বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে জাতীয় পতাকা নির্ধারণ করা হয়, তখন মধ্যের লাল বৃত্তে বাংলাদেশের মানচিত্র ছিল ।
মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার ছিলেন শিব নারায়ণ দাশ। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় এক ছাত্রসভায় তৎকালীন ছাত্রনেতা ডাকসু ভিপি আ.স.ম আবদুর রব বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন। এজন্য ২ মার্চ ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশনে এম হোসেন আলী বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এটি কোন বিদেশি মিশনে সর্বপ্রথম বাংলাদেশী পতাকা উত্তোলন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিধি প্রণীত হয়। এ সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হতে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলা হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত কত
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আয়তাকার। এর দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের অনুপাত ১০ : ৬। পতাকার বৃত্তটির ব্যাসার্ধ পতাকার দৈর্ঘ্যের ৫ ভাগের এক ভাগ । লাল বৃত্তটি পতাকার খানিকটা বাম পাশে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয় । বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার পটুয়া কামরুল হাসান। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সাথে জাপানের পতাকার মিল আছে।
বাংলাদেশের সংবিধান সম্পূর্ণ
বাংলাদেশের সংবিধান তৈরির উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ জারি করেন । পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের ১৭ জানুয়ারি মাসে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যগণ গণপরিষদের সদস্য বলে পরিগণিত হয়। গণ-পরিষদের সদস্য ছিল ৪০৩। গণ-পরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে। ১০ এপ্রিল, ১৯৭২। গণ-পরিষদের প্রথম স্পিকার ছিলেন শাহ আবদুল হামিদ এবং প্রথম ডেপুটি স্পিকার ছিলেন মোহাম্মদ উল্লাহ। গণপরিষদের ৩৪ জন সদস্য নিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটি গঠিত হয়।
কমিটির সভাপতি ছিলেন ড. কামাল হোসেন। এজন্য ড. কামাল হোসেনকে বাংলাদেশের সংবিধানের জনক বা রূপকার বা স্থপতি বলা হয়। সংবিধান রচনা কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্য বেগম রাজিয়া বানু। সংবিধান রচনা কমিটির একমাত্র বিরোধী দলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত। সংবিধান রচনা কমিটি ভারত ও যুক্তরাজ্যের সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করেন। বাংলাদেশে সংবিধানের খসড়া সর্ব প্রথম গণপরিষদে উত্থাপিত হয় ১২ অক্টোবর, ১৯৭২। সংবিধানের খসড়াগণপরিষদে উত্থাপন করেন ড. কামাল হোসেন ।
বাংলাদেশের সংবিধান দিবস কবে
৪ নভেম্বর, ১৯৭২ বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া গণপরিষদে গৃহীত হয়। এজন্য ৪ নভেম্বর ‘সংবিধান দিবস’ হিসাবে পালিত হয় ।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর বা প্রবর্তিত হয় ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২। বাংলাদেশের প্রথম হস্তলিখিত সংবিধান ছিল ৯৩ পাতার। হস্তলিখিত সংবিধানটির মূল লেখক ছিলেন শিল্পী আব্দুর রউফ । হস্তলিখিত সংবিধানটির অঙ্গসজ্জা করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। গণপরিষদের সদস্যরা হস্তলিখিত মূল সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজি লিপিতে স্বাক্ষর করেন ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭২। গণপরিষদের ৩০৯ জন সদস্য হস্তলিখিত মূল সংবিধানে স্বাক্ষর করেন । ড. কামাল হোসেন সংবিধান রচনা কমিটির বিরোধী দলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত হস্তলিখিত মূল সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি । বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হওয়ার সময় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।