রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা ক্ষেত্রের সীমানা বা বিষয়বস্তুর ব্যাপ্তি নির্ধারণ মোটেই সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়বস্তু স্থির নয়, পরিবর্তনশীল। প্রকৃতপক্ষে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রের সীমানা অতিমাত্রায় ব্যাপক। এজন্যই রোডি (Rodee) বলেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কোন সঠিক এবং সুনির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ
করা সম্ভব নয় ।” (No precies and definite boundaries can be places around political science) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধি বা সীমানা বা বিষয়বস্তু : রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ আলোচনা করেছে। ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু তথা আলোচনার ক্ষেত্র নিম্নলিখিত বিষয়সমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
বিষয়বস্তুগুলো হলো :
১. রাজনৈতিক তত্ত