রাজতন্ত্র কি | নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র

রাষ্ট্রবিজ্ঞান

রাজতন্ত্র কি 

রাজতন্ত্র হল সরকারের একটি রূপ যেখানে একজন একক ব্যক্তি, সাধারণত একজন রাজা বা রাণী, একটি রাষ্ট্র বা অঞ্চলের উপর সর্বোচ্চ ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব ধারণ করে। এই ব্যক্তি, রাজা হিসাবে পরিচিত, সাধারণত একজন বংশগত শাসক যিনি পূর্বে উপাধি ধারণকারী পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তাদের অবস্থান উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকেন।

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাস

অথবা, ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের উদ্ভব সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা দাও।
অথবা, ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের উৎপত্তি সম্পর্কে লিখ।
অথবা, ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের বিকাশ হয় কিভাবে?

ব্রিটেনের রাজতন্ত্র সমগ্র ইউরোপের একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ১৬৪৯ থেকে ১৬৬০ সাল পর্যন্ত এগারো বছর ব্রিটেনে রাজতন্ত্র ছিল না। এ সময়ে ব্রিটেনে অলিভার ক্রমওয়েলও রিচার্ড ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সীমিত এ কয়েক বছরের কথা বাদ দিলে রাজতন্ত্র তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।

রাজতন্ত্রের উদ্ভব : ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের সূত্রপাত ঘটেছে নবম শতাব্দীর তৃতীয় দশকে। ৮২৯ সালে রাজা হার্বাট এর সময় থেকে আজ পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজতন্ত্র ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। পঞ্চম শতাব্দীতে মূল ইউরোপীয় ভূখণ্ড থেকে এ্যাংলো-স্যাক্সসন প্রভৃতি উপজাতির লোকেরা ইংল্যান্ডে আসে। তারা স্থানীয় মৌলিক উপজাতিদের বিতাড়িত করে এবং বসতি স্থাপন করে। এ সময় থেকেই এখানে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সূত্রপাত ঘটে। এ এ্যাংলো-স্যাক্সন উপজাতি লোকেরা এক-একজন প্রধানের অধীনে সাতটি রাজা স্থাপন করে। তাদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। উপজাতিগুলোর মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষে যে উপজাতি জয়লাভ করতো সেই বিজয়ী উপজাতির প্রধান রাজকীয় মর্যাদা ও কর্তৃত্ব দাবি করতেন। এভাবে নবম শতাব্দীতে ওয়েমক্স রাজ্য বাকি ছয়টি রাজ্যের উপর কর্তৃত্ব কায়েম করে। সমস্ত অধিকৃত অঞ্চল একজন সার্বভৌমের অধীনে আসে। এভাবে নবম শতাব্দীতেই এ্যাংলো স্যাক্সসন যুগে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সৃষ্টি হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ক্রমওয়েলের মৃত্যুর দু’বছরের মধ্যেই সাধারণতন্ত্রের অবসান ঘটে, স্টুয়ার্ট রাজবংশ আবার ক্ষমতাসীন হয় এবং ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত
হয়। বস্তুত ১৬৮৮ সালের গৌরবময় বিপবের সময় থেকে গ্রেট ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থা সাধারণভাবে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

ব্রিটেনের রাজতন্ত্র টিকে থাকার কারণ

ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বহু শতাব্দী ধরে টিকে আছে এবং দেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়ে গেছে। রাজতন্ত্র সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়েছে, দেশের জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসাবে তার অপরিহার্য ভূমিকা বজায় রেখে পরিবর্তনশীল সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।

ব্রিটিশ রাজতন্ত্র একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যার অর্থ দেশের সংবিধান এবং আইন দ্বারা রাজার ক্ষমতা সীমিত। রাজার ভূমিকা মূলত আনুষ্ঠানিক, সরকারী অনুষ্ঠানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে, জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করে এবং সম্মান প্রদান এবং উপাধি প্রদানের মতো অন্যান্য দায়িত্ব পালন করে।

একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র হওয়া সত্ত্বেও, ব্রিটিশ রাজা এখনও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এবং বিশ্ব মঞ্চে যথেষ্ট নরম ক্ষমতার অধিকারী। রাজপরিবারের জনসাধারণের উপস্থিতি, দাতব্য কাজ এবং সাংস্কৃতিক তাত্পর্য তাদের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব করে চলেছে, বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ লোক তাদের জীবন এবং কার্যকলাপ অনুসরণ করে।

ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের টিকে থাকার জন্য অনেকগুলি কারণের জন্য দায়ী করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে পরিবর্তিত সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, দেশের পরিচয়ের জন্য এর প্রতীকী গুরুত্ব এবং স্বতন্ত্র রাজাদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা। যদিও রাজতন্ত্রকে ঘিরে সমালোচনা এবং বিতর্কের সময়কাল হয়েছে, এটি ব্রিটিশ জীবনে একটি স্থিতিস্থাপক এবং স্থায়ী প্রতিষ্ঠান হিসাবে রয়ে গেছে।

নেপালের রাজতন্ত্র বিলুপ্তির কারণ

নেপালে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ছিল একটি জটিল এবং বহুমুখী প্রক্রিয়া যা বেশ কয়েক বছর ধরে বিস্তৃত ছিল এবং এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ঐতিহাসিক কারণ জড়িত ছিল।

নেপালে রাজতন্ত্র দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে টিকে ছিল, কিন্তু 20 শতকের শেষের দিকে এটি ক্রমবর্ধমান বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল। 1996 সালে, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ শুরু করে, যার ফলে এক দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। রাজতন্ত্রকে অনেকে সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত হিসাবে দেখেছিল এবং ফলস্বরূপ, এটি তার জনপ্রিয় সমর্থন হারিয়েছে।

2001 সালে, নেপালের রাজপরিবার একটি দুঃখজনক ঘটনার সাথে জড়িত ছিল যেখানে ক্রাউন প্রিন্স, দীপেন্দ্র তার নিজের জীবন নেওয়ার আগে তার পিতামাতা সহ রাজপরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে হত্যা করেছিলেন। এই ঘটনাটি রাজতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থাকে আরও ক্ষয় করে এবং রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে সিংহাসনে আরোহণের দিকে নিয়ে যায়।

তার শাসনামলে, রাজা জ্ঞানেন্দ্র তার মাওবাদী বিদ্রোহ এবং তার কর্তৃত্ববাদী শাসন পরিচালনার জন্য ক্রমবর্ধমান সমালোচনার সম্মুখীন হন। 2005 সালে, তিনি নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করেন এবং দেশের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা ব্যাপকভাবে নিন্দা করেছিল এবং নেপালে ব্যাপক বিক্ষোভ ও নাগরিক অস্থিরতার দিকে পরিচালিত করেছিল।

2006 সালে, কয়েক মাস বিক্ষোভ ও আলোচনার পর, রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয় এবং নেপালকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। এই সিদ্ধান্তকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলির দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল, যারা এটিকে গণতন্ত্র এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের দিকে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসাবে দেখেছিল।

সংক্ষেপে, নেপালে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতিতে রাজতন্ত্রের ভূমিকার বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান জনবিরোধিতা, একটি মর্মান্তিক ঘটনায় রাজপরিবারের সম্পৃক্ততা এবং রাজা জ্ঞানেন্দ্রের কর্তৃত্ববাদী শাসন সহ বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণের ফলাফল। . এই কারণগুলি শেষ পর্যন্ত একটি জনপ্রিয় আন্দোলনের দিকে পরিচালিত করে যা সফলভাবে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটায় এবং নেপালে বৃহত্তর গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের পথ প্রশস্ত করে।

নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বলতে কি বোঝায়?

রাজতন্ত্র একটি সুপ্রাচীন শাসন ব্যবস্থা। গণতন্ত্রের বিপরীতধর্মী শাসনব্যবস্থা হলো রাজতন্ত্র । এ ধরনের শাসন ব্যবস্থায় সংবাদপত্রের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় এবং রাজতন্ত্র বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা সহ্য করা হয় না।
রাজতন্ত্রের সংজ্ঞা : সাধারণ অর্থে রাজতন্ত্র হলো এমন শাসন ব্যবস্থা যেখানে সরকারের সমস্ত ক্ষমতা এক ব্যক্তি একনায়কের হাতে কুক্ষিগত থাকে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাজতন্ত্রের সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। নিচে কিছু প্রামাণ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো :মতে,“রাজতন্ত্র অধ্যাপক নিউম্যান (Newman)-এর বলতে আমরা এমন এক ধরনের শাসনকে বুঝি যেখানে এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা করায়ত্ত করেন এবং বাধাহীন ও একচেটিয়াভাবে তা প্রয়োগ করে থাকে।” (By dictatorship we understand the rule of a person or group of persons who arrogate to themselves and monopolise power in the state, exercising it without mestraint.) রজার ফ্রুটন (Roger Scruton) বলেছেন, “রাজতন্ত্র হচ্ছে এমন এক ধরনের সরকার ব্যবস্থা যেখানে কোনো ব্যক্তি সংস্থা, গোষ্ঠী বা দল সকল রাজনৈতিক কাজকর্ম পরিচালনা করার ক্ষমতা লাভ করে এবং সকল নাগরিকের নিকট থেকে আনুগত্য আদায় করে।” (Dictatorship is a system of government is which one person, office, faction or party is empowered to dictate all political action and compel obedience from all other citizens.) প্লেটো ও এরিস্টটলের মতে, “যখন রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা একজনের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং সে নিজের স্বার্থের জন্য শাসন করে তখন তাকে স্বৈরতন্ত্র বা রাজতন্ত্র বলে।” অস্টিন রেণীর মতে, “যে শাসন ব্যবস্থায় সরকারের সকল ক্ষমতা কোনো একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির হাতে কেন্দ্রীভূত হয় তাকে রাজতন্ত্র বলে ।
উপসংহার : সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে, রাজতন্ত্র একজনমাত্র ব্যক্তির শাসন এবং ব্যক্তি তার নিজের সুযোগ-সুবিধা মতো শাসনকার্য পরিচালনা করে। রাজতন্ত্র “এক জাতি, একদল ও এক নেতা” -এই নীতিতে বিশ্বাসী

ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
অথবা, ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থার তাৎপর্য কি?
অথবা, ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা
বর্ণনা কর।

প্রথার উপর ভিত্তি করে ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র রচিত হয়েছে। প্রথা বলতে এমন সব অভ্যাস, ঐতিহ্য, বুঝাপড়া, রীতিনীতি যা আদালত কর্তৃক আইন হিসেবে বলবৎযোগ্য না হলেও নিয়মিত পালন করা হয় এবং যা বিভিন্ন সরকারি কার্যকলাপ ও পারস্পরিক সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রথাগত বিধানের গুরুত্ব : ব্রিটেনের শাসনতন্ত্রে প্রথার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। নিম্নে প্রথাগত গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. সংবিধানের প্রধান চালিকাশক্তি : ব্রিটেনের সংবিধানের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিধিবিধান কিভাবে প্রয়োগ করা হবে তা প্রধান চালিকাশক্তি হলো ব্রিটেনের প্রথাগত বিধান। আইনের প্রথার মাধ্যমে স্থিরকৃত হয়। শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি শাসনকার্যে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মেনে চলা হয়।
২. শাসনব্যবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা করে : প্রথাগত বিধান ব্রিটেনের সংবিধানের ভারসাম্য রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথা অমান্য হলে শাসনব্যবস্থায় অচলাবস্থা দেখা দেয় ফলে প্রশাসনিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। সরকার অচল ও গতিহীন হয়ে পড়বে, এজন্য জনগণও প্রথাগত বিধান মেনে চলবে।
৩. ঐতিহ্যের সংরক্ষণ : ব্রিটিশ জাতি অতিমাত্রায় রক্ষণশীল তবে পুরাতন ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রথাগত বিধান বা শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি ও পুরাতন ঐতিহ্যের নিদর্শন। তাই পুরাতন ঐতিহ্য রক্ষাকল্পে ব্রিটিশ সংবিধানে শাসনতান্ত্রিক বিধিবিধানের পাশাপাশি প্রথাগত বিধানের গুরুত্বকে স্বীকার করা হয়।
৪. আইনের ফাঁক পূরণ : প্রথাগত বিধানে আইনের ফাঁক পূরণ করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মাংস ছাড়া। মানবদেহ যেমন কঙ্কালে পরিণত হয়। তেমনি প্রথাগত বিধান। সাংবিধানিক রীতিনীতি ছাড়া আইনের কাঠামো পরিপূর্ণতা ও গতিশীলতা ফিরে পায় না।
৫. গণতন্ত্র বিকাশের ক্ষেত্রে : ব্রিটেনের নিয়মতান্ত্রিক সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থার বিকাশ ধারায় প্রথা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা |পালন করে। ব্রিটেনের শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা রাজার নিকট ধীরে ধীরে জনগণের কাছে হস্তান্তরিত হয়ে থাকে শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি বা প্রথাসমূহের কারণে।
৬. বিপবের সম্ভাবনা কমায় : শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিগুলো ব্রিটেনে একটি সুপরিবর্তনীয় শাসন কাঠামো গড়ে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে জেনিংস মন্তব্য করেছেন। পরিবর্তিত সামাজিক প্রয়োজনীয়তা ও রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণার সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে শাসনতান্ত্রিক রীতি-নীতিগুলো একটি সুপরিবর্তনীয় শাসন কাঠামো গড়ে তুলেছে, যার ফলে যুক্তরাজ্যে রক্তক্ষয়ী বিপবের হাত থেকে রক্ষা পায় ।
৭. ধারাবাহিকতা রক্ষা : প্রথাগত বিধি-বিধানের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ও পরিবর্তনশীলতা বজায় রাখা সম্ভব। এই ধারাবাহিকতার কারণেই শাসনতন্ত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এটি ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থায় প্রথাগত বিধান একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। ব্রিটিশ সাংবিধানিক রীতিনীতির পরিবর্তনের গতিকে প্রতিরোধ করে এটি ক্রমবিকাশের পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

