মনোবল নিয়ে উক্তি-আত্মবিশ্বাস নিয়ে উক্তি-আত্মবিশ্বাস উক্তি
মনোবল হলো মানুষের মানসিক শক্তি, স্থিতিশীলতা, এবং সংকল্পের এক সমন্বিত রূপ। এটি এমন একটি অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা যা ব্যক্তিকে জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। মনোবল মানসিক দৃঢ়তার প্রতিফলন এবং এটি জীবনের যেকোনো সংকট মুহূর্তে মানুষকে স্থিতিশীল এবং দৃঢ় রাখে।
মনোবলের গুরুত্ব
মনোবল মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য এবং এটি জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনে সহায়ক। মনোবলের গুরুত্ব নিম্নরূপ:
- প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা: মনোবল মানুষকে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্য করে। কঠিন সময়ে মনোবল মানুষকে স্থিতিশীল রাখে এবং সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে।
- আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: মনোবল মানুষের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। এটি মানুষকে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে সাহায্য করে এবং জীবনের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে উৎসাহিত করে।
- মোটিভেশন: মনোবল মানুষকে মোটিভেট করে। এটি মানুষের মনোবল বাড়ায় এবং তাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে উৎসাহিত করে।
- মানসিক স্বাস্থ্য: মনোবল মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষের মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সহায়ক।
মনোবল কাকে বলে-আত্মবিশ্বাস অর্জনের উপায়
মনোবলের উপাদান
মনোবল বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এই উপাদানগুলো মনোবলের বিভিন্ন দিককে বোঝায় এবং এটি মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়ক। মনোবলের প্রধান উপাদানগুলো হল:
- আত্মবিশ্বাস: আত্মবিশ্বাস মনোবলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে মানুষ নিজের সক্ষমতা এবং ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারে।
- সংকল্প: সংকল্প মনোবলের একটি প্রধান উপাদান। সংকল্পের মাধ্যমে মানুষ তার লক্ষ্য অর্জনের পথে স্থির থাকে এবং যেকোনো বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়।
- ধৈর্য: ধৈর্য মনোবলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ধৈর্যের মাধ্যমে মানুষ যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
- ইতিবাচক চিন্তা: ইতিবাচক চিন্তা মনোবলের একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি মানুষের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
মনোবল শক্ত করার উপায়- আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উপায়
১. স্ব-চিন্তার উন্নয়ন
স্ব-চিন্তার মাধ্যমে মনোবল বাড়ানো সম্ভব। আপনি যখন আপনার চিন্তাভাবনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, তখন আপনি জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবেন।
- পজিটিভ চিন্তা: নেতিবাচক চিন্তা কমিয়ে পজিটিভ চিন্তা করতে চেষ্টা করুন। প্রতিদিন সকালে ইতিবাচক কিছু ভাবুন, যেমন আপনার লক্ষ্য এবং স্বপ্ন।
- আত্মসম্মান বাড়ানো: নিজের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা বাড়াতে নিজের সক্ষমতা এবং অর্জনগুলোর প্রতি মনোযোগ দিন। আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে।
- ধ্যান এবং মেডিটেশন: প্রতিদিন ধ্যান এবং মেডিটেশন করুন। এটি মনের শান্তি আনে এবং স্ব-চিন্তা উন্নত করতে সহায়তা করে।
২. শারীরিক সুস্থতা
শারীরিক সুস্থতা মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে মনোবলও বৃদ্ধি পায়।
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করুন। এটি শরীরের পাশাপাশি মনকেও চাঙ্গা রাখে।
- সুস্থ খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টিকর এবং সুস্থ খাবার গ্রহণ করুন। এটি শরীর এবং মন দুটোকেই সুস্থ রাখে।
- পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
৩. সামাজিক সংযোগ
মানবজীবনে সামাজিক সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক সংযোগ মনোবল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো: পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- সামাজিক কার্যকলাপ: বিভিন্ন সামাজিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করুন। এটি আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে।
