বাংলাদেশের নদনদী রচনা

রচনা

ভূমিকা : বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এর বুকের ওপর দিয়ে অসংখ্য নদনদী বয়ে চলেছে। বহু নদী জালের মতো এ
দেশটিকে বেষ্টন করে আছে। পাহাড় পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে বড় নদীগুলো এ দেশের ওপর দিয়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

পরিচিতি : বাংলাদেশে অনেকগুলো নদী আছে। তন্মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র- এ চারটিই প্রধান। এছাড়া
বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, কর্ণফুলী, শঙ্খ, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, তিস্তা, করতোয়া, কুশিয়ারা, গড়াই, মধুমতি প্রভৃতি আরো অনেক নদী বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তার করে আছে। উপর্যুক্ত নদীগুলো ছাড়াও আরো অনেক উপনদী ও শাখানদী বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে।

পদ্মা : পদ্মা বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী। ভারতের গঙ্গা নদী হিমালয় থেকে উৎপন্ন হয়ে রাজশাহীর কাছে এসে পদ্মা নাম নিয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মা গোয়ালন্দের কাছে এসে যমুনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং চাঁদপুরের কাছে মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। পদ্মার শাখা নদীগুলো হচ্ছে কুমার, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, গড়াই, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ ইত্যাদি।

ব্ৰহ্মপুত্ৰ : ব্রহ্মপুত্র নদীর উৎপত্তি তিব্বতের মানস সরোবরে। এটি ভারতের আসাম প্রদেশের ওপর দিয়ে এসে রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ময়মনসিংহ জেলায় তা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি শাখা যমুনা নামে গোয়ালন্দে এসে পদ্মার সঙ্গে মিশেছে। আর একটি শাখা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নাম নিয়ে ময়মনসিংহের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। যমুনার প্রধান উপনদীগুলো হলো তিস্তা, করতোয়া, ধরলা ও আত্রাই। প্রবাহিত হয়ে এসে চট্টগ্রামের মধ্যদিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। নদীর সঙ্গে মিশেছে। এ দুয়ের মিলিত স্রোত ভৈরব বাজারের নিকট এসে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে মেঘনা নাম।

সুরমা : সুরমা নদীর উৎপত্তি ভারতের আসামে। এই নদী সিলেট, সুনামগঞ্জ ও ছাতকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুশিয়ারা ধারণ করে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছে। তিতাস ও ডাকাতিয়া মেঘনার শাখা নদী। এগুলো কুমিল্লা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত।

বাংলাদেশের নদনদী রচনা

কর্ণফুলী : বাংলাদেশের একটি খরস্রোতা নদী। এটি ভারতের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে। অন্যান্য নদীগুলোর মধ্যে ঢাকার বুড়িগঙ্গা, রাজশাহীর মহানন্দা, বরিশালের কীর্তনখোলা, মৌলভীবাজারের মনু, খুলনার রূপসা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

নদীর সৌন্দর্য : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। এ দেশের নদীগুলো প্রকৃতির সে সৌন্দর্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। বিভিন্ন ঋতুতে নদীগুলো ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। এভাবে নদীনালার সৌন্দর্য বাংলাদেশের প্রকৃতিকে অপরূপ করে। তুলেছে। বর্ষাকালে নদীগুলোর যেন ভরা যৌবন— এ সময় তারা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। এ নদীর বুকে নানা রঙের পাল। তুলে যখন নৌকা চলে, তখন অপূর্ব সুন্দর দেখায়। শরতের রাতে নদীতীরে চাঁদের আলোয় কাশফুলের সৌন্দর্য সকলের মন কেড়ে নেয়। এমন অবারিত সবুজ ও নদীর মেলা অন্য কোনো দেশে দেখা যায় না।

উপকারিতা : বাংলাদেশ যে এত সবুজ, এতে উর্বর আর এত মধুর, তার পশ্চাতে রয়েছে এ দেশের নদ-নদীগুলোর অসামান্য অবদান। বাংলাদেশ যেমন নদীমাতৃক দেশ তেমনি কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি নদ-নদীর কাছে বর্ষাকালে নদীবাহিত পলি এ দেশের জমিকে উর্বরতা দান করে। সেই উর্বর ভূমিতে এ দেশের কৃষক ফসল ফলিয়ে খাদ্যের যোগান দেয় আর অর্থনীতিতে শক্তি সঞ্চার করে। এ কৃষিকাজের মাধ্যমে এ দেশের কৃষক সমাজ জীবিকা নির্বাহ করে। জেলেরাও নদীতে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলে নদী পথই যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম।

অপকারিতা : নদী যে সব সময় আমাদের উপকারই করে, তা নয়। নদী মানুষের অনেক ক্ষতিও করে থাকে। বর্ষাকালে কোনো কোনো নদী ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। এসব নদীর বন্যা ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত, গরু ছাগল বিবিধ সম্পদ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নদীভাঙনের কবলে পড়ে যুগে যুগে বহু গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যায়; অসংখ্য মানুষ ভিটেবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে।

উপসংহার : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নদ-নদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশের কৃষিকাজের ক্ষেত্রে নদীর অবদান অসাধারণ। যোগাযোগের ক্ষেত্রেও নদী বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে দিন দিন পলি জমার কারণে এদেশের নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। বছর বছর বন্যার সংকট ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি অবলম্বন করে এ সকল সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

two × 1 =