দম্পতির পুরুষ সদস্যে বাচ্চা না হওয়ার সমস্যার মূলে রয়েছে নিচে বর্ণিত শুক্রাণুগত বিশৃঙ্খলা ।
১. শুক্রাণুর অনুপস্থিতি (Absence of sperm) ঃ সিমেনের মধ্যে শুক্রাণুর অনুপস্থিতির আরেক নাম অ্যাজুওস্পার্মিয়া (azoospermia)। পাঁচ শতাংশ পুরুষে অনুর্বরতার মূল কারণ হচ্ছে আদৌ শুক্রাণু সৃষ্টি না হওয়া। অনেক ক্ষেত্রে আবার সৃষ্টি উৎপন্ন হলেও শুক্রাশয় ও সেমিনাল ভেসিকলের মধ্যবর্তী নালি ক্ষতিগ্রস্ত বা বন্ধ থাকলেও এমনটি হতে পারে। বিভিন্ন যৌনরোগ বা অন্য কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কিংবা জন্মগতভাবেও নালি বন্ধ থাকতে পারে। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে শুক্রাণুর আঘাতপ্রাপ্তি, বয়ঃসন্ধিকালে মাম্পস ভাইরাসের সংক্রমণ, হরমোনগত সমস্যা প্রভৃতি। অস্বাভাবিক বীর্য স্খলনেও সিমেনে শুক্রাণু পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে দেহের বাইরে স্খলিত না হয়ে কোনো কারণে বীর্য নিজদেহে পশ্চাৎমুখি হয়ে মূত্রথলিতে পতিত হয়। ফলে অ্যাজুওস্পার্মিয়া দেখা দেয়।
২. কম সংখ্যক শুক্রাণু (Low sperm count) : ৯০%-এর বেশি পুরুষে অনুর্বরতার প্রধান কারণ হচ্ছে সিমেনে কম সংখ্যক শুক্রাণুর উপস্থিতি। এর প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও ধারণা করা হয়ে থাকে যে প্রস্টেট গ্রন্থির সংক্রমণ, স্থূলতা, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ বা ধূমপান, মাদক সেবন, শুক্রাশয় বেশি সময় ধরে ক্ষতিকর রাসায়নিক বা প্রচন্ড গরমে অবস্থান করা, হরমোনাল গন্ডগোল প্রভৃতি কারণ কম সংখ্যক শুক্রাণু সৃষ্টির জন্য দায়ী।
৩. অস্বাভাবিক শুক্রাণু (Abnormal sperm) : স্খলিত শুক্রাণুর কিছু শুক্রাণু দুই লেজবিশিষ্ট, লেজ বা মস্তক বিহীন কিংবা অস্বাভাবিক গড়নের হতে পারে। এতে অনুর্বরতায় তেমন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু এ ধরনের শুক্রাণুর আধিক্য হলে উর্বরতা কমে যায়। এমন অস্বাভাবিকতার কারণ অজ্ঞাত হলেও হরমোনঘটিত সমস্যা এবং কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণকে দায়ী করা হয়ে থাকে।
৪. স্বতঃঅনাক্রম্যতা (Autoimmunity) : পুরুষে ৫-১০% অনুর্বরতার কারণ হিসেবে নিজের শুক্রাণুর প্রতি অনাক্রম্য সাড়াকে দায়ী করা হয়। নিজ দেহে উৎপন্ন অ্যান্টিবডি নিজের শুক্রাণুকেই আক্রমণের ফলে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায়। এর কারণ জানা যায়নি।
৫. শুক্রাণুর অকালপতন (Premature ejaculation) ঃ নারী যৌনাঙ্গের অভ্যন্তরে পুরুষ যৌনাঙ্গ প্রবেশের আগেই শুক্রাণুর পতন ঘটে। অভিজ্ঞতা ও অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এ অবস্থা কাটিয়ে উঠা সম্ভব ।
৬. পুরুষত্বহীনতা (Impotence) ঃ যৌনাঙ্গের দৃঢ়তা রক্ষায় ব্যর্থতাও অন্যতম প্রজননিক সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। তবে উপযুক্ত মনোবৈজ্ঞানিক উপদেশ এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হতে পারে।