মৌলিক গণতন্ত্র কি | মৌলিক গণতন্ত্র বলতে কি বুঝ

রাষ্ট্রবিজ্ঞান

মৌলিক গণতন্ত্র জেনারেল আইয়ুব খানের এক অভিনব শাসন ব্যবস্থা। হল এমন এক ধরনের সীমিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। যেখানে সার্বজনীন ভোটাধিকার প্রদানের পরিবর্তে কিছুসংখ্যক নির্ধারিত প্রতিনিধির দ্বারা জাতীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। এটি চার স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা চালু করে। জেনারেল আইয়ুবখান ক্ষমতা দখল করার পর সকল জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি শূণ্যতা সৃষ্টি করেন। অতঃপর মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে একটি সমর্থক শ্রেণী সৃষ্টি করে সেই শূণ্যস্থান পূরণ করেন। ১৯৫৯ সালের ৩০ এপ্রিল ও ১লা মে। করাচিতে গভর্নরদের এক সম্মেলনে আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অতঃপর একই বছর ১২ – ১৩ জুন নাথিয়াগলিতে গভর্নরদের সম্মেলনে এ ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে ২৬ অক্টোবর ক্ষমতা গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ জারী করা হয়। ২৩ এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছিল, জনগণের ইচ্ছাকে সরকারের কাছাকাছি এবং সরকারী কর্মকর্তাদেরকে জনগণের কাছাকাছি এনে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ সম্পন্ন করা। আইয়ুব খানের মতে, It will be a foundation stone of a new political system in the country” তবে ব্যাপক গবেষণায় দেখা গেছে আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র (Basic Democracy) চালু করার পেছনে নিম্নলিখিত কতিপয় কারণ ছিল;

  1. সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকল্প অনুসন্ধান (Quest for Alternative to Parliamentary Democracy) : আইয়ুব
    খান বৃটেনের সংসদীয় ধাচের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন না। এ জন্য তিনি সামরিক আইন জারী করেই প্রধান মন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত করে প্রেসিডেন্টের হাতে সকল ক্ষমতা অর্পন করে নিজে প্রেসিডেন্টের পদগ্রহণ করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন শীত প্রধান দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা উষ্ণ আবহাওয়ার দেশগুলিতে অচল। তিনি তার আত্মজীবনীতে ১৯৫৬ সালের সংবিধানকে ‘কতকগুলো অকেজো রফা নিষ্পত্তির বান্ডিল বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে পাকিস্তানের মত ব্যাপক দারিদ্র ভারাক্রান্ত, অনুন্নত ও অশিক্ষিত দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র সফল হবে না। এজন্য তিনি বিকল্প অনুসন্ধান করেন। তার প্রবর্তিত মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থাকে তিনি সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার উপযুক্ত বিকল্প বলে মনে করেন ।
  2. জনগণকে জাতীয় রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্নকরণ (Disconnecting the people from the politics) :
    আইয়ুবখান চেয়েছিলেন জাতীয় রাজনীতি থেকে জনগণকে মুখ ফিরিয়ে স্থানীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতির দিকে ধাবিত করা। তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে অবশ্য এ বিষয়টিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন যে তার উদ্দেশ্য হল মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণকে তাদের আঞ্চলিক সমস্যাসমূহের সমাধানের জন্য সংগঠিত করা সমস্যাসমূহের সমাধানের জন্য সংগঠিত করা এবং তাদের আত্মনির্ভরশীল হতে উদ্দীপনা দেয়া। তার ধারণা ছিলো জনগণকে জাতীয় রাজনীতির পরিবর্তে পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে মৌলিক গণতন্ত্রী নিবার্চনের সুযোগ দিলে আঞ্চলিক কর্মকান্ডে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। এরফলে স্থানীয় উন্নয়ন গতিশীলতা আসবে।
  3.  রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতা দূরীকরণ (Amending drawbacks of political parties): আইয়ুব খান
    রাজনৈতিক দল সম্পর্কে খুবই নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতেন। তার ধারণা রাজনৈতিক দলগুলো পারষ্পরিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জনগণের ভাবাবেগ কে পুঁজি করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। এজন্য তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে একটি নতুন পদ্ধতি চালু করার প্রয়াস পান। তবে তিনি এ পদ্ধতিকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা বলে ঘোষণা করেন । তিনি ঘোষণা করেন যে দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধির মাধ্যমে জন সচেতনতা সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি চালু থাকবে।
  4. সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা (Indention of civil and military admin ) :
    আইয়ুব খান লক্ষ্য করেন তার সামরিক শাসনের প্রতি তার সেনাবাহিনীরই একাংশ এবং পূর্ব পাকিস্তানের আমলাদের বড় একটি অংশ সুপ্রসন্ন ছিলনা। পূর্বপাকিস্তানের সিভিল প্রশাসনের আমলাবৃন্দ ছিলেন মূলত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া গ্রাজুয়েট। এরা প্রগতিশীল দাবীদাওয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এজন্য তিনি সামরিক আমলা ও সিভিল আমলাদের নমন্বয় সাধনের জন্য তাদের অধিকতর সুবিধা প্রদান করেন এবং কাছাকাছি কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করেন। এ উদ্দেশ্যে ১৯৬০ – ৬৩ সময়কালে সামরিক বাহিনীর ১৪ জন কর্মকর্তাকে সিভিল প্রশাসনে নিয়োগ দেয়া হয়।
  5. টিকে থাকার উপায় অনুসান (Finding way of survival): ক্ষমতা দখলের সময় আইয়ুব খানের কোন
    রাজনৈতিক দল ছিলনা। কিন্তু ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে জনসমর্থন অবশ্যই প্রয়োজন হয়। এজন্য তিনি তার একটি সমর্থক শ্রেণী সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন। এই চার স্তর বিশিষ্ট মৌলিক ণতন্ত্রীরা হবে এক ধরনের ক্যাডার যারা আইয়ুব খানের ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করবে।

