ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি
অথবা, ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
সবচেয়ে পুরাতন ও প্রভাবশালী সংবিধান হলেও ব্রিটিশ সংবিধান মূলত অলিখিত। তাই মুনরো (Munro)ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রকে সব শাসনতন্ত্রের মাতৃস্থানীয় বলে বর্ণনা করেছেন। লিখিত না হলেও ব্রিটিশ সংবিধান গড়ে উঠেছে
কতকগুলো উৎসের ভিত্তিতে। তাই ব্রিটিশ সংবিধানের আলোচনায় এর উৎসসমূহের আলোচনা অতি গুরুত্ব বহন করে। ব্রিটিশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে ব্রিটিশ সরকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. কমন আইন : কমন আইন ব্রিটিশ সংবিধানের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। ব্রিটেনের চিরাচরিত রাজনীতির উপর ভিত্তি করে অলিখিত কমন আইন গড়ে উঠেছে। এসব আইন পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণমুক্ত অথচ শাসনব্যবস্থার সর্বত্র গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃত হয়েছে।
২. প্রথাগত আইন : ব্রিটেনের প্রথাগত আইন ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষক এবং শাসন ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। প্রথাগত আইন ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। প্রথাগত আইন হলো কতকগুলো প্রচলিত ও প্রয়োজনীয় শাসনতান্ত্রিক প্রথা ও রাজনীতি যা শতাব্দীব্যাপী চলতে চলতে আন্দোলনের মাধ্যমে আইন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
৩. অলিখিত সংবিধান : ব্রিটিশ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর অধিকাংশই অলিখিত। সংবিধানের এক বিরাট অংশ জুড়ে আছে সাধারণ আইন ও প্রথাগত বিধান। তবে ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত হলেও এর সকল অংশই অলিখিত নয়।
৪. বিধিবদ্ধ আইন : ব্রিটিশ সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো বিধিবদ্ধ আইন। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তার সার্বভৌম ক্ষমতা বলে সাধারণ আইনের সাথে সাথে শাসনতান্ত্রিক আইন প্রণয়নের
ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়।
৫. বিবর্তনশীলতা : ব্রিটিশ সংবিধান বিবর্তনশীল প্রথাগত বিধান, সংবিধানিক রীতিনীতি, পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইন, বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত ইত্যাদির মাধ্যমে এ সংবিধানের নিরন্তন পরিবর্তন ঘটেছে। এটা কোনো গোষ্ঠী, সংসদ বা সংবিধানের পরিষদ কর্তৃক রচিত হয়নি।
৬. দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা : ব্রিটেনে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল থাকলেও দুইটি মাত্র দলই প্রাধান্য অর্জন করতে সামর্থ্য হয়েছে। তাই ব্রিটেনের দলীয় ব্যবস্থাকে দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা বলে অভিহিত
করা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মূলত ব্রিটিশ সংবিধানের বহুবিধ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনো একটি নির্দিষ্ট দলিল অথবা আইনের মধ্যে ব্রিটিশ সংবিধানের সকল উৎসের সন্ধান পাওয়া যাবে না।
ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি হয়নি, গড়ে উঠেছে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, “ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি হয়নি, গড়ে উঠেছে” -মন্তব্য কর।
অথবা, “ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি হয়নি, ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে” -উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের শাসনতন্ত্রের উৎপত্তির ইতিবৃত্ত এবং ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার উৎপত্তির ইতিহাস এক নয়। তবে এ শাসন ব্যবস্থায় অন্যতম প্রধান দলিল সংবিধান, যা অলিখিত। এ কারণে অনেকেই এ সংবিধানের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। আবার কেউ কেউ প্রশংসা করেছেন।
