mumps in adults
মাম্পস(mumps) একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যা সাধারণত পারোটিড গ্রন্থিকে (কানের পেছনে ও গালের পাশে অবস্থিত থুথুর গ্রন্থি) আক্রমণ করে। এই সংক্রমণটির জন্য দায়ী মিক্সোভাইরাস রুবুলাভাইরাস নামে পরিচিত। মাম্পস মূলত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, তবে এটি যে কোনো বয়সের ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে পারে।
symptoms of mumps-লক্ষণ
মাম্পসের(mumps) প্রধান লক্ষণগুলি হলো:
- গাল ও চোয়ালের ফোলাভাব
- জ্বর
- মাথাব্যথা
- মাংসপেশিতে ব্যথা
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- ক্ষুধামন্দা
- গলার ব্যথা
ঘরোয়া চিকিৎসা-mumps meaning in bengali
মাম্পসের(mumps) জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই, তবে কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা মাধ্যমে এর উপসর্গগুলিকে প্রশমিত করা যায়। নীচে কয়েকটি ঘরোয়া চিকিৎসার কথা উল্লেখ করা হলো:
- বিশ্রাম: মাম্পসের(mumps) সময় শরীরের অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- তরল খাবার: প্রচুর পরিমাণে পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার (যেমন স্যুপ, ফলের রস) গ্রহণ করা উচিত। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- ঠাণ্ডা ও গরম সেঁক: গালের ফোলাভাব ও ব্যথা কমানোর জন্য ঠাণ্ডা ও গরম সেঁক খুবই কার্যকর। ঠাণ্ডা সেঁক ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে এবং গরম সেঁক ব্যথা প্রশমিত করতে সহায়ক।
- নরম খাবার: নরম এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত যেমন স্যুপ, ওটমিল, পুডিং, জেলো। কঠিন খাবার গিলে ফেলার সময় ব্যথা হতে পারে।
- লবঙ্গ এবং মধু: লবঙ্গ ও মধু মিশিয়ে খেলে গলার ব্যথা কমে যায়। লবঙ্গের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাবলী রয়েছে যা ব্যথা প্রশমিত করতে সাহায্য করে।
- পানি: লবণ পানিতে গার্গল করলে গলার ব্যথা কমে যায় এবং মুখের অভ্যন্তরে জীবাণু হ্রাস পায়।
- তুলসী পাতা: তুলসী পাতার রস গালের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। তুলসী পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- মুলে থাইম: মুলে থাইম অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ যা গালের ফোলাভাব ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
করণীয়
মাম্পসের সময় কিছু বিশেষ করণীয় বিষয় মনে রাখা উচিত যাতে রোগটি দ্রুত সেরে ওঠে এবং অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে:
- বিশ্রাম: যত বেশি সম্ভব বিশ্রাম নিন। এটি শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- পানি পান: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করুন। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়ক।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: হাত ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার রাখুন এবং জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন।
- মুখ ও নাক ঢেকে রাখা: হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় মুখ ও নাক টিস্যু বা রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখুন।
- আলাদা থালা-বাসন ব্যবহার: নিজের থালা-বাসন অন্য কারও সাথে ভাগ করবেন না।
সতর্কতা
মাম্পসের(mumps) সময় এবং এর পরে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাতে রোগটি অন্যদের মধ্যে না ছড়ায় এবং এর জটিলতা এড়ানো যায়:
- টিকা: মাম্পসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করার জন্য এমএমআর (মিজলস, মাম্পস, রুবেলা) টিকা নেওয়া উচিত। এটি শিশুদের মধ্যে মাম্পস সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা: মাম্পস সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন, কারণ এটি শ্বাসনালীর মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
- প্রচুর পানি পান: সংক্রমণ কমাতে এবং জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রচুর পানি পান করুন।
- মেডিকেল পরামর্শ: যদি উপসর্গগুলি গুরুতর হয়ে যায় তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সম্ভাব্য জটিলতা
মাম্পসের(mumps) কিছু সম্ভাব্য জটিলতা রয়েছে যা বিশেষত শিশুদের মধ্যে হতে পারে:
- অরচাইটিস: পুরুষদের মধ্যে অণ্ডকোষের প্রদাহ হতে পারে, যা খুবই বেদনাদায়ক হতে পারে এবং বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
- ওফরাইটিস: মহিলাদের মধ্যে ডিম্বাশয়ের প্রদাহ হতে পারে।
- মেনিনজাইটিস: মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের চারপাশের ঝিল্লির প্রদাহ হতে পারে।
- এনসেফালাইটিস: মস্তিষ্কের প্রদাহ হতে পারে যা জীবন-ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- প্যানক্রিয়াটিস: অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ হতে পারে।
মাম্পস(mumps) একটি সাধারণ ভাইরাসজনিত সংক্রমণ যা সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়, তবে এটি যে কোনো বয়সের ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে পারে। সঠিকভাবে ঘরোয়া চিকিৎসা গ্রহণ এবং সতর্কতা অবলম্বন করলে মাম্পসের উপসর্গগুলি প্রশমিত করা যায় এবং দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। এছাড়াও, মাম্পসের বিরুদ্ধে টিকা গ্রহণ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্ক থাকা উচিত।