ব্রিটেনের সমাজ উপর রাজশক্তির প্রভাব সম্পর্কে লিখ।
অথবা, ব্রিটেনের সমাজ ও সংস্কৃতির উপর রাজশক্তির প্রভাব বর্ণনা কর।
অথবা, ব্রিটেনের সমাজ ও সংস্কৃতির উপর রাজশক্তির ইতিবাচক নেতিবাচক প্রভাব সংক্ষেপে লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটিশ রাজতন্ত্র পৃথিবীর একটি প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান ব্রিটেনের প্রাচীন সংস্কৃতি, কৃষ্টি, শ্রদ্ধাবোধ, ভৌগোলিক এক আর্থ-সমাজিক-প্রেক্ষাপট হিসেবে রাজতন্ত্র জনগণের মনে একচেটিয়া সমর্থনে টিকে আছে। ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায়, সমাজ সংস্কৃতির উপর রাজা বা রানির মর্যাদা তথা রাজশক্তির ব্যাপক
প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
ব্রিটেনের সমাজ সংস্কৃতির উপর রাজশক্তির প্রভাব : ব্রিটেনের সমাজ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে জনজীবনের উপর রাজ পরিবারের প্রভাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজপরিবার সকল ব্যক্তি দেশবাসীর কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী তাদের সামাজিক রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, আদব-কায়দা, পোশাক পরিচ্ছদ, ধর্ম নৈতিকতা প্রভৃতি জনগণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। ইংরেজদের শিক্ষা সংস্কৃতির মূল উৎস হিসেবে রাজ পরিবারের গুরুত্ব কম নয়। তাছাড়া জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনার পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে রাজ পরিবারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক ক্রিয়ামূল বলেছেন, “The royal family stands at the principle of British society, setting the standers of popular taste and conduct”. আবার শিল্পকলা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে উৎসাহ ও উদ্যোগ দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রসমূহে দেশের উন্নয়ন উৎকর্ষ সাধনের ব্যাপারে রাজা বা রানি অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ
করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতির ব্যাপারে রানি এলিজাবেথের অনুকূল ভূমিকা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে । সমাজ সংস্কৃতির রাজার মর্যাদা ও প্রভাব রাজতন্ত্রের অস্তি ত্বকে দূর করতে অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটেনে সমাজ সংস্কৃতি ও জনজীবনের উপর রাজপরিবারের প্রভাব বিশেষভাবে উলে- খযোগ্য। মূলত রাজপরিবারের সকল ব্যক্তি দেশবাসীর কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।

ব্রিটেনে রাজতন্ত্র টিকে থাকার
কারণগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ব্রিটেনে রাজতন্ত্র টিকে আছে কেন?
অথবা, ব্রিটেনে রাজতন্ত্র টিকে থাকার যুক্তিসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, ব্রিটেনে রাজতন্ত্র টিকে থাকার কারণগুলো কি কি?

উত্তর : ভূমিকা : গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ হতে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ব্রিটেনের এখনও রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন আছে। ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের ইতিহাস দেড় হাজার বছরের পুরনো। তবে ১৬৬৮ সালের বিপ্লবের পর ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্রের নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অবসান ঘটেছে। ইংল্যান্ডের রাজা এখন নিয়মতান্ত্রিক সরকার, তবে তাঁর প্রকৃত কোনো ক্ষমতা নেই। কিন্তু ব্রিটেনে এখনও রাজতন্ত্র টিকে আছে।
১. ইংরেজ জাতির রক্ষণশীল চরিত্র রক্ষণশীল মনোভাব সম্পন্ন ইংরেজ জাতি পুরাতনকে বর্জন না করে তাকে বিবর্তন করে যুগোপযোগী করে তোলে এবং জাতীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত
করে রাখে। তাই রাজতন্ত্র প্রাচীন প্রতিষ্ঠান হয়েও তাদের অন্ত রের অতল গহ্বরে সমমর্যাদায় প্রোথিত হয়ে আছে।
২. রাজতন্ত্রের জনপ্রিয়তা : ব্রিটিশ রাজতন্ত্র কেবল রাজা রানির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে। আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মতো নয়। এটি রাজা বা রানির হাতে থাকে বলে জনপ্রিয় বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে।