ব্রিটিশ সংবিধান তৈরি হয়নি গড়ে উঠেছে : ব্রিটিশ সংবিধান হলো অলিখিত। এটি বিভিন্ন ক্রমবিকাশের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে।ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের উৎসসমূহকে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) শাসনতান্ত্রিক আইন ও (খ) শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি।
(ক) শাসনতান্ত্রিক আইন : নিম্নে শাসনতান্ত্রিক আইনগুলো বর্ণনা দেওয়া হলো :
১. ঐতিহাসিক সনদ ও চুক্তি : ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র একাধিক সনদ ও চুক্তির সমন্বয় গঠিত। যার ফলে শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক এবং নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও কর্তব্যসমূহ নির্ধারিত হয়। ১২১৫ সালের মহাসনদ ১৬২৮ সালের অধিকার বিল ইত্যাদি শাসনতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
২. বিধিবদ্ধ আইন : ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের ২য় গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো বিধিবদ্ধ আইন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতাবলে সাধারণ আইনের সাথে সাথে শাসনতান্ত্রিক আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে উদ্যোগ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ১৬৭৯ সালে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সম্পর্কে হেবিয়াস কপার্স আইন এবং ১৭০১ সালে সেটেলমেন্ট আইন পাস হয়।
৩. বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত : বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তসমূহ ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের উৎস বলে বিবেচিত হয়। আদালত সনদ ও বিধিবদ্ধ আইনসমূহের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নতুন শাসনতান্ত্রিক আইন সৃষ্টি করে।
৪. প্রথাগত আইন : ব্রিটিশ সংবিধানের উল্লেখযোগ্য উৎস| হলো প্রথাগত আইন। ব্রিটেনে প্রথাগত আইন ব্যক্তি স্বাধীনতার রক্ষক এবং শাসনব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত।
৫. অন্যান্য উৎস : এছাড়া পার্লামেন্ট সংক্রান্ত আইন ও প্রথা, রাজার বিশেষ ক্ষমতা এবং বিজ্ঞ ব্যক্তিদের রচনাও ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।
(খ) শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি : শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের সর্বাধিক উলেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শুধু আইনের পদ্ধতি দ্বারা এর শাসনকার্যের সঠিক রূপ ধরা যায় না। এ কারণে আইনগত কাঠামোর সাথে সাথে শাসনতান্ত্রিক প্রথা ও রীতিনীতিগুলো আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। জে. এস.মিল এর মতে, ”শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি হলো শাসনতন্ত্রের অলিখিত বিধান। এগুলো হলো রাজার সাথে মন্ত্রিসভার সম্পর্ক, মন্ত্রিসভার সাথে পার্লামেন্টের সম্পর্ক। পার্লামেন্ট অধিবেশন পার্লামেন্টের অভ্যন্তরীণ কার্যপদ্ধতি, জনগণের অধিকার প্রভৃতি বহু গুরুত্বপূর্ণ শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতির দ্বারা পরিচালিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ব্রিটিশ সংবিধানের বহুবিধ উৎস রয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট দলিল অথবা আইনের মধ্যে ব্রিটিশ সংবিধানের সকল উৎসের সন্ধান পাওয়া যাবে না। এ সংবিধান হলো প্রথা ও দৈবের সন্তান, যার গতিধারা কখনও দৈব ঘটনা, আবার কখনও উচ্চ পরিকল্পনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবিধান সম্পূর্ণ অলিখিত নয় কেন? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ব্রিটিশ সংবিধান লিখিত হওয়ার কারণ কি? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ব্রিটিশ সংবিধান সম্পূর্ণ অলিখিত নয় কেন? সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