মৌলিক গণতন্ত্রের স্তর বিন্যাস

Stages of basic democracy

মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় চার স্তর বিশিষ্ট নিম্নরূপ স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব করা হয়েছিল;

১.ইউনিয়ন কাউন্সিল (Union Council)

২.থানা কাউন্সিল (Thana Council)

৩.জেলা কাউন্সিল (District Council)

৪.বিভাগীয় কাউন্সিল (Division Council)

১. ইউনিয়ন কাউন্সিল (Union counsel) : মৌলিক গণতন্ত্রের সর্বনিম্ন স্তর ছিল ইউনিয়ন কাউন্সিল। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠিত হত। ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ সংখ্যক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে ইউনিয়নের সীমা নির্ধারিত হত। পৌর এলাকায় এর নাম ছিল ইউনিয়ন কমিটি এবং ছোট শহরে এর নাম ছিল, টাউন কমিটি। ১৫ জন সদস্য নিয়ে ইউনিয়ন কাউন্সিল গঠিত। এর মধ্যে ১০ জন সদস্য নির্বাচিত হত সার্বজনীন ভোটাধিকার এর ভিত্তিতে। ১২০০ থেকে ১৫০০ ভোটারের প্রতিনিধি হিসেবে একজন সদস্য নির্বাচিত হতেন। এ নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরাই মৌলিক গণতন্ত্রী বা Basic Democrat বা DB member নামে সুপরিচিত। বাকী ৫ জন ইউনিয়ন কাউন্সিলর ছিলেন মনোনীত। তবে ১৯৬২ সালের সংবিধানে এ মনোনয়নের বিধান রহিত করা হয়। উভয় প্রদেশ (পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান) থেকে ৪০,০০০ করে মোট ৮০,০০০ মৌলিক গণতন্ত্রীর সংখ্যা নির্ধারিত হয়। এরাই প্রাদেশীক ও জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচনের কিংবা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য Electoral College হিসেবে কাজ করে ইউনিয়নের কাউন্সিলের সদস্যরা তাদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান এবং একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতেন। এভাবে গঠিত ১৫ সদস্য বিশিষ্ট ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেয়াদ ছিল ৫ বছর। এ সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসক ছাড়া অন্য কেউ এ কাউন্সিলকে ভেঙ্গে দিতে পারতেন না। এ কাউন্সিল দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতিতে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যানকে পদচ্যুত করতে পারতো। নিজস্ব কর্মকান্ডের ব্যয় নির্বাহের জন্য এ কাউন্সিল জনগণের উপর ট্যাক্স আরোপ ও তা আদায়ের অধিকার লাভ করে। ইউনিয়ন কাউন্সিল প্রত্যেক ইউনিয়নের জন্য একজন সচিব, আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গ্রাম্যপুলিতা হিসেবে চৌকিদার ও দফাদার নিয়োগ করতে পারতো। ইউনিয়ন কাউন্সিল এদের বেতন দিত। ইউনিয়নের সার্বিক উন্নয়ন আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ছোট খাট দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলার নিষ্পত্তির দায়িত্ব ছিল ইউনিয়ন কাউন্সিলের।