৩. নিরপেক্ষ রাজনীতি : ইংল্যান্ডের রাজা বা রানি সবর্দা রাজনীতি বা দলাদলির ঊর্ধ্বে অবস্থান করে। এ কারণে রাজা বা রানি যেকোনা বিরোধে মধ্যস্থতা করতে পারে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে রাজা বা রানির যে অভিজ্ঞতা হয় তার প্রেক্ষিতেই তারা মন্ত্রিসভাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারে। এগুলো রাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
৪. রাজা বা রানির ব্যক্তিগত ভূমিকা : কোনো কোনো রাজা বা রানির ব্যক্তিগত চরিত্র রাজশক্তির প্রভাব ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, রানি ভিক্টোরিয়া অনেকের নিকটই মাতৃস্বরূপ ছিলেন। রাজ্যে পঞ্চম জর্জকে জনসাধারণ দেশের পিতার ভূমিকার অধিষ্ঠিত করেছিল।
৫. কেবিনেটকে পরামর্শদান : এই রাজতন্ত্র ব্রিটেনের কেবিনেটকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে। কেবিনেটকে রাজা বা রানি তাদের প্রয়োজন অনুসারে দায়িত্ব প্রদান করে থাকে।
৬. জাতীয় ঐক্যের প্রতীক : রাজশক্তি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক স্বরূপ। রাজশক্তি সরকারের ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি
করতে সাহায্য করে কেননা সরকারি ও বিরোধী উভয় দল রাজার বিশ্বস্ত ও অনুগত বলে বিবেচিত।
৭. ব্যয়বহুল নয় : গণতান্ত্রিক দেশসমূহের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। এই দিক দিয়ে হিসেব করলে দেখা যায় ব্রিটিশ রাজতন্ত্র ব্যয়বহুল নয়। এটি বংশানুক্রমিকভাবে নির্বাচিত হয়ে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজতন্ত্র ব্রিটেনের এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা যুগ যুগ ধরে সকল শ্রেণির লোকের অনুমোদনের উপর টিকে আছে। ব্রিটেনে রাজতন্ত্র টিকে থাকার বহুবিধ কারণ বিদ্যামান। যে রাজতন্ত্র টিকে থাকার বহুবিধ কারণ থাকা সত্ত্বেও মূলত অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণই এর মধ্যে প্রধান।

ব্রিটেনের রাজতন্ত্র কি গণতন্ত্রের পরিপন্থি?
তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
অথবা, ব্রিটিশ রাজতন্ত্র কি গণতন্ত্রের পরিপন্থি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, “ব্রিটেনের রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র পরস্পরের পরিপন্থি” -উক্তিটি বিশ্লেষণ কর। ব্যবস্থা