ব্রিটেন হলো একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দেশ। তবে ব্রিটেন বিশাল দেশ নয় বলে বিভিন্ন অংশের
জনগোষ্ঠীর মধ্যে আশা আকাঙ্ক্ষার সামঞ্জস্য আনার জন্য লিখিত সংবিধানের দরকার হয়নি। প্রথাগত নিয়ম, রীতিগত ও অতীতের ঐতিহ্য প্রভৃতির মধ্যে ব্রিটিশ সংবিধানের মূলনীতিগুলো অবিন্যস্ত ভাবে রয়েছে। তাই একে অলিখিত সংবিধান বলা হয় । তবে এ সংবিধান পুরোপুরি অলিখিতও নয়।
ব্রিটিশ সংবিধান সম্পূর্ণ অলিখিত না হওয়ার কারণ : সাধারণত ব্রিটেনের সংবিধানকে অলিখিত বলে আখ্যা দেওয়া হলেও এর সবটাই অলিখিত নয়। কারণ লিখিত সংবিধানের মানে সম্পূর্ণ লিখিত হতে পারে না। লিখিত সংবিধানের পরিধি কয়েকটা পৃষ্ঠা মাত্র। কিন্তু একটা দেশকে শাসন করতে হলে অসংখ্য আইন-কানুন দরকার। যার বহু বিষয় অলিখিত আকারে থেকে যায়। ব্রিটিশ সংবিধানের অনেক মৌলিক নীতি ও নিয়ম লিখিত আকারে আছে। তবে তা কোথাও একটি মাত্র দলিলের| মধ্যে আবদ্ধ হয়ে নেই। ব্রিটিশ সংবিধানের অনেক মৌলিক নীতি | ও নিয়ম লিখিত আকারে আছে। ব্রিটিশ সংবিধানের লিখিত | নিয়মসমূহ সংবিধি, বিচারবাদের সিদ্ধান্ত ও বিচার বিভাগের | রায়ের মধ্যে পাওয়া যাবে। বর্তমান ব্রিটিশ সংবিধানের একটা বৃহৎ অংশ লিখিত। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে | ব্রিটিশ সংবিধানের বহু অংশ বর্তমানে লিখিত আকারে নিচ্ছে যা আগে ছিল না। অবশ্য মূল কাঠামোও এখনো অলিখিত।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ব্রিটিশ সংবিধান মূলত অলিখিত হলেও আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা
যায়, ব্রিটিশ সংবিধান সম্পূর্ণ অলিখিত নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অদূর ভবিষ্যতে ব্রিটিশ সংবিধানের অলিখিত অংশের কলেবর আরো স্ফীত হয়ে উঠবে।
গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত কেন? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত হওয়ার কারণগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, ব্রিটিশ সংবিধানকে বহুলাংশে অলিখিত সংবিধান বলা হয় কেন?
অথবা, গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান সম্পূর্ণ অলিখিত? সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকা : আধুনিক বিশ্বের সংবিধানসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংবিধান হচ্ছে গ্রেট ব্রিটেনের। এইসংবিধান সম্পর্কে Munro ( মুনরো) মন্তব্য করেন, “The British • constitution is the mother of all constitutions.” তাই এ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য অন্যান্য সংবিধানের থেকে কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। যুগ যুগ ধরে ব্রিটেনের সংবিধান টিকে এবং অন্যান্য দেশের সংবিধানের উপর প্রত্যক্ষ ও পরাক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করছে।
ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত কেন : নিয়ে ব্রিটিশ সংবিধান অলিখিত হওয়ার কারণসমূহ ব্যাখ্যা করা হলো :
১. ঐতিহাসিক কারণ : ব্রিটিশ সংবিধান এক দিনে তৈরি হয়নি; বরং বিভিন্ন সময়ের ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনের ধারায়
বিকাশ লাভ করে। ঐতিহাসিক পটভূমি বিশেষণ করলে দেখা যায় যে, সংবিধান রচনার জন্য যে পরিবেশ পরিস্থিতি প্রয়োজন তা ব্রিটিশ ইতিহাসে ছিল অনুপস্থিত। ব্রিটেন কখনও কোনো দেশের উপনিবেশ বা পরাধীন ছিল না। ফলে কারও অধীনতা হতে মুক্ত হয়ে নিজস্ব সংবিধান তৈরির প্রয়োজন ব্রিটেনের হয়নি।
২. বিপ্লব বিদ্রোহ অনুপস্থিত : রাজনৈতিক আদর্শ পরিবর্তনের ফলে সংবিধান লিখিত আকারে প্রকাশিত হতে