২. থানা কাউন্সিল (Thana council) : স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের দ্বিতীয় স্তর ছিল থানা কাউন্সিল। থানার অন্তর্ভুক্ত সকল ইউনিয়ন কাউন্সিলের (পশ্চিম পাকিস্তানে তহসীল কাউন্সিল) চেয়ারম্যানবৃন্দ এবং সমসংখ্যক থানা তহসীল পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা নিয়ে থানা বা তহসীল কাউন্সিল গঠিত হত। মহকুমা প্রশাসক (এস. ডি. ও কাউন্সিলের সভাপতি থানার সার্কেল অফিসার উন্নয়ন মহকুমা প্রশাসকের অবর্তমানে পদাধিকার বলে থাকা কাউন্সিল এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। থানার অন্তর্গত বিভিন্ন ইউনিয়ন কাউন্সিলের কাজের সমন্বয় সাধন করাই ছিল থানা কাউন্সিলের কাজ।

৩. জেলা কাউন্সিল (District council) : থানা কাউন্সিলের উপরের ধাপ ছিল জেলা কাউন্সিল। সদস্য সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ ৪০ জন। এর অর্ধেক সদস্য সরকারী কর্মকর্তা এবং বাকি অর্ধেক নির্বাচিত প্রতিনিধি। নির্বাচিত বা বেসরকারী সদস্যদের অন্তত: অর্ধেক জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানদের থেকে মনোনীত হতেন। সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন এস ডি ও নির্বাহী প্রকৌশলী (সি এন্ড বি), জেলা কৃষি কর্মকর্তা, বন বিভাগীয় কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা আনসার এডজুটেন্ট, সহকারী রেজিস্ট্রার ও সমবায় সমিতিগুলোর সদস্য। জেলা কাউন্সিলের বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক -এ দু ধরনের দায়িত্ব ছিল। জেলার শিক্ষা বিস্তার, জনস্বাস্থ্য রক্ষা রাস্তাঘাট ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা জেলা কাউন্সিলের কাজ ছিল। জেলা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে।

৪.বিভাগীয় কাউন্সিল (Division council): বিভাগীয় কাউন্সিল মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার সর্বোচ্চ ধাপ। এর মোট
সদস্য সংখ্যা ৪৫ জন এর অর্ধেক সদস্য সরকারী কর্মকর্তা এবং এবং বাকিরা জেলা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং
বিভিন্ন উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিনিধিবর্গ। সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বিভাগীয় শিক্ষা
কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-পরিচালক, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তা মনোনীত হতেন।
বেসকারী সদস্যের অন্তত অর্ধেক ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্যদের থেকে নির্বাচিত হতেন। বিভাগীয় কমিশনার
পদাধিকার বলে বিভাগীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন। বিভাগের অন্তর্গত বিভিন্ন জেলা কাউন্সিলের মধ্যে সমন্বয়
সাধন করাই ছিল বিভাগীয় কাউন্সিলের কাজ।

মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার পর্যালোচনা

Analysis of Basic Democracy

মৌলিক গণতন্ত্র জেনারেল আইয়ুব খানের এক অভিনব সৃষ্টি। এর মাধ্যমে যদিও সরকার ও নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের এক সাথে কাজ করার সুযোগ রয়েছে তথাপি এটি প্রকৃত গণতন্ত্র নয়। কেননা এতে জনগণ প্রকৃত জনপ্রতিনিধি যেমন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য জাতীয় পরিষদের সদস্য কিংবা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কোন অধিকার বা মতামত প্রকাশ করতে পারতো না। জনগণের ক্ষমতা শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় বিডি মেম্বার নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ পদ্ধতিতে জাতীয় ইস্যুতে মতামত দেয়ার কোন সুযোগ ছিলনা। থানা কাউন্সিল জেলা কাউন্সিল এবং বিভাগীয় কাউন্সিলগুলোতে অর্ধেক সরকারী কর্মকর্তা থাকায় নির্বাচিত সদস্যগণ তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। কেননা সরকারী কর্মকর্তাগণ ছিলেন বৃহত্তর আমলাতন্ত্রের অংশ। ফলে তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বাস্তবায়নেই ছিলেন যত্নশীল। এসব শিক্ষিত আমলার সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় অনগ্রসর নির্বাচিত সদস্যগণ পেরে উঠার কথা নয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে এ পদ্ধতির মাধ্যমে কৌশলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাছাড়া নির্বাচিত বিডি মেম্বারের সংখ্যা দুই প্রদেশে মাত্র ৮০
হাজার হওয়ায় ইচ্ছামত এদের কেনাবেচা করা সম্ভব ছিল। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৬০ সালের হ্যাঁ/না ভোটের সময় অভিযোগ উঠেছিল যে আইয়ুব খান এ সকল বিডি মেম্বারদের নানাভাবে প্রভাবিত করে ৭৫,২৮২ টি ভোট পেয়ে ১৯৬০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একইভাবে ১৯৬৫ সালে মিস ফাতেমা জিন্নাহর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময়ও ৮০ হাজার বিডি মেম্বারকে ভয়ভীতি প্রলোভন প্রভৃতির মাধ্যমে বশীভূত করেছিলেন। ইংরেজগণ যেমন তাদের সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করার জন্য জমিদারী প্রথা চালু করেছিলেন তেমনি আইয়ুব খান দেশের মূল রাজনীতিবিদদের রাজনীতি থেকে নির্বাসিত করে, বিডি মেম্বার সৃষ্টি করে একটি নতুন গ্রামীণ রাজনীতিক শ্রেণী সৃষ্টি করেন। এরফলে রাজনীতিতে জনগণের ভূমিকা গৌণ হয়ে যায়, সুবিধাবাদী বিডি মেম্বারদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। এটি ছিল আইয়ুব খানের এক সুচতুর রাজনৈতিক কৌশল যার দ্বারা তিনি কোন রাজনৈতিক দল সৃষ্টির ঝুঁকি না নিয়ে ও তৃণমূল পর্যায়ে সমর্থকগোষ্ঠী সৃষ্টি করেছিলেন। মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে আইয়ুব খান একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তার অনাস্থার বহি: প্রকাশ ঘটান অপর দিকে নিজেও রাজনৈতিক দল গঠনের বিরাট আয়োজন থেকে মুক্ত হয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সক্ষম হন। মৌলিক গণতন্ত্র সফলভাবে প্রবর্তন করে আইয়ুব খান দশ বছর ক্ষমতায় টিকে ছিলেন। তবে তার এ অভিনব ব্যবস্থা
এদেশের মানুষ ভালভাবে গ্রহণ করেনি। ফলে জনগণ ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই ব্যবস্থার মূলোচ্ছেদ করে।