- সামাজিক সহযোগিতা: প্রয়োজনে সামাজিক সহযোগিতা গ্রহণ করুন। এটি আপনাকে মানসিকভাবে দৃঢ় হতে সহায়তা করবে।
৪. লক্ষ্য নির্ধারণ
জীবনে লক্ষ্য নির্ধারণ মনোবল বাড়াতে সহায়ক। আপনার লক্ষ্যগুলো পরিষ্কার এবং সুনির্দিষ্ট হলে, আপনি সেগুলো অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
- বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ: বাস্তবসম্মত এবং অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। এটি আপনাকে মনোযোগী এবং উৎসাহিত রাখবে।
- কর্মপরিকল্পনা: লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন। প্রতিটি ছোট পদক্ষেপই আপনাকে বড় লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাবে।
- লক্ষ্য পূরণের পর সেলিব্রেশন: যখন আপনার লক্ষ্য পূরণ হবে, তখন সেটিকে সেলিব্রেট করুন। এটি আপনাকে আরো বড় লক্ষ্য নির্ধারণে উৎসাহিত করবে।
৫. মানসিক শক্তি বৃদ্ধি
মানসিক শক্তি বৃদ্ধি মানসিক শক্তিশালী হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- সমস্যা সমাধান: সমস্যার মুখোমুখি হয়ে সমাধান করার ক্ষমতা বাড়ান। এটি আপনাকে মানসিকভাবে দৃঢ় করবে।
- আত্মবিশ্বাস: নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। নিজের সক্ষমতা এবং ক্ষমতায় বিশ্বাস রাখলে আপনি যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
- নেতিবাচক পরিবেশ থেকে দূরে থাকা: নেতিবাচক পরিবেশ এবং মানুষ থেকে দূরে থাকুন। এটি আপনার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করবে।
৬. শখ ও সৃজনশীলতা
শখ এবং সৃজনশীলতা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- শখ পালন: আপনার শখগুলো পালন করুন। এটি আপনাকে মানসিকভাবে সতেজ রাখবে।
- নতুন কিছু শেখা: নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। এটি আপনার মনকে সক্রিয় রাখবে।
- সৃজনশীল কার্যকলাপ: সৃজনশীল কার্যকলাপে যুক্ত থাকুন। এটি আপনার মনের স্থিতি বজায় রাখতে সহায়ক।
৭. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মনোবল বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক।
- কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস: প্রতিদিন কৃতজ্ঞতার তালিকা তৈরি করুন। এটি আপনার মনকে পজিটিভ রাখবে।
- কৃতজ্ঞতা প্রকাশের চর্চা: আপনি যখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন, তখন আপনার মনোবল বৃদ্ধি পাবে।
- কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন: অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। এটি সামাজিক সম্পর্ককে মজবুত করে এবং মনোবল বৃদ্ধি করে।
৮. সেলফ-কেয়ার
সেলফ-কেয়ার মনোবল বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- নিজের প্রতি যত্ন: নিজের প্রতি যত্নশীল হোন। নিজের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন।
- রিল্যাক্সেশন: প্রতিদিন রিল্যাক্সেশন এবং বিনোদন করুন। এটি আপনার মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সহায়ক।
- নিজেকে ভালোবাসা: নিজেকে ভালোবাসুন এবং নিজের প্রয়োজনীয়তাগুলোকে গুরুত্ব দিন। এটি আপনার মনোবল বৃদ্ধি করবে।
৯. শিক্ষামূলক কার্যকলাপ
শিক্ষামূলক কার্যকলাপ আপনার জ্ঞান এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
- বই পড়া: শিক্ষামূলক এবং অনুপ্রেরণামূলক বই পড়ুন। এটি আপনার মানসিক অবস্থাকে পজিটিভ রাখবে।
- কোর্স এবং ওয়ার্কশপ: বিভিন্ন কোর্স এবং ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করুন। এটি আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি করবে এবং আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করবে।
- অনলাইন লার্নিং: অনলাইনে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও এবং আর্টিকেল পড়ুন। এটি আপনাকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ দেবে।
১০. রিসিলিয়েন্স বৃদ্ধি
রিসিলিয়েন্স বা ধৈর্য্য বৃদ্ধি মনোবল বাড়াতে সহায়ক।
- চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা: জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। এটি আপনার রিসিলিয়েন্স বৃদ্ধি করবে।
- কঠিন সময়ে স্থিতিশীলতা: কঠিন সময়ে নিজেকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করুন। এটি আপনার মনোবল বৃদ্ধি করবে।
- নিজেকে মটিভেটেড রাখা: নিজেকে মটিভেটেড রাখতে বিভিন্ন মটিভেশনাল ভিডিও এবং বই পড়ুন। এটি আপনার রিসিলিয়েন্স বৃদ্ধি করবে।
১১. ধ্যান এবং যোগব্যায়াম
ধ্যান এবং যোগব্যায়াম মনোবল বাড়াতে অত্যন্ত সহায়ক।
- নিয়মিত ধ্যান: প্রতিদিন নিয়মিত ধ্যান করুন। এটি আপনার মনকে শান্ত এবং স্থিতিশীল রাখবে।
