মহান বিজয় দিবস রচনা
সূচনা : ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির জাতীয় জীবনের এক গৌরবময় দিন। দীর্ঘ দু যুগের শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর লাখ লাখ শহিদের ঝরানো এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। অর্জন করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ ও পতাকা।
বিজয়ের পটভূমি : ১৯৭১ সালের ৯ মাসের রক্তঝরা সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় সাধিত হয়েছে এবং পরিণামে আমরা গৌরবদীপ্ত স্বাধীনতা লাভ করেছি। তারই স্মরণে প্রতি বছরের এ বিশেষ দিনটিতে বিজয় দিবস পালিত হয়।
বিজয়ের ইতিহাস : ১৬ ডিসেম্বর এ মহান বিজয় দিবসের সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। বাঙালিরা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করেছিল তার ফল হিসেবে আমরা সংগ্রামে বিজয় গৌরব লাভ করেছি। এ বিজয়ে অগণিত মানুষকে জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা দীর্ঘদিন শোষণ করে খুশি হয় নি। ২৫ মার্চ লেলিয়ে দিয়েছিল অসংখ্য হিংস সৈন্য। বাঙালিরা তখন বাধ্য হয়ে যুদ্ধে নেমেছে ত্রিশ লাখ লোক এ সংগ্রামে শহিদ হয়েছে। বিজয়ের তাৎপর্য : আমাদের জাতীয় জীবনে এ বিজয় দিবসের বিশেষ তাৎপর্য আছে। ত্রিশ লাখ শহিদের রক্ত এ বিজয় এনেছে বলে আমাদের জাতীয় জীবনে এর মর্যাদা, অফুরন্ত। এ বিজয় আমাদের জন্য নিয়েসেছে স্বাধীনতার ফল। আমরা এখন মুক্ত জীবন যাপন করতে পারছি। বীর জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয় এ বিজয়ের ফল।
আত্মসমীক্ষা : ১৯৭১ থেকে ২০২১ এই দীর্ঘ সময় অতিক্রম করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঙালির জীবনে কতটুকু তাৎপর্য বহন করেছে এটা অবশ্য ভাবার বিষয়। কোনোরূপ বিতর্কে না গিয়ে বাঙালি জনসাধারণ মুক্তির ডাকে সারা দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের সে আত্মত্যাগের প্রতিদান আজও কি পুরোপুরি দিতে পেরেছি। যে মহান আদর্শ ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে দীর্ঘ নয় মাস মুক্তি সংগ্রামের পর বিজয় অর্জিত হয়েছিল। আজ চল্লিশ বছর পর তার কতটুকু ফললাভ হয়েছে সে বিষয়ে মূল্যায়নের সময় হয়েছে।
উপসংহার : স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে হলেও আমাদের নতুন করে শপথ নিতে হবে। যে আশা, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিল, দু লাখ মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছিল। সে আশা আমাদেরকে পূরণ করতে হবে।
১৬ই ডিসেম্বর রচনা
সংকেত : সূচনা © ২৫শে মার্চ ১৯৭১ ০ সৈনিক জনতার যুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ডাক ও বিজয় দিবস উপসংহার।
সূচনা : আজ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক। পূর্বে এদেশ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অধীন পূর্ব পাকিস্তান নামে প্রদেশ ছিল। কিন্তু ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকায় পুরোপুরি স্বাধীন ছিল না। ২৬মার্চ তারিখে পরাধীনতার গ্লানি ধুয়ে মুছে ফেলে দিয়ে আমাদের দেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে আত্মপ্রকাশ করেছে। সেজন্য এ দিনটি আমাদের কাছে বড় আনন্দের ও গৌরবের। আমরা সবাই শ্রদ্ধার সাথে এ দিনটি পালন করে থাকি।
২৫ মার্চ ১৯৭১ : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হাজার হাজার বাঙালির রক্তে সিক্ত হয়ে যায় ঢাকার রাজপথ। সেদিন নীরবে থাকতে পারেনি দেশপ্রেমিক ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস এবং পুলিশ বাহিনির বাঙালি সৈনিক ভাইয়েরা। তাঁরা ঐদিন হানাদার পাকিস্তানি বাহিনির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। শতশত বাঙালি সৈনিক অকাতরে প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেছেন বাংলার স্বাধীনতা সূর্যকে ছিনিয়ে আনার জন্যে।
সৈনিক জনতার যুদ্ধ : সেদিন সাধারণ জনতা শুধু প্রাণই দান করেনি। নিরস্ত্র হয়েও তাঁরা পাকিস্তানি হানাদারদের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদেরই বুলেটে তাদেরকেই বিদ্ধ করে পরাজিত করেছে। তাই ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে সাধারণ জনতা যে বীরত্ব দেখিয়েছে বিশ্বের ইতিহাসে তার কোনো তুলনা হয় না।
বঙ্গবন্ধুর ডাক : বঙ্গবন্ধুর ডাকে এবং তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলার সর্বস্তরের মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল সেদিন। বাংলার গ্রামে-গঞ্জের আনাচে-কানাচে ও দেশের বাহিরে গিয়েও তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে শেষ পর্যন্ত শত্রুদেরকে পর্যুদস্ত করেছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রত্যাঘাতের ফলে ১৯৭১ সালের অক্টোবর নভেম্বর মাসে হানাদার বাহিনি মৃত্যুবরণ করতে থাকে ও পিছু হটতে থাকে।
বিজয় দিবস : পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণের সে ঐতিহাসিক দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। পূর্ব দিগন্তে এক বিরাট লাল সূর্য উদিত হলো সেদিন। বাঙালি জাতির বিজয় হলো। তাই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস।
উপসংহার : বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস নামে পরিচিত। আর ২৬ মার্চ হলো স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। সেদিন সকলেই দেশ গড়ার সংকল্প করে ও নতুন করে দেশকে ভালোবাসতে শেখে।