কোনো দেশের বিভিন্ন এলাকাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এলাকাতে কর আরোপসহ সীমিত ক্ষমতা দান করে যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়, তাকে স্থানীয় সরকার বলে । বাংলাদেশে বর্তমানে ৩ স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার কাঠামো লক্ষ করা যায়। যথা- ইউনিয়ন পরিষদ, থানা/উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ। এছাড়া শহরগুলোতে পৌরসভা, বড় শহরে সিটি কর্পোরেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলায় ৩টি (খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি) স্থানীয় জেলা পরিষদ রয়েছে। উল্লিখিত তিন স্তরের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদকেই নিচের দিকে সবচেয়ে কার্যকর ইউনিট বলে মনে করা হয়ে থাকে ।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিভাবে নির্বাচিত হয় ও জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা
স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ স্তর জেলা পরিষদ। ১ জন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনে ৫ জন মহিলা সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত। এই পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলার জনগণ দ্বারা সরাসরি নির্বাচনের বিধান রাখা হয়। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একজন প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদার অধিকারী এবং জেলা প্রশাসককে তার অধীনে প্রধান নির্বাহী করা হয়। সংসদ সদস্য এই পরিষদে পরামর্শকের ভূমিকা পালন করেন । তবে বর্তমানে সরকার জেলা পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের বদলে একজন করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন।
পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা কত জন
পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) বিভিন্ন ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত একটি অঞ্চল। এ অঞ্চলের প্রকৃতি ও জীবনধারা আলাদা হওয়ায় তিনটি বিশেষ ধরনের জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ প্রবর্তন করা হয়। প্রত্যেকটি জেলা পরিষদ ১ জন চেয়ারম্যান, ৩০ জন সাধারণ সদস্য এবং ৩ জন মহিলা সদস্যসহ সর্বমোট ৩৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। এই পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা মোটামুটি বাংলাদেশের ১০ ভাগের ১ ভাগ ।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পদ্ধতি ও উপজেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা কত
১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর থেকে কার্যকরী অধ্যাদেশ বলে প্রথমে উন্নীত থানা পরিষদ গঠন করা হয় । পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে উন্নীত থানা পরিষদকে উপজেলা পরিষদে রূপান্তর করা হয় । ২৬ জানুয়ারি, ১৯৯২ জাতীয় সংসদে ‘উপজেলা বাতিল’ বিল পাস হয় । ৬ এপ্রিল, ২০০৯ জাতীয় সংসদে ‘উপজেলা পরিষদ (রহিতকরণ) আইন পুনঃপ্রচলন ও সংশোধন বিল’ পাস হয়।
১ জন চেয়ারম্যান, ২ জন ভাইস চেয়ারম্যান (এদের মধ্যে ১ জন হবেন মহিলা) এবং উপজেলার আওতাধীন ইউনিয়ন পরিষদসমূহের চেয়ারম্যানবৃন্দ, পৌরসভার (যদি থাকে) মেয়র এবং ৩ জন মহিলা সদস্যের সমন্বয়ে উপজেলা পরিষদ গঠিত হয়। চেয়ারম্যান উপজেলার ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের উপজেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদেরকে পরিষদের পরামর্শকের ভূমিকা প্রদান করা হয়েছে ।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সংখ্যা কত
পল্লী অঞ্চলে নিম্নতম স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হছে ইউনিয়ন পরিষদ । এই পরিষদে ১ জন নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ৯ টি ওয়ার্ড থেকে ৯ জন নির্বাচিত সাধারণ সদস্য ও ৩ জন নির্বাচিত মহিলা সদস্য (সংরক্ষিত আসনে) রয়েছেন । ইউনিয়ন পরিষদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের বিধান করা হয় ১৯৯৭ সালে । একটি ইউনিয়ন ৯ টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। মহিলা সদস্যগণ প্রতি ৩ ওয়ার্ডে ১ জন – এই ভিত্তিতে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন । ইউনিয়ন পরিষদের কার্যকাল ৫ বছর । তবে মেয়াদপূর্তির পূর্বেও দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও অন্য যেকোনো সদস্যকে অপসারণ করা যায়।
পৌরসভার কাজ কি ও বাংলাদেশের পৌরসভা কয়টি
শহরাঞ্চলে নিম্নতম স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পৌরসভা। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ অনুযায়ী পৌরসভা গঠিত হবে ১ জন মেয়র, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত সংখ্যক ওয়ার্ডের সমান সংখ্যক কাউন্সিলর এবং কেবল মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত নির্ধারিত সংখ্যক কাউন্সিলরের সমন্বয়ে। পৌরসভা চেয়ারম্যান বা সদস্য অপসারণের জন্য ২/৩ সদস্যের ভোটের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের পৌরসভাগুলোকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে শ্রেণি বিভাগ করা হয়।
সিটি কর্পোরেশন কি ও বাংলাদেশের ১৩তম সিটি কর্পোরেশন
ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ ), চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর এবং গাজীপুর মোট ১১ টি সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশে রয়েছে । সিটি এলাকায় ক্ষুদ্রতম প্রশাসনিক একক ওয়ার্ড। একজন মেয়র, নির্ধারিত ওয়ার্ডের সমানসংখ্যক কাউন্সিলর এবং নির্ধারিত ওয়ার্ডের এক তৃতীয়াংশ সংখ্যক সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর নিয়ে সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয় । মেয়র ও কাউন্সিলরগণ জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন এবং সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলরগণ নির্বাচিত হন কাউন্সিলরদের ভোটে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করেন । সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ ৫ বছর ।
ঢাকা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৪ সালে । ১৯৭৮ সালে ঢাকা পৌরসভা ‘পৌর কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয় । ঢাকা পৌর কর্পোরেশন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয় ১৯৯০ সালে। ২৯ নভেম্বর, ২০১১ ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণ দুইভাগে ভাগ করা হয়। ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ওয়ার্ড সংখ্যা যথাক্রমে ৩৬টি এবং ৫৬টি ।