পারে। যেমন চীনে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সফল আন্দোলনের ফলে তারা নতুন সমাজে সংবিধান প্রণয়ন করে।
ব্রিটেনে এমন কোনো বিপ্লব বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়নি। এর ফলে সংবিধান লেখার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
৩. ইংরেজদের অভিজ্ঞতাবাদী মনোভাব: ইংরেজ জাতি| সর্বদাই অভিজ্ঞতাবাদীর দেশের শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দিক-নির্দেশনা সংবলিত সংবিধানের ব্যাপারেই অধিক উৎসাহী। এ কারণে ইংরেজ জাতি লিখিতভাবে তাদের সংবিধান আদৌ রচনা করেনি।
৪. উৎসগত কারণ : ব্রিটেনের সংবিধান কোনো নির্দিষ্ট সূত্র বা উৎস হতে উদ্ভব হয়নি; বরং সাংবিধানিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্যই এ সংবিধানের ব্যাপক অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার কারণে ব্রিটেনের সংবিধানকে বলা হয় গতিশীল সংবিধান আর উৎসগত ভিন্নতার কারণেই ব্রিটেনের লিখিত শর্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি।
৫. মনস্তাত্ত্বিক কারণ : ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত হওয়ার পেছনে মনস্তাত্ত্বিক কারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রিটেনের জনগণ মানসিকভাবেই গ্রহণ করে নিয়েছে তাদের সংবিধান অলিখিত।
উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত হওয়ার পেছনে উপরিউক্ত কারণগুলো ছাড়াও লর্ড জনসনের অভিমত কমনওয়েলথের সংবিধানের ব্যর্থতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ প্রভৃতি কারণ বিদ্যমান ছিল।
গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত কেন? সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত হওয়ার কারণগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, ব্রিটিশ সংবিধানকে বহুলাংশে অলিখিত সংবিধান বলা হয় কেন?
অথবা, গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান সম্পূর্ণ অলিখিত? সংক্ষেপে লিখ।
ভূমিকা : আধুনিক বিশ্বের সংবিধানসমূহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংবিধান হচ্ছে গ্রেট ব্রিটেনের। এ সংবিধান সম্পর্কে Munro (মুনরো) মন্তব্য করেন, “The British constitution is the mother of all constitutions.” তাই এ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য অন্যান্য সংবিধানের থেকে কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। যুগ যুগ ধরে ব্রিটেনের সংবিধান টিকে এবং অন্যান্য দেশের সংবিধানের উপর প্রত্যক্ষ ও পরাক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করছে।
ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত কেন : নিম্নে ব্রিটিশ সংবিধান অলিখিত হওয়ার কারণসমূহ ব্যাখ্যা করা হলো :
১. ঐতিহাসিক কারণ : ব্রিটিশ সংবিধান এক দিনে তৈরি হয়নি; বরং বিভিন্ন সময়ের ঐতিহাসিক ক্রমবিবর্তনের ধারায় বিকাশ লাভ করে। ঐতিহাসিক পটভূমি বিশেষণ করলে দেখা যায় যে, সংবিধান রচনার জন্য যে পরিবেশ পরিস্থিতি প্রয়োজন তা ব্রিটিশ ইতিহাসে ছিল অনুপস্থিত। ব্রিটেন কখনও কোনো দেশের উপনিবেশ বা পরাধীন ছিল না। ফলে কারও অধীনতা হতে মুক্ত হয়ে নিজস্ব সংবিধান তৈরির প্রয়োজন ব্রিটেনের হয়নি।
২. বিপ্লব বিদ্রোহ অনুপস্থিত : রাজনৈতিক আদর্শ পরিবর্তনের ফলে সংবিধান লিখিত আকারে প্রকাশিত হতে
পারে। যেমন চীনে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সফল আন্দোলনের ফলে তারা নতুন সমাজে সংবিধান প্রণয়ন করে।
ব্রিটেনে এমন কোনো বিপ্লব বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়নি। এর ফলে সংবিধান লেখার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
৩. ইংরেজদের অভিজ্ঞতাবাদী সর্বদাই অভিজ্ঞতাবাদীর দেশের শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দিক-নির্দেশনা সংবলিত সংবিধানের ব্যাপারেই অধিক উৎসাহী। এ কারণে ইংরেজ জাতি লিখিতভাবে