- যোগব্যায়াম: যোগব্যায়াম মন এবং শরীরকে একসঙ্গে সুস্থ রাখতে সহায়ক। এটি আপনার মনোবল বৃদ্ধি করবে।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। এটি আপনার মানসিক অবস্থাকে স্থিতিশীল রাখবে।
১২. পরামর্শ এবং থেরাপি
মানসিক সমস্যা সমাধানে পরামর্শ এবং থেরাপি গ্রহণ করতে পারেন।
- পরামর্শ গ্রহণ: প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন। এটি আপনার মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে সহায়ক।
- থেরাপি: থেরাপি গ্রহণ করে আপনার মানসিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। এটি আপনার মনোবল বৃদ্ধি করবে।
- সাপোর্ট গ্রুপ: বিভিন্ন সাপোর্ট গ্রুপে যোগ দিন। এটি আপনার সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি করবে এবং আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করবে।
১৩. সময় ব্যবস্থাপনা
সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা আপনার মনোবল বাড়াতে সহায়ক।
- প্রয়োজনীয় কাজের তালিকা: প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় কাজগুলোর তালিকা তৈরি করুন। এটি আপনাকে সংগঠিত রাখবে।
- প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করা: গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো প্রথমে সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। এটি আপনার মানসিক চাপ কমাবে।
- বিরতি নেওয়া: কাজের মাঝে মাঝে বিরতি নিন। এটি আপনার মনকে সতেজ রাখবে।
১৪. স্বেচ্ছাসেবা
স্বেচ্ছাসেবা মনোবল বাড়াতে অত্যন্ত সহায়ক।
- স্বেচ্ছাসেবায় যুক্ত থাকা: বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবা কার্যকলাপে যুক্ত থাকুন। এটি আপনার আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি করবে।
- মানবসেবা: মানবসেবা কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করুন। এটি আপনাকে মানসিকভাবে সন্তুষ্ট রাখবে।
- কমিউনিটি সার্ভিস: বিভিন্ন কমিউনিটি সার্ভিস কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করুন। এটি আপনার মনোবল বৃদ্ধি করবে।
১৫. নিজেকে চ্যালেঞ্জ করা
নিজেকে চ্যালেঞ্জ করা মনোবল বাড়াতে সহায়ক।
- নতুন কিছু চেষ্টা করা: নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন। এটি আপনার মনোবল বৃদ্ধি করবে।
- সীমা অতিক্রম করা: নিজেকে সীমা অতিক্রম করতে উৎসাহিত করুন। এটি আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে।
- সাফল্য উদযাপন করা: আপনার সাফল্য উদযাপন করুন। এটি আপনাকে আরো বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে উৎসাহিত করবে।
প্রেষণা ও মনোবলের মধ্যে পার্থক্য- প্রেষণা ও মনোবলের মধ্যে সম্পর্ক
প্রেষণা (Motivation) এবং মনোবল (Willpower) উভয়ই ব্যক্তির মানসিক এবং আবেগজনিত শক্তি সম্পর্কিত হলেও তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এখানে প্রেষণা এবং মনোবলের মধ্যে পার্থক্যগুলি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:
প্রেষণা (Motivation)
সংজ্ঞা:
প্রেষণা হলো সেই অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক উদ্দীপক যা একজন ব্যক্তিকে কোনো কার্য সম্পাদনে বা লক্ষ্য অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে। এটি ব্যক্তির কাজের প্রতি আগ্রহ এবং উৎসাহ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
উৎস:
প্রেষণা দুই ধরনের হতে পারে:
- অভ্যন্তরীণ প্রেষণা (Intrinsic Motivation): যখন ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ আগ্রহ, আনন্দ বা সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো শখের কাজ করা।
- বাহ্যিক প্রেষণা (Extrinsic Motivation): যখন বাহ্যিক পুরস্কার বা স্বীকৃতির জন্য কাজ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, চাকরিতে প্রমোশন পাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা।
বৈশিষ্ট্য:
- উদ্দীপনা: প্রেষণা ব্যক্তিকে কাজ শুরু করতে এবং তা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।
- লক্ষ্য নির্ধারণ: প্রেষণা ব্যক্তি তার লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জনে সাহায্য করে।
- স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী: প্রেষণা স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয়ই হতে পারে।
উদাহরণ:
- পরীক্ষা ভালোভাবে দেওয়ার জন্য ছাত্রের পড়াশোনা।
- কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য খেলোয়াড়ের কঠোর পরিশ্রম।
