রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) ২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ (৭ মে, ১৮৬১ খ্রি.) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন । জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের আসল পদবী ছিল ‘কুশারী’। পারিবারিকভাবে তাঁরা জমিদার ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষেরা বাংলাদেশের বর্তমানে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বাস করতেন। তাঁর পিতার নাম ছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতার নাম সারদা দেবী। ১৮৬৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বোলপুরে ‘শান্তি নিকেতন নামক একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তি নিকেতনে ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’ নামক বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯২১ সালে ‘বিশ্বভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। হিন্দু-মুসলমানের মিলনের জন্য তিনি রাখি উৎসবের প্রচলন করেন। ১৯১৩ সালের নভেম্বর মাসে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি নোবেলজয়ী প্রথম ভারতীয় তথা এশীয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই ‘গীতাঞ্জলি’ ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। ইংরেজিতে অনূদিত গীতাঞ্জলি গ্রন্থটির (Song Offerings) ভূমিকা লেখেন W. B. Yeats । কবি অমিয় চক্রবর্তী বিশ্বকবির ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ১৯১৫ সালে তৎকালীন ভারত সরকার তাকে ‘স্যার’ বা ‘নাইট’ উপাধি প্রদান করে। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯১৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৩০ সালে জার্মানিতে আইনস্টাইনের সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। সাক্ষাতে তিনি দর্শন, মানুষ ও বিজ্ঞান নিয়ে আলাপচারিতা করেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, নওগাঁর পতিশ্বর প্রভৃতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২বার (১৮৯৮খ্রি., ১৯২৬ খ্রি.) ঢাকায় আসেন ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যু
২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ (৭ আগস্ট, ১৯৪১ খ্রি.) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০০৪ সালের ২৪ মার্চ ‘শান্তি নিকেতন’ হতে তার নোবেল পুরস্কার চুরি যায়।
অমর্ত্য সেন ও অমর্ত্য সেনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
অমর্ত্য সেন (Amartya Sen) ১৯৩৩ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনি জনকল্যাণ অর্থনীতি, দুর্ভিক্ষ-ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যের অন্তর্নিহিত কারণ নিয়ে গবেষণা করেন। স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। অমর্ত্য সেন বর্তমানে হাভার্ড বিশ্বদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক। তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি ভারতের নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য ছিলেন। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির দিক থেকে তিনি দ্বিতীয় বাঙালি, উপমহাদেশে ষষ্ঠ এবং ২৭তম এশীয়। তিনি অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী প্রথম এশীয়। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Poverty and Famine’, ‘The Idea of Justice’, ‘Identity and Violence: The illusion of destiny’।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) বাংলাদেশী নোবেল বিজয়ী ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ। তিনি ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিষয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন । তিনি ক্ষুদ্রঋণ (Microcredit) এবং ‘সামাজিক ব্যবসা’ ধারণার প্রবর্তক। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির দিক থেকে তিনি প্রথম বাংলাদেশি, তৃতীয় বাঙালি, উপমহাদেশের সপ্তম এবং ৩৮তম এশীয়। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির দিক থেকে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৮৪ খ্রি.), স্বাধীনতা দিবস পদক (১৯৮৭ খ্রি.), আগা খান পুরস্কার (১৯৮৯ খ্রি.), মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার (২০০২ খ্রি:), যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ (২০০৯ খ্রি.), যুক্তরাষ্ট্রের ‘কনগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল’ (২০১০ খ্রি:) সহ অনেক পুরস্কার লাভ করেন । তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘দারিদ্র্যহীন বিশ্বের অভিমুখে’ এবং ‘Banker to the Poor’ ।