মৌলিক গণতন্ত্রে নির্বাচকমন্ডলী ও তাদের শ্রেণি অবস্থান

Class Position of Basic Democrats

মৌলিক গণতন্ত্রে নির্বাচকমন্ডলী ছিলেন উভয় প্রদেশ থেকে ৪০ হাজার করে মোট ৮০ হাজার। মজার ব্যাপার হল
পূর্বপাকিস্তানের জনসংখ্যা ৫৬ ভাগের বেশি হলেও এক্ষেত্রে তাকে সংখ্যাসাম্য নীতি মেনে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
পূর্বপাকিস্তানের প্রতি ১২৭০ জন সাধারণ ভোটারের জন্য ১ জন বিডি মেম্বার নির্বাচিত হতেন। আর পশ্চিম পাকিস্তানে এর অনুপাত ছিল ১০৭২ জনে একজন। এই ১২৭০ জন কিংবা ১০৭২ জন সাধারণ ভোটার হল একটি ইউনিট যার নাম Electoral College. প্রতিটি ইলেক্টোরাল কলেজ থেকে ১ জন করে প্রতিনিধি (Basic Democrat) নির্বাচিত হতেন যারা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য জাতীয় পরিষদের সদস্য কিংবা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট প্রদান করতেন। এ ব্যবস্থায় জনগণ শুধু বিডি মেম্বার নির্বাচন ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারতেন না তাদের হয়ে বিডি মেম্বারগণ সে ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। সুতরাং মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় জনগণ নির্বাচকমন্ডলী ছিলেন না। ৮০ হাজার বিডি মেম্বার ছিলেন নির্বাচকমন্ডলী আইয়ুব খান প্রচলিত রাজনীতিবিদ জমিদার ও তালুকদারদের থেকে নেতৃত্ব নতুন এক শ্রেণীর হাতে হস্তান্তর করতে চেয়েছিলেন । রওনক জাহানের এক গবেষণায় দেখা গেছে রাজনীতিতে নেতৃত্বদানকারী পেশাজীবী সম্প্রদায় যেমন- আইনজীবী, ডাক্তার, শিক্ষকদের মধ্য থেকে ১৯৫৭ সালে ইউনিয়ন ছিলেন ১০.১%। ১৯৬১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ০.৬%। অপরদিকে মৌলিক গণতন্ত্রীদের একটি বড় অংশ ছিলেন খামারের মালিক। প্রান্তিক বা ভূমিহীন কৃষক এ ব্যবস্থায় নির্বাচিত হতে পারেনি।

মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনে বিভিন্ন নির্বাচন (১৯৬০ ও ১৯৬৫ সালের নির্বাচন)

