প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মুদ্রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনা
করতে গিয়ে আমরা দুই ধরনের উৎস দেখতে পাই। যার একটি হলো অলিখিত উৎস এবং অন্যটি লিখিত উৎস। আর মুদ্রা হলো অলিখিত উৎসেরই অন্যতম একটি দিক। মুদ্রার সাহায্যে আমরা তৎকালীন সময়ের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভ করতে পারি। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
অর্থনৈতিক ইতিহাস রচনায় মুদ্রা : সাধারণভাবে আমরা ধারণা করতে পারি যে, যেখানে কোন রাজার মুদ্রা পাওয়া গেছে সে এলাকা ঐ রাজার রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। শিলালিপি বা তাম্রলিপির তুলনায় প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্ব কম হলেও অর্থনৈতিক ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্ব খুব বেশি। তৎকালীন মুদ্রাগুলোর ছাঁচ, হরফ ও ছবি আঁকা থেকে অনেক কিছু অনুমান করা যায়। কোন ধাতু দিয়ে মুদ্রা নির্মিত তার ধরন দেখে সভ্যতার অনেক
স্তর সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। অনেক মুদ্রা সোনা, রূপা, তামা ও ব্রোঞ্জ দিয়ে নির্মিত। তাই এটা থেকে মনে করা হয় যে, কোন শাসকের শাসনকালে অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন ছিল। এছাড়াও মুদ্রাগুলো সময় নিরূপণ করতেও সাহায্য করে। মুদ্রার সাহায্যে ইতিহাসের অনেক সাল-তারিখ সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। তাছাড়া কুষাণ রাজাদের মুদ্রা থেকে কুষাণ বংশের শাসন সম্পর্কে জানতে পারি। ঠিক তেমনি, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজাদের অঙ্কিত মুদ্রা থেকে তাদের শাসনব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে অভিহিত হতে পারি। নৌহাটি ও ভাগলপুরে সেন রাজাদের অনেক মুদ্রা পাওয়া গেছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, মুদ্রা আমাদের প্রাচীন বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে অনেক তথ্য পেতে সাহায্য করে। তাই ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্ব অনেক।