৌড়ি শান্তশিষ্ট পাখি। দলবদ্ধ থাকায় শিকারী পাখির হামলা প্রতিরোধ সহজ হয়। কিন্তু দুরন্ত কিশোরদের মোকাবিলা করা সম্ভব হয় না। ডিম ও শাবক নষ্ট হওয়ার প্রধানতম কারণ হচ্ছে খেলাচ্ছলে বা ঘরে পোষার জন্য শাবক চুরি, আর খাওয়ার জন্যে ডিম চুরি। প্রচন্ড ঝড়-তুফানেও ডিম ও শাবকের ক্ষতি হয়। এ প্রতিকূল পরিবেশেও শাবকদের যত্ন নেওয়ার কাজে স্ত্রী-পুরুষ উভয় পাখি যথাসাধ্য সচেষ্ট থাকে । শুধু তাই নয়, শাবকের শরীর প্রথম সাত দিন একেবারে নগ্ন থাকে । শরীরের সংবেদনশীল ত্বক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য বাসা নির্মাণের মাল-মসলার মধ্যে সরু আঁশ, শুকনো পাতা ইত্যাদি থাকে, সে সঙ্গে চলে বিরামহীন শাবকগুলোকে আগলে রাখার চেষ্টা করা। রাতে সারাক্ষণ স্ত্রী পাখি বাসায় বসে থাকে, পুরুষ পাখি বাসার কাছাকাছি ডালে বসে পাহাড়ায় থাকে । ১৫-২০ দিন পর্যন্ত পানকৌড়ি শাবকদের আগলে রাখে। এক মাসের মধ্যেই পানকৌড়ির শাবক নীড় ছেড়ে স্বাধীন জীবন যাপনে সক্ষম হয়ে উঠে। 

ReplyForwardAdd reaction


About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

four × four =