বংশগতির ক্রোমোজোম তত্ত্ব

জীববিজ্ঞান

মেণ্ডেল তার সংকরায়ণ পরীক্ষার ফল থেকে বুঝতে পারেন যে কোনো জীবের প্রতিটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একটি উপাদান দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হয়। এ উপাদান জীবদেহে জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে এবং হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট গঠনকালে ঐ উপাদান সংখ্যায় অর্ধেক হয়ে যায়। কিন্তু উপাদানটি কী , গ্যামেটের কোথায় এটি অবস্থিত এবং এসবউপাদান কীভাবে বংশপরম্পরায় বৈশিষ্ট্যগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে—এসব বিষয়ে মেণ্ডেল অবগত ছিলেন না।

১৯০০ সালে মেণ্ডেল তত্ত্বের পুনরাবিষ্কারের পর ক্রোমোজোম ও মেণ্ডেলের উপাদানের মধ্যে বেশ কিছু মিল দেখতে পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি ক্রোমোজোমের আকৃতি ও দৈর্ঘ্য আলাদা আলাদা এবং দেহকোষে জোড়ায় জোড়ায় থাকে। জোড়ার একটি পিতার কাছ থেকে, অপরটি মায়ের কাছ থেকে পাওয়া। অর্থাৎ মানুষের দেহকোষের ৪৬টি ক্রোমোজোমের ২৩টি আসে পিতার কাছ থেকে বাকি ২৩টি মায়ের কাছ থেকে। ২৩টি করে ক্রোমোজোম শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মধ্যে থাকে, দুটি কোষের মিলনে ৪৬টি ক্রোমোজোম নিয়ে জাইগোট কোষের সৃষ্টি হয়। মেন্ডেল একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একজোড়া উপাদানের কথা বলেছিলেন, যার একটি পিতা ও একটি মাতার কাছ থেকে আসে, যেমনটি ক্রোমোজোমের ক্ষেত্রেও ঘটে থাকে।

বংশগতির ক্রোমোজোম তত্ত্ব

(১৯০২ সালে বিজ্ঞানী সাটন (S. W. Sutton) ও বোভেরি (T. Bovery) পৃথকভাবে ক্রোমোজোম ও মেণ্ডেলের উপাদানের মধ্যে মিলের কথাটি সুস্পষ্ট উল্লেখ করেন। এ নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে বিভিন্ন জীব-জন্তুর উপর গবেষণা চলেছে। পরে জানা গেল যে মেন্ডেলের উপাদান বা জিনের অবস্থান ক্রোমোজোমে, তাই বংশানুক্রমিক গতিপ্রকৃতির বিষয়ে ক্রোমোজোম আর উপাদানের মধ্যে এত সাদৃশ্য। গবেষণার ফলাফল থেকে তাঁরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে জিন ও ক্রোমোজোম অনেক দিক দিয়ে একই রকম আচরণ করে। তা ছাড়া বংশগতি নির্ধারণের সময় জিন ও ক্রোমোজোম সমান্তরাল আচরণ প্রদর্শন করে। একেই বংশগতির ক্রোমোজোম তত্ত্ব বলা হয় ।

সাটন ও বোভেরি প্রবর্তিত তত্ত্বের আলোকে বংশগতির ক্রোমোজোম তত্ত্বের মূল ভিত্তি নিচে উল্লেখ করা হলো।

১.একমাত্র শুক্রাণু ও ডিম্বাণুই যেহেতু বংশপরম্পরার সেতু হিসেবে কাজ করে তাই সমস্ত বংশানুক্রমিক বৈশিষ্ট্য এগুলোর মধ্যেই বাহিত হয় ।

২.জাইগোট সৃষ্টিতে যেহেতু শুক্রাণুর মস্তকে অবস্থিত নিউক্লিয়াস অংশ গ্রহণ করে, তাই ধারণা করা যায় যে
জননকোষের নিউক্লিয়াসই বংশগতি পদার্থ বহন করে।

৩. নিউক্লিয়াসে (ক্রোমোজোম থাকে, অতএব ক্রোমোজোমই বংশগতি পদার্থ বহন করে।

8. প্রত্যেকটি ক্রোমোজোম বা ক্রোমোজোম-জোড় নির্দিষ্ট জীবের পরিস্ফুটনে সুনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে। একটি ক্রোমোজোম বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট হলে জীবদেহে অঙ্গহানি ও কার্যগত অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

৫. বংশগতি পদার্থের মতো ক্রোমোজোমও জীবদেহে আজীবন ও বংশপরম্পরায় তাদের সংখ্যা, গঠন ও স্বকীয়তা বজায় রাখে। কোনোটাই হারিয়ে যায় না বা একীভূত হয় না, বরং একক-এর মতো আচরণ করে।

৬. ডিপ্লয়েড (2n) কোষে (দেহকোষে) ক্রোমোজোম ও
জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে।

৭. ক্রোমোজোমে সুনির্দিষ্ট অবস্থানে (লোকাসে) জিন অবস্থান করে।

৮. মিয়োসিসের সময় সমসংস্থ ক্রোমোজোম-জোড় ও জিন স্বাধীনভাবে পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে জননকোষে প্রবেশ করে।

৯. একটি গ্যামেট একসেট ক্রোমোজোম ও অ্যালিল বহন করে।

১০. নিষেক প্রক্রিয়ায় শুক্রাণু ও ডিম্বাণু নিউক্লিয়াসের একীভবনের মাধ্যমে জাইগোট সৃষ্টির ফলে অপত্য জীবদেহে ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম ও জিনসংখ্যা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। 



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

2 + 2 =