Felicitous Election Under Basic Democracy

১৯৫৯ সালের ২৬ অক্টোবর মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের পর এর আলোকে ১৯৬০ সালের ১১ জানুয়ারী সারা পাকিস্তানে সার্বজনীন ভোটাধিকারের মাধ্যমে ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য বা বিডি মেম্বার বা Basic Democrats নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । ২৪ উক্ত নির্বাচনে পূর্বপাকিস্তানের ৪০ হাজার এবং পাশ্চিম পাকিস্তানে ৪০ হাজার মোট ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী বা Basic Democrats নির্বাচিত হন। অত:পর একই বছর ১৩ জানুয়ারী জেনারেল আইয়ুব খান The Presidential (Election Constitution) Order 1960 জারী করেন। ২৫ এর মাধ্যমে তিনি মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভোটে একটি রেফারেন্ডামের মাধ্যমে নিজেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন এবং একটি সংবিধান প্রণয়নের অধিকার লাভ করেন। এ অধ্যাদেশে আরও বলা হয় যে প্রেসিডেন্ট পদে তার মেয়াদকাল শুধু অন্তবর্তী কালীন সময়ের জন্য হবেনা বরং ভবিষ্যতে প্রণীত সংবিধান যে মেয়াদকাল নির্ধারণ করবে সে মেয়াদ পর্যন্ত হবে। ১৯৬০ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারী গোপন ব্যালেটে বিডি মেম্বারগণ আইয়ুব খানকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করেন। এ নির্বাচনের ৭৮৭২০ টি ভোট পড়ে; তন্মধ্যে হ্যাঁ ভোট পড়ে ৭৫,২৮২ টি অর্থাৎ শতকরা ৯৫ .৬ ভাগ ভোট পেয়ে আইয়ুব খান পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।২৬ এভাবে আইয়ুব খান তার অবৈধ সামরিক শাসনকে বৈধ করার প্রথম ধাপ উত্তীর্ণ করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারী তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২৭ অতঃপর একটি শাসনতন্ত্র কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশনের সুপারীশের আলোকে ১৯৬২ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় পরিষদ এবং ৬ মে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের বিরুদ্ধে ছাত্ররা প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলে। এর ফলে আওয়ামীলীগ ও ন্যাপ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। দল বিহীন নির্বাচনে মুসলিম লীগ অংশগ্রহণ করে এবং এককভাবে নির্বাচিত হয়। ১৯৬২ সালের ৮ ই জুন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসে এবং নতুন সংবিধানের আলোকে আইয়ুবী শাসন শুরু হয়। নতুন সংবিধানের আলোকে ১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারি পুণরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল মুসলিমলীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী এবং নেজামে ইসলামী সম্মিলিত ‘বিরোধীদল’ (Combined Opposition Party – COP) গঠন করে মিস ফাতেমা জিন্নাহকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে। COP – এর পক্ষ থেকে লে. জে. আযম খান (যিনি পূর্ববাংলার গভর্নর
ছিলেন এবং গভর্নর হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন) কে মনোনীত করার ইচ্ছা থাকলেও মওলানা ভাসানীর বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। লে. জে আযম খান আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে শক্ত প্রার্থী হতে পারতেন। কিন্তু তা না করে মিস ফাতেমা জিন্নাহকে প্রার্থী করায় পাকিস্তানের মত প্রতিক্রিয়াশীল একটি রাষ্ট্রে সুবিধা হয়নি। যাহোক মিস ফাতেমা জিন্নাহ পূর্বপাকিস্তানে ভাল ভোট পেয়েছিলেন তবে নির্বাচিত হতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তানে আইয়ুব খান ৭৩.৭% ভোট পান কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে পান ৫৩.১% ভাগ। এ নির্বাচনে মৌলিক গণতন্ত্রীদের বোঝানো হয় যে ফাতেমা জিন্নাহ নির্বাচিত হলে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থাই থাকবে না। সুতরাং শ্রেণীস্বার্থে মৌলিক গণতন্ত্রীরা আইয়ুব খানকেই নির্বাচিত করেন।
অত:পর ১৯৬৫ সালের ২১ শে মার্চ জাতীয় পরিষদের এবং ১৬ মে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । এ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে কনভেনশন মুসলিম লীগ (আইয়ুব সমর্থিত) ১১৫ টি, কপ (COP) ৯টি, এন ডি এফ ৪ টি এবং স্বতন্ত্র সদস্য ১৮টি পদে নির্বাচিত হয়। পূর্বপাকিস্তানের ১১৫ টি প্রাদোশিক পরিষদের আসনে কনভেনশন মুসলিম লীগ পায় ৬৬ টি আসন। স্বতন্ত্র সদস্যসংখ্যা ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য যার বেশির ভাগই পরবর্তীতে মুসলিমলীগ যোগদান করে ।

