পুরুষে প্রজনন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা

জীববিজ্ঞান

টেস্টোস্টেরণ পুরুষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন। জননক্ষম পুরুষে এটি নিয়মিত শুক্রাশয়ে উৎপন্ন ও রক্তস্রোতে প্রবাহিত হয়ে দেহ সুস্থ রাখে। এ হরমোন পুরুষে গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের (পেশল দেহ,দাড়ি-গোঁফের প্রকাশ, কণ্ঠ পুরু ও স্বর গভীর করে তোলে, যৌনাঙ্গ সুগঠিত ও বড় করে) প্রকাশ ঘটায়। এ হরমোন যৌন উদ্দীপনাকে তাড়িত করে এবং FSH (Follicle Stimulating Hormone)-এর সহযোগিতায় শুক্রাণু সৃষ্টিতে উদ্দীপনা যোগায়।

বয়স্ক পুরুষে যাদের যৌনশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, কিছু গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যের বিলোপ ঘটে তারা হরমোন প্রতিস্থাপনার মাধ্যমে পুনর্যৌবন ফিরে পেতে চায় কিন্তু এতে হিতে বিপরীত ফল হয়, প্রস্টেটগ্রন্থিরক্যান্সারওঅ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস- এর সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।

সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষে টেস্টোস্টেরণের ভারসাম্যহীনতা প্রকট হয়ে উঠে। গড়ে ৪০-৫০ বছরের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা নিচে বর্ণিত লক্ষণগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট হতে থাকে।

পুরুষে প্রজনন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা

১। অবসাদগ্রস্ত ও দুর্বল অনুভব ঃ এ লক্ষণ নানাভাবে প্রকাশ হতে পারে, যেমন- খাওয়ার পর ক্লান্তিবোধ,
স্বাভাবিকের চেয়ে কম কাজ করতে পারা, সারাদিনের সামগ্রিক কাজের পারফরমেন্স নিচুমাত্রার এবং সারাদিন অবসাদগ্রস্ত থাকা। তা ছাড়া, মিলন আকাঙ্খা কমে যাওয়া, ঘাম হওয়া, গায়ে ব্যথা হওয়া, যৌনাঙ্গ কর্মক্ষম না হওয়া প্রভৃতিও টেস্টোস্টেরণ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফল।

২। অকালে বুড়িয়ে যাওয়া ঃ দৈহিক ও মানসিকভাবে বুড়িয়ে যাওয়া এ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফল । চুল পাতলা বা ধূসর হয়ে যাওয়া, হাড়ের ঘনত্ব ও চামড়ার ঔজ্জ্বল্য কমে যাওয়া, কোমড়ে চর্বি জমা, স্মরণ শক্তি কমে যাওয়া, ঘুম না হওয়া প্রভৃতি এ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে ঘটে।

৩। অসুখিভাব ঃ টেস্টোস্টেরণ হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় নিজের প্রতি বিশ্বাস ও সম্মানবোধ কমে যায়। দুশ্চিন্তা, স্নায়ুদৌর্বল্য বেড়ে যাওয়া, বিষণ্নতায় ভোগা, কোনো ধরনের উদ্যোগ বা প্রতিযোগিতাহীনতার প্রকাশ, উত্তেজিত হয়ে উঠা প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।

৪। যৌন উত্তেজনা কমে যাওয়া : টেস্টোস্টেরণের ভারসাম্যহীনতায় যৌন উত্তেজনা কমতে কমতে একেবারে কমে যায়। এমনকি যৌনাঙ্গ উত্থানেও অক্ষম হয়ে পড়ে। পুরুষে টেস্টোস্টেরণের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৩৫০-১২৩০ ন্যানোগ্রাম [এক ন্যানোগ্রাম = এক গ্রামের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ]। এভাবে টেস্টোস্টেরণ হরমোনের অভাবে যৌন উত্তেজনা হ্রাস, যৌনাকাঙ্খার অনুপস্থিতি ও পৌরষত্বের প্রকাশহীনতাকে অ্যান্ড্রোপজ (andropause) বলে। অ্যান্ডোপজকে নারীর মেনোপজ (menopause) এর সঙ্গে তুলনা করা হয়।