- কাজের মধ্যে সাফল্য অর্জনের জন্য কর্মীর প্রচেষ্টা।
মনোবল (Willpower)
সংজ্ঞা:
মনোবল হলো মানসিক দৃঢ়তা বা সংকল্প, যা ব্যক্তিকে তার লক্ষ্য অর্জনে অটল এবং স্থির রাখে। এটি ব্যক্তির আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং স্থায়িত্বকে নির্দেশ করে।
উৎস:
মনোবল মূলত অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসে। এটি ব্যক্তি তার নিজের অভ্যন্তরীণ শক্তি এবং সংকল্প থেকে প্রাপ্ত।
বৈশিষ্ট্য:
- সংকল্প এবং স্থিরতা: মনোবল ব্যক্তিকে তার সংকল্পে স্থির থাকতে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অটল থাকতে সাহায্য করে।
- আত্মনিয়ন্ত্রণ: মনোবল ব্যক্তিকে তার আবেগ, ইচ্ছা এবং প্রলোভন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
- দীর্ঘমেয়াদী: মনোবল সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যক্তির জীবনের বিভিন্ন সময়ে স্থায়ী থাকে।
উদাহরণ:
- দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করার জন্য একজন ক্রীড়াবিদের সংকল্প।
- কঠিন পরিস্থিতি সত্ত্বেও ধৈর্য্য ধরে কাজ করা।
- প্রলোভন এড়িয়ে নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য সংগ্রাম করা।
প্রেষণা ও মনোবলের মধ্যে প্রধান পার্থক্য
- উৎসাহ বনাম সংকল্প:
- প্রেষণা হলো কাজ শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্দীপনা এবং উৎসাহ।
- মনোবল হলো কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংকল্প এবং ধৈর্য।
- উৎস:
- প্রেষণা অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক উভয় উৎস থেকে আসতে পারে।
- মনোবল মূলত অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসে।
- সময়কাল:
- প্রেষণা স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয়ই হতে পারে।
- মনোবল সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থায়ী হয়।
- কাজের ধরণ:
- প্রেষণা কাজ শুরু করতে এবং তা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।
- মনোবল কাজ শেষ করতে এবং লক্ষ্য অর্জনে স্থির থাকতে সাহায্য করে।
প্রেষণা এবং মনোবল উভয়ই জীবনে সফলতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রেষণা ব্যক্তিকে কাজ শুরু করতে এবং তা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে, আর মনোবল ব্যক্তিকে তার লক্ষ্য অর্জনে অটল এবং স্থির থাকতে সাহায্য করে। এই দুইটি মানসিক শক্তি একসাথে কাজ করলে ব্যক্তি জীবনের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়।
মনোবল শক্ত করার দোয়া-মনোবল বৃদ্ধির দোয়া -আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর দোয়া
ইসলামিক দোয়া
ইসলামে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। মনোবল বৃদ্ধির জন্য কিছু ইসলামিক দোয়া:
১. সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১৭৩
“حَسْبُنَا اللّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ”
উচ্চারণ: “Hasbunallahu wa ni’mal wakeel”
অর্থ: “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ রক্ষাকারী।”
২. সুরা আত-তাহা, আয়াত ২৫-২৮
“قَالَ رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي * وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي * وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي * يَفْقَهُوا قَوْلِي”
উচ্চারণ: “Rabbi ashrah li sadri, wa yassir li amri, wahlul uqdatan min lisani, yafqahu qawli”
অর্থ: “হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ উন্মুক্ত করে দিন, আমার কাজ সহজ করে দিন, আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।”
৩. সুরা আল-ফালাক
“قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ * مِن شَرِّ مَا خَلَقَ”
উচ্চারণ: “Qul a’uzu bi rabbil-falaq, min sharri ma khalaq”
অর্থ: “বল, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি ফালাকের রবের কাছে, তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে।”
মনোবল বাড়ানোর উপায়গুলো বিভিন্ন দিক থেকে আসে এবং প্রতিটি উপায়ই আলাদা আলাদা ভাবে কার্যকরী। আপনি যখন এই সব পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করবেন, তখন আপনার মনোবল বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি জীবনের যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবেন। মনে রাখবেন, মনোবল বাড়ানোর জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন এবং আপনি যদি সতর্ক এবং পরিশ্রমী হন, তবে অবশ্যই সাফল্য অর্জন করবেন।