উত্তর : ভূমিকা : গ্রেট ব্রিটেনকে গণতন্ত্রের জন্মভূমি হিসেবে অভিহিত করা হলেও শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এখানে রাজতন্ত্র টিকে আছে। শুধু টিকে আছে বলে বললে এ ব্যবস্থার মূল্যায়ন করা হবে না; বরং রাজশক্তি অস্তিত্বের সাথে রাজনৈতিক এমন অঙ্গা-অঙ্গীভাবে জড়িত যে, রাজতন্ত্র উচ্ছেদের সাথে সাথে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হয়। সুতরাং এ ব্যবস্থা উচ্ছেদের নয়।
রাজতন্ত্র গণতন্ত্রের পরিপন্থি কি-না : নিম্নে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র যে গণতন্ত্রের পরিপন্থী নয় তা আলোচনা করা হলো :
১. রাজা বা রানি শাসন করেন না : সংসদীয় শাসনব্যবস্থার রীতি অনুসারে ব্রিটেন সরকারের সকল কার্যকরী ক্ষমতা পার্লামেন্টের কাছে দায়িত্বশীল মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত থাকে। যদিও রাজা তত্ত্বগতভাবে সকল ক্ষমতার অধিকারী তথাপি বাস্তবে তিনি শাসন করেন না। আর তিনি শাসন করেন না বলেই কোনো বিষয়ে
হস্তক্ষেপ করেন না। আর তাই গণতন্ত্র রাজতন্ত্রের পরিপন্থি নয়।
২. ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের গণতন্ত্রীকরণ : ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের গণতন্ত্রীকরণ সংঘটিত হয়েছে। ব্রিটিশ রাজতন্ত্র গণতন্ত্র বিকাশের পথে কখনই কোনো রকম বাধার সৃষ্টি করেনি। ব্রিটেনে গণতন্ত্র ও সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার উদ্ভব ও বিকাশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজতন্ত্র পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে নিজেকে অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে নিয়েছে।
৩. গণতান্ত্রিক বিকাশের পথে প্রতিবন্ধক নয় : যুগের পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে রাজতন্ত্র নিজেকে যুগোপযোগী করে মানিয়ে নিয়েছে। Ogg and Zink এর মতে, ইংল্যান্ডে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে তা প্রতিবন্ধক হয় উঠেনি। বরং রাজতন্ত্র নিজেকে গণতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত করেছে।
৪. সংস্কারমূলক কাজে রাজা বা রানির অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের অন্যতম কাজ নব নব সংস্কার সাধন করা। ব্রিটেনে
রাজশক্তি বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রসারিত করার পদ্ধতিকে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছে।
৫. সংসদীয় শাসনব্যবস্থার আবশ্যিক কাজ : ব্রিটেনে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে রাজতন্ত্র অবস্থিত
অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কারণ সংসদীয় শাসন ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধানের উপস্থিতি । তাই রাজা বা রানির সংসদীয় শাসনব্যবস্থাকে আবশ্যিক অঙ্গ বলে
স্বীকার করে নেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ রাজতন্ত্র গণতন্ত্র বিকাশের পথে প্রতিবন্ধক নয়। ব্রিটেনের রাজতন্ত্র সকল শ্রেণির মানুষের অনুমোদন লাভ করেছে। তাই Prof. Jennings বলেছেন, “রাজতন্ত্র হঞলো ব্রিটিশ সংবিধানের বন্ধন গ্রন্থি স্বরূপ। বর্তমানে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র রাষ্ট্রশক্তির কর্ণধার নয়, কিন্তু অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অঙ্গ।”

রাজশক্তির ক্ষমতার উৎসগুলো কি কি?
অথবা, ক্ষমতার ভিত্তিগুলো কি কি?
অথবা, রাজশক্তির ক্ষমতার উৎসসমূহ সংক্ষেপে।


উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটেনের রাজতন্ত্র ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় | একটি প্রাচীনতম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।
ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের সূত্রপাত ঘটে পঞ্চম শতাব্দীর তৃতীয় দশকে। পঞ্চম শতাব্দীতে মূল ইউরোপীয় ভূ-খণ্ড থেকে এ্যাংলো। স্যাক্সসন প্রভৃতি উপজাতির লোকেরা ইংল্যান্ডে আসেন। এ সময় সমস্ত অধিকৃত অঞ্চল একজন সার্বভৌমের অধীনে আসে এভাবে পঞ্চম শতাব্দীতেই এ্যাংলো স্যাক্সসন যুগে ব্রিটেনে রাজতন্ত্রের
সূত্রপাত হয়। রাজতন্ত্রের ক্ষমতার উৎস : ব্রিটেনেরন ‘রাজা বা রানির বিপুল ক্ষমতার সৃষ্টি হয়েছে দুটি উৎস থেকে। যথা : পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইন।

(ক) পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইন : ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিবদ্ধভাবে রাজা বা রানিকে
কতকগুলো ক্ষমতা দিয়েছে। এসব ক্ষমতার ভিত্তিতেই সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কার্যাবলি সম্পাদিত হয়ে থাকে। তাছাড়া অর্পিত। ক্ষমতা প্রসূত আইন এর মাধ্যমেই শাসন বিভাগীয় বহুবিধ কার্য সম্পাদিত হয়। মন্ত্রীর অর্পিত ক্ষমতার ভিত্তিতে প্রশাসনিক কার্যাবলি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করেন। এগুলো পার্লামেন্ট কর্তৃক বিধিবদ্ধ অর্থাৎ আইনের বিরোধী না হলে আইনের মতোই বলবৎ হয়। এগুলো স্বপরিষদ
বাজাজ্ঞা বলা হয়ে থাকে।
(খ) রাজশক্তির বিশেষাধিকার : ব্রিটেনের রাজশক্তি ক্ষমতার অরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো বিশেষাধিকার। সাধারণত ব্রিটেনের চিরাচরিত প্রভাবের ভিত্তিতে গড়ে উঠে। ক্ষমতাসমূহ রাজার বিশেষাধিকার হিসেবে পরিচিত। বিশেষাধিকার সম্পর্কিত রাজশক্তির ক্ষমতাগুলো প্রচলিত প্রাচীন রীতিনীতির উপর নির্ভরশীল। রাজকীয় দায়দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, আয়োজন ও নীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অধিকতর ক্ষমতার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রয়োজনীয়তার উপলব্ধি থেকেই ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থায় প্রথাগত আইন এর অংশ হিসেবে সকল রাজা বা রানি ধারাবাহিকভাবে কতগুলো অধিকার ভোগ করেন। এগুলোকে ব্রিটেনের রাজশক্তির বিশেষাধিকার হিসেবে গণ্য করা হয় ।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ রাজশক্তি যেসব ক্ষমতার অধিকার ছিল তা বহুদিনের বিবর্তনের ফলা বর্তমানে কারণে রাজশক্তির ক্ষমতা ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ক্ষমতা বহুলাংশে হ্রাস পেলেও ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় কর্মপরিধির প্রসার এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিকাশের ফলে রাজশক্তির হাতে নতুন অনেক ক্ষমতা এসেছে।

ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ক্ষমতা কতটুকু?
অথবা, ব্রিটিশ রাজশক্তির ক্ষমতাগুলো কি কি?
অথবা, ব্রিটিশ রাজশক্তির ক্ষমতাসমূহ সংক্ষেপে আলোকপাত কর।

ভূমিকা : পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন মহান ঐতিহ্যবাহী ও বংশানুক্রমিক প্রতিষ্ঠান ‘British Monarchy’ যা পঞ্চম শতাব্দীতে
‘Anglo Saxon’ এর সময়ে পূর্ণাঙ্গরূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল । এক সময় রাজা বানী ছিলেন Real chief Executive ! কিন্তু ১৬৮৮ সালের গৌরবময় বিপ্লবের মাধ্যমে রাজার কর্তৃত্ব প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্বের স্থলে পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। তবুও ব্রিটেনের রাজশক্তি যাবতীয় রাষ্ট্রের ক্ষমতার উৎস বিশেষ ।
→ ব্রিটেনের রাজা বা রানির ভূমিকা : ব্রিটেনের রাজা বা রানি ব্রিটেনের বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী তারা ব্রিটেনের সর্বময় ক্ষমতার উৎস হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। তারা ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীকে নিয়োগ দান করেন। নিম্নে রাজা বা রানির ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. শাসন সংক্রান্ত : রাজশক্তি ব্রিটেনের সর্বোচ্চ শাসন কর্তৃপক্ষ। এ অর্থে তত্ত্বগতভাবে রাজা বা রানি হলেন Chief
Executive বিচারক ব্যতীত সমস্ত সরকারি কর্মচারীর অপসারণের ক্ষমতা রাখেন। তিনি সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক।
২. আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা : ব্রিটেনের রাজা বা রানি আইন বিভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকল প্রকার আইন প্রণয়নের ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে থাকলেও রাজা বা রানি কতিপয় ক্ষমতা চর্চা করে থাকেন। রাজা বা রানি পার্লামেন্টের অধিবেশন আহবান করতে পারেন এবং স্থগিত রাখতে পারেন অথবা বাতিল করতে পারেন।
৩. বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা : ব্রিটেনের রাজা বা রানিকে ন্যায়বিচারের উৎস রূপে গণ্য করা হয়। তাই ব্রিটেনের রাজা বা রানি বিচার বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন। রাজার নামে সমস্ত ন্যায়বিচার করা হয়। তিনি দোষী ব্যক্তিকে ক্ষমা বা শাস্তি প্রদান করতে পারেন ।
৪. ঐতিহ্যগত ক্ষমতা : রাজা সর্বশ্রেষ্ঠ সামন্ত হিসেবে সাধারণ ও অসাধারণ উপায়ে রাজস্ব আদায় করতে পারেন। এটিও তার চরম অধিকার। তাই রাজাকেও গুপ্তধনের অধিপতি বলা হয় ।
৫. ধর্মীয় ক্ষমতা : রাজা বা রানি ব্রিটেনের খ্রিস্টধর্মের প্রধান। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তিনি আর্চবিশপ এবং
চার্চদের নিয়োগদান করেন। রাজা বা রানির নির্দেশক্রমেই খ্রিস্টধর্মের প্রতিষ্ঠানগুলোর সভা অনুষ্ঠিত হয়। চার্চের বিধি- বিধানসমূহ রাজা বা রানির অনুমোদন সাপেক্ষ।
৬. বিরোধ নিষ্পত্তি : বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে কোনো কারণে বিরোধ কিংবা সংঘর্ষ বাঁধলে নিরপেক্ষ চরিত্রবিশিষ্ট রাজা বা
রানির পলিসি সংশ্লিষ্ট সব পথই মেনে নিতে সাধারণত কোনো আপত্তি করে না। উদাহরণস্বরূপ, আইরিশ স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে কিংবা লর্ডসভা ও কমন্সসভার মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে পঞ্চম জর্জের ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটেনের শাসন ব্যবস্থায় মন্ত্রিসভাই প্রকৃত শাসন কর্তৃপক্ষ। তবুও রাজা বা রানি ক্ষেত্রবিশেষে নিজের বুদ্ধি বিবেচনা অনুসারে কাজ করতে পারেন। যদিও রাজার সকল কাজেই পার্লামেন্টের অনুমোদন প্রয়োজন, তবু তার কার্যাবলির গুরুত্ব ও তাৎপর্যকে ছোট করে দেখার আবকাশ নেই।