পুরুষে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণ –

টেস্টোস্টেরণ হচ্ছে পুরুষের প্রধান হরমোন। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, পুরুষে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার মূলে রয়েছে দেহে এস্ট্রোজেন নামক নারী হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। এর প্রভাবে মূত্র সমস্যা, কম যৌন আচরণ, প্রস্টেট জটিলতা, অবসাদসহ নানাবিধ স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। দেহে এস্ট্রোজেনের প্রাধান্য বেড়ে যাওয়ারও কিছু কারণ রয়েছে। নিচে কয়েকটি কারণ ব্যাখ্যা করা হলো।

১। স্টেরয়েড গ্রহণ ঃ স্টেরয়েড হচ্ছে সংশ্লেষিত বা কৃত্রিম পুরুষ হরমোন। যাদের টেস্টোস্টেরণের মাত্রা অতিরিক্ত কম চিকিৎসকরা তাদের স্টেরয়েড গ্রহণে পরামর্শ দেন। কিন্তু স্টেরয়েড গ্রহণে ভাল হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতির সম্মুখীন বেশি হয়, কারণ পরিমিত স্টেরয়েড কেউ গ্রহণ করে না। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ, যকৃত ও বৃদ্ধ জটিলতা, অনিয়ন্ত্রিত রাগ, শুক্রাশয়ের আকার ছোট হয়ে যাওয়া প্রভৃতি দেখা দেয় ।

২। পরিবেশ ঃ পরিবেশ দূষণের বিষয়টি অনেকেরই ধারণার বাইরে। কিন্তু বাতাসে বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি হরমোন ক্ষরণে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। বড় বড় ও বায়ু দূষণে দূষিত শহর এলাকায় হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। পরিবেশে পেট্রোকেমিক্যাল দূষণ হলে টেস্টোস্টেরণ ক্ষরণের মাত্রা কমে যায় ।

৩। আহার ঃ হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় খাদ্য এক বিরাট ভূমিকা পালন করে। আমরা প্রতিদিন যে আহার গ্রহণ করি তার মধ্যে মুরগি ও গরুর মাংস, ফল, দুধ ও ডিমে এস্ট্রোজেন থাকে। মোটা-তাজা দেখানোর জন্য ফার্মের প্রাণিদেহে কৃত্রিম এস্ট্রোজেন প্রয়োগ করা হয়। ফলের উপর যে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক ছিটানো হয় তাতেও থাকে কৃত্রিম এস্ট্রোজেন । অর্গানিক খাদ্য নামে যা পাওয়া যায় সেগুলোতে এস্ট্রোজেন জাতীয় পদার্থ প্রয়োগ হয় না। অতএব, খাদ্যাভ্যাসও টেস্টোস্টেরণের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

৪। বয়স বৃদ্ধি ঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরণ কমে যায়। একই সাথে যদি এস্ট্রোজেন প্রয়োগিত আহার করে, এবং দূষিত বাতাসের নগরিতে বাস করে তাহলে দেহে এস্ট্রোজেন বৃদ্ধি ঠেকানো অসম্ভব । পরবর্তী বয়সে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা স্বভাবতই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রতিরোধ :-

টেস্টোস্টেরণের ঘাটতি মেটাতে অনেক চিকিৎসক প্রতিস্থাপনীয় কৃত্রিম টেস্টোস্টেরণ গ্রহণের পরামর্শ দিলেও শেষ পর্যন্ত এর অপব্যবহারের ফলে পুরুষেরা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়। তবে জীবন অভ্যাস, খাদ্যাভ্যাস, মেজাজ ও দৈনিক কাজকর্মের সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত বিন্যাস অনুযায়ী পরিচালিত হলে টেস্টোস্টেরণের ভারসাম্যহীনতা দূরীভূত হতে পারে। 



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

5 × two =