মৌলিক গণতন্ত্রের ফলাফল

Outcome of Basic Democracy

মৌলিক গণতন্ত্র ছিল আইয়ুব খানের বেসামরিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ। তিনি এরূপ গণতন্ত্র চালু করে পাকিস্তানে এক ধরনের আধা-সামরিক শাসন জারী রেখে দশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তরি এ গণতন্ত্রে পাকিস্তানের জনগণের ভোটাধিকার কৌশলে কেড়ে নিয়ে সদ্য গড়ে ওঠা একটি সুবিধাবাদী ধনিক ও টাউট রাজনীতি শ্রেণীর হাতে ন্যস্ত করেন। এ আইনের আলোকে। তিনি ১৯৬২ সালে একটি সংবিধান প্রদান করেন যা আইয়ুবের সংবিধান নামে পরিচিত। আইয়ুব খান দাবী করেন যে মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে তিনি জনগণকে সরকারের কাছাকাছি এনেছেন। তিনি তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন, ‘মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমরা জনসাধারণকে এমনভাবে সংঘবদ্ধ ও জাগরিত করতে সক্ষম হয়েছি যে তাদের মধ্যে। আত্মনির্ভরশীলতা এবং অংশগ্রহণ করার স্পৃহা জাগ্রত হয়েছে। জনসাধারণ ও অফিসারদের মধ্যে যে দুরত্ব ছিল তা দূরীভূত হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, ১৯৬০ সালে যখন মৌলিক গণতন্ত্রী নির্বাচনের আয়োজন করা হয় তখন সাধারণ জনগণ জানতো না যে এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কিংবা জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে তাদের কোন ভোটাধিকার থাকবেনা। যখন তা প্রকাশিত হয় তখন জনগণ নিজেদের প্রতারিত ভাবতে থাকে । রওনক জাহান, রাশিদুজ্জামান, লেনিন আজাদ; প্রীতিকুমার মিত্র, প্রফেসর সফর আলী আকন্দ প্রমুখের গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে এর ফলে প্রকৃত রাজনীতিবিদগণ রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হয়েছেন। ১৯৬০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ একচেটিয়াভাবে এ নির্বাচনের
মাধ্যমে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তাদের কোন গণভিত্তি ছিলনা। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তারা যেভাবে উচ্ছেদ হয়েছিলেন তেমনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও তারা গণপ্রত্যাখ্যাত হন। ১৯৬০ সালের মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে তাদের বিজয় তাদেরকে আরও গণবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মৌলিক গণতন্ত্রে ইউনিয়ন কাউন্সিলকে ১৯৬৪ সালে ৩৭ ধরনের কর্মকান্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ২৮ এদের মধ্যে কৃষি, পশুপালন, বৃক্ষরোপন, কুটির শিল্প মৎস্য প্রকল্প, সেচ, সড়ক যোগাযোগ, সমবায়, স্বাস্থ্যসেবা, বয়স্ক শিক্ষা প্রভৃতি অন্যতম, এজন্য ইউনিয়ন কাউন্সিলকে করধার্য ও রাজস্ব আদায়েরও ক্ষমতা প্রদান করা হয় । কিন্তু গ্রামের জনগণের ব্যাপক দারিদ্রের কারণে কাউন্সিলগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রাজস্ব আদায় করতে পারেনি। এদিকে সরকারী বরাদ্দও ছিল অপ্রতুল। তাছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সরকারী বরাদ্দের অর্থ ছাড় করতেও বেগ পেতে হয়। জেলা ও বিভাগীয় কাউন্সিলে অর্ধেক সদস্য সরকারী কর্মকর্তা হওয়ায় এবং এ সকল সরকারী
কর্মকর্তা সরকারী নানা কাজে ব্যস্ত থাকার তাদের পক্ষে জেলা কাউন্সিল ও বিভাগীয় কাউন্সিলের সমন্বয় করা সম্ভব হয়নি এর ফলে আমলাদের সহযোগিতার অভাবে নির্বাচিত সদস্যগণও কাজ করতে পারেন নি। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ইউনিয়ন থেকে থানা, থানা থেকে জেলা এবং জেলা থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে অনুমোদনের পরই কেবল বাস্তবায়ন করা যেত। প্রায়ই দেখা যেত এই স্তরগুলোর লালফিতার দৌরাত্ম উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে দীর্ঘসূত্রিতায় পর্যবসিত করে এবং বহু প্রকল্প শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। গবেষণায় দেখা গেছে ইউনিয়ন কাউন্সিলের সিদ্ধান্তগুলির শতকরা ৮৫ টি থানা কিংবা জেলা কাউন্সিলে গিয়ে অনুমোদন পায়নি। ১৯৬১ সালে মৌলিক গণতন্ত্র বাস্তবায়নের সহায়তা স্বরূপ পি এল ৪৮০ সহযোগিতা চুক্তির আওতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৬৪১ মিলিয়ন ডলার অর্থ প্রদান করে। এ প্রোগ্রামের আওতায় স্থানীয় অবকাঠামো, খাল- খনন স্কুল ঘর নির্মাণ রাস্তা নির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে মৌলিক গণতন্ত্রীদের পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেয়া হয়। কিন্তু অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান দেখিয়েছেন যে এ প্রোগ্রামের উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অনেক সময় সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে বিডি মেম্বারগণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। কেননা অর্থ বরাদ্দের পর হিসেবপত্রে প্রচুর অনিয়ম পাওয়া যায়। ফলে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা এক ধরনের দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়। তাছাড়া আমলাদের অত্যাধিক নিয়ন্ত্রণের ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সৎ ইউনিয়ন কাউন্সিলর কাজ করতে পারেন নি। লেনিন আজাদ বলেন, মৌলিক গণতন্ত্রীরা যেমন
একদিকে ছিল গ্রামীণ সমাজের শোষক তেমনি তারাই ছিল জাতীয় শোষকের স্থানীয় প্রভু।



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

nine − 2 =