বিবর্তনতত্ত্বের ধারণা (The concept of Evolution)
মন্থর গতিসম্পন্ন ও প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মাধ্যমে সরলদেহী জীব থেকে জটিল জীবের আবির্ভাবকে বিবর্তন বলে। বিবর্তন এর ইংরেজী Evolution শব্দটি প্রকৃত পক্ষেব্র্যাটিন শব্দ “Evolvere” অর্থ বিকশিত হওয়া বা ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হওয়া শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।
জীবজগতে যে বিবর্তন ঘটছে এ প্রত্যয় জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে জন্মেছে বহু আগেই । কিন্তু ঠিক কীভাবে বিবর্তন হচ্ছে এ ব্যাপারে কেউ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। এ মতানৈক্যের মূল কারণ হলো বিবর্তন অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া যা সহজে অনুধাবন ও অবলোকন করা যায় না এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কয়েকজন প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক তাঁদের লেখায় বিবর্তন সম্বন্ধে কিছু কাল্পনিক ধারণা রেখে গেছেন।
আধুনিক বিজ্ঞানীরা সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে বিবর্তনের ফলেই নতুন নতুন জীবের সৃষ্টি হয়েছে। বিবর্তনের ধারণা আধুনিককালের হলেও দেখা যায় প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা বিবর্তন সম্বন্ধে অনেক আগেই চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন । এম্পেডোক্লিস (Empedocles, 495–435 B.C)-কে বিবর্তনের জনক বলে অভিহিত করা হয়। যোগ্যতমের আকস্মিক সৃষ্টি এবং অযোগ্যের বিলুপ্তি সম্বন্ধে তিনি জোড়ালো ধারণা পোষণ করতেন। ডেমোক্রিটাস
(Democritus, 460–357 B.C.). এ ধারণা পোষণ করতেন যে শরীরের যে কোন অঙ্গ পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়। বিখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টটল (Aristotle, 384-322 B.C)-এর মনেও এ ধারণা জন্মেছিল যে নিম্নস্তরের জীব কতকগুলো ধারাবাহিক নিয়মের মধ্য দিয়ে উন্নতির পথে অগ্রসর হয়েছে। অ্যারিস্টটলের পরে ফরাসি বিজ্ঞানী বুফন (Buffon, 1707-1788) মত প্রকাশ করেন যে পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে বসবাসকারী জীবেরও পরিবর্তন হচ্ছে। পরিবেশের প্রভাবে প্রথমে জীবদেহে সামান্য আঙ্গিক পরিবর্তন ঘটতে পারে এবং পরে ঐ পরিবর্তন বহুকাল ধরে বংশানুক্রমে পুঞ্জীভূত হয়ে ক্রমে বড় রকমের প্রভেদ সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে কয়েকজন বিজ্ঞানী উপযুক্ত তথ্য প্রমাণসহ বিবর্তনের কলা-কৌশল সম্বন্ধে মতবাদ প্রচার করেন। এগুলোর মধ্যে ফরাসি প্রকৃতিবিদ জ্যা ব্যাপটিস্ট ল্যামার্ক, ইংরেজ প্রকৃতিবিদ চালর্স ডারউইন, ডাচ বিজ্ঞানী ডে ভ্রিস (de Vries), জার্মান বিজ্ঞানী আগস্ট ভাইজম্যান এর মতবাদ ও সংশ্লেষ মতবাদই প্রধান।