তাদের সংবিধান আদৌ রচনা করেনি।
৪. উৎসগত কারণ : ব্রিটেনের সংবিধান কোনো নির্দিষ্ট সূত্র বা উৎস হতে উদ্ভব হয়নি; বরং সাংবিধানিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্যই এ সংবিধানের ব্যাপক অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। যার কারণে ব্রিটেনের সংবিধানকে বলা হয় গতিশীল সংবিধান আর উৎসগত ভিন্নতার কারণেই ব্রিটেনের লিখিত শর্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি।
৫. মনস্তাত্ত্বিক কারণ : ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত হওয়ার পেছনে মনস্তাত্ত্বিক কারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রিটেনের জনগণ মানসিকভাবেই গ্রহণ করে নিয়েছে তাদের সংবিধান অলিখিত।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ব্রিটেনের সংবিধান অলিখিত হওয়ার পেছনে উপরিউক্ত কারণগুলো ছাড়াও লর্ড জনসনের অভিমত কমনওয়েলথের সংবিধানের ব্যর্থতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণ প্রভৃতি কারণ বিদ্যমান ছিল ।
“ব্রিটেনের কোন সংবিধান নেই”-ব্যাখ্যা কর।
অথবা, “ব্রিটেনের সংবিধানের কোন অস্তিত্ব নেই” উক্তিটি সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর।
অথবা, ব্রিটেনের কোনো সংবিধান নেই? উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
ভূমিকা: গ্রেট ব্রিটেনের শাসনতান্ত্রিক কাঠামো দীর্ঘ কয়েক শতাব্দীর বিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। সমাজ বিবর্তনের পথ ধরেই এ বিবর্তন ও পরিবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের বৈপরীত্যমূলক প্রক্রিয়া উপাদন এক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার সমন্বয়ে তার বিপুলায়তন শাসনতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে উঠেছে।
ব্রিটেনে কোনো সংবিধান নেই : অনেক চিন্তাবিদ মনে করেন গ্রেট ব্রিটেনে কোনো সংবিধান নেই। নিম্নে ব্রিটেনেরসংবিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
বিপক্ষে যুক্তি : অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। এটি
কখনও তৈরি হয়নি। ব্রিটেন কোনো দেশের অধীনে পরাধীন না থাকার কারণে ব্রিটেনে কোনো সংবিধান গড়ে উঠেনি। টকভিল, টমাস পেইন, বার্নার্ডশ প্রমুখ চিন্তাবিদগণের মতে, গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। টকভিল মন্তব্য করেন, “ইংল্যান্ডে সংবিধান বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই”
পক্ষে যুক্তি : অনেকে আবার এই ধারণার প্রতিবাদ করে বিরুদ্ধ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। তাদের বিশ্বাস গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান আছে এবং এই সংবিধান হলো অন্যতম প্রধান সংবিধান। তবে মর্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স বা ভারতের মতো বিধিবদ্ধ দলিলের আকারে এই সংবিধানকে পেশ করা যায় না। গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধানের অস্তিত্বকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তাকে সঠিকভাবে বিশেষণ করতে হলে সংবিধানের ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন। সংকীর্ণ অর্থে সংবিধান বলতে বুঝায়-
১. একটি লিখিত এবং বিধিবদ্ধ দলিল।
২. ঐ দলিল গণপরিষদ, আইনসভা বা অন্য কোনো ভারপ্রাপ্ত সংস্থা কর্তৃক একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রণীত হয়।
৩. বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা এবং কার্যাবলি ঐ বিধিবদ্ধ দলিলে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৪. সংবিধানের রচনাকাল এবং তাকে কার্যকর করার দিন স্পষ্টভাবে উলেখ করা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধান বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। এই সংবিধানকে একটি ঐক্যবদ্ধ ও বিধিবদ্ধ দলিলের আকারে উপস্থিত করা সম্ভব নয়।