মানব ভ্রূণের বিকাশ বা পরিস্ফুটন

বিজ্ঞান

নিষেকের পর জাইগোট (2n) যে প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ শিশু বা লার্ভায় পরিণত হয় তাকে পরিস্ফুটন বলে। প্রতিটি সদস্যের পরিস্ফুটন প্রক্রিয়াকে ব্যক্তিজনিক পরিস্ফুটন (ontogenic development) বলা হয়।যে শাখায় জীবের ব্যক্তিজনিক পরিস্ফুটন সম্বন্ধে অধ্যয়ন করা হয়, তাকে ভ্ৰূণবিদ্যা (embryology) বলে । জাইগোট থেকে ভ্রূণ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে এমব্রায়োজেনেসিস (embryogenesis) বলা হয় ।

মানব ভ্রূণের বিকাশ

ব্যক্তিজনিক পরিস্ফুটনের ধাপগুলো নিম্নরূপ :

১। ক্লিভেজ (Cleavage) ঃ যে প্রক্রিয়ায় জাইগোট মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে অসংখ্য মৃণকোষ সৃষ্টি করে তাকে ক্লিভেজ বা সম্ভেদ বলে। ক্লিভেজে সৃষ্ট ভ্রূণের প্রতিটি কোষকে বলে ব্লাস্টোমিয়ার (blastomere) ক্লিভেজ প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত কোষ বিভাজনের ফলে জাইগোটটি বহুকোষী নিরেট গোলকে পরিণত হয়। এর নাম মরুলী (morula)।

মরুলার কোষগুলো ক্রমশ একস্তরে সজ্জিত হয় এবং এর ভেতরে একটি তরলপূর্ণ গহ্বর সৃষ্টি হয় । ভ্রূণের এ দশাকে ব্লাস্টুলা (blastula) বলে । ব্লাস্টুলার প্রাচীরকে ব্লাস্টোডার্ম এবং তরলপূর্ণ গহ্বরকে রাস্টোসিল বলে । ভ্রূণ ব্লাস্টুলায় পরিণত হওয়ার সাথে সাথে ক্লিভেজ দশার পরিসমাপ্তি ঘটে ।

২। গ্যাস্ট্রলেশন (Gastrulation) ঃ ভূণে আর্কেন্টেরণ নামক প্রাথমিক খাদ্যগহ্বর বা আন্ত্রিকগহ্বর সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে গ্যাস্টুলেশন বলে । পরিস্ফুটনের এ ধাপে ব্লাস্টোডার্ম দুই বা তিনটি কোষস্তর নির্মাণ করে। এদের বলে ভূণীয়
স্তর (germinal layers)। এসব স্তর থেকে প্রাণিদেহের বিভিন্ন অঙ্গ গঠিত হয়। এ পর্যায়ে ভ্রূণীয় স্তরগুলোতে ব্যাপক
পরিবর্তন ঘটে যায়, ফলে একটি অংশ ব্লাস্টোডার্মের পিঠেই রয়ে যায়। পরবর্তীতে একে এক্টোডার্ম নামে অভিহিত করা হয়। অন্য অংশ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মেসোডার্ম ও এন্ডোডার্ম-এ পরিণত হয়। কোষ পরিযানের (migration) কারণেই এসব হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে ভ্রূণ যে রূপ ধারণ করে তাকে গ্যাস্টুলা (gastrula) বলে। এর ভেতরে যে গহ্বর থাকে তাকে আর্কেন্টেরণ (archenteron), আর গহ্বরটি যে ছিদ্রপথে বাইরে উন্মুক্ত থাকে, তাকে ব্লাস্টোপোর (blastopore) বলে ।

৩। অর্গানোজেনেসিস (Organogenesis) : গ্যাস্ট্রলেশনে সৃষ্ট ভ্রূণীয় স্তরগুলো থেকে ভ্রূণের অঙ্গকুঁড়ি (organrudiment) সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে অর্গানোজেনেসিস বলে। তিনটি ভ্রূণীয় স্তরেরই অভিন্ন কোষপিন্ড ছোটো ছোটো কোষগুচ্ছে বিচ্ছিন্ন হয় । প্রত্যেক গুচ্ছ প্রাণিদেহের নির্দিষ্ট অঙ্গ বা অংশ নির্মাণ করে। এসব কোষগুচ্ছকে একেকটি অঙ্গের কুঁড়ি বলে। যে সব কুঁড়িতে ভ্রূণীয় স্তরগুলোর উপবিভক্তি ঘটে সেগুলোকে প্রাইমারি অঙ্গকুঁড়ি বলে। এদের কয়েকটি বেশ জটিল এবং এমন কতকগুলো কোষ নিয়ে গঠিত যারা একটি সম্পূর্ণ অঙ্গতন্ত্র গঠনেও সক্ষম। যেমন-সমগ্র স্নায়ুতন্ত্র কিংবা পৌষ্টিকতন্ত্র ইত্যাদি। প্রাইমারি অঙ্গকুঁড়ি আরও বিভক্ত হয়ে সেকেন্ডারি অঙ্গকুঁড়ি-তে পরিণত হয়। এসব কুঁড়ি থেকে উৎপন্ন হয় সেকেন্ডারি অঙ্গের। 



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

19 − 4 =