রাজকীয় বিশেষাধিকার কি?
অথবা, রাজকীয় বিশেষাধিকার কাকে বলে?
অথবা, রাজকীয় বিশেষাধিকার বলতে কি বুঝ?


উত্তর : ভূমিকা : তত্ত্বগত দিক থেকে ব্রিটিশ রাজশক্তি বিপুল ক্ষমতার অধিকারী। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সকল কার্যক্রম রাজা বা রানির নামেই সম্পাদিত হয়। শাসনতন্ত্র বিশেষজ্ঞ মহল বলেছেন, ব্রিটেনের রাজশক্তির ক্ষমতার এ বিপুল ক্ষমতার দুটি উৎস। ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের ক্ষমতার এ দুটি উৎসের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো রাজকীয় বিশেষাধিকার। সাধারণত ব্রিটেনের চিরাচরিত প্রথার ভিত্তিতে গড়ে উঠা ক্ষমতাসমূহ হলো রাজকীয় বিশেষ অধিকার।
রাজকীয় বিশেষাধিকার : রাজকীয় দায়দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, আয়োজন, নীতি
নিয়ন্ত্রণের জন্য অধিকতর ক্ষমতার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি থেকে ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থায় প্রথাগত আইন এর অংশ হিসেবে সকল রাজা বা রানি ধারবাহিকভাবে কতকগুলো অধিকার ভোগ করেন। এগুলোকে ব্রিটেনের রাজকীয় বিশেষাধিকার হিসেবে গণ্য করা হয়। পরমাধিকার বা
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : রাজকীয় বিশেষাধিকার সম্পর্কিত ধারণা কিছুটা অস্পষ্ট তাই এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। নিম্নে এ সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতামত ব্যক্ত করা হলো। Black_stone বলেছেন, “রাজশক্তির বিশেষ অধিকার হলো যেসব ক্ষমতা, যেগুলোর ভিত্তিতে রাজকীয় মর্যাদা অনুসারে অন্যান্য সকলের উপর রাজার বিশেষ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত এবং সেগুলো প্রথাগত আইনের বাইরে।” Hood Phillips এর মতে, “পরমাধিকার বলতে সার্বভৌম
ক্ষমতার অধিকারী রাজার সঙ্গে প্রজাদের ক্ষমতার সম্পর্ক বুঝায়।” Dicey এর মতে, “কোনো নির্দিষ্ট সময়ে স্ব বিবেচনা অনুসারে বা স্বেচ্ছাধীনভাবে কাজ করার আইনগত ক্ষমতার যে অবশিষ্টাংশ রাজশক্তির হাতে ন্যস্ত থাকে তাকেই পরমাধিকার বলে।” Coke এর মতে, “রাজকীয় পরমাধিকার বলতে আইন কর্তৃক রাজশক্তিকে প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা প্রাধান্য এবং সুযোগ সুবিধাকে বুঝায়।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় বিশেষ অধিকার আইনত রাজার হাতে ন্যস্ত। তবে প্রথা এক সাংবিধানিক, রীতিনীতি
অনুসারে অন্যদের মাধ্যমে এবং সাংবিধানিক রীতিনীতি অনুসারে অন্যদের মাধ্যমে এবং অন্যের পরামর্শ অনুযায়ী রাজশক্তি এ ক্ষমতা প্রয়োগ করে । মূলত বিশেষ অধিকার বলতে শাসন বিভাগ কর্তৃক প্রযুক্ত সেসব স্ববিবেচনামূলক ক্ষমতাকে বুঝায়, সেসব ক্ষমতা রাজশক্তি বা তার অধীনস্থ ক্ষমতাকে বুঝায়। সেসব ক্ষমতা রাজশক্তি বা তার অধীনস্থ ব্যক্তি ও অধিকারীগণ পার্লামেন্টে প্রণীত আইনের কর্তৃত্ব ছাড়াই প্রয়োগ করতে পারেন।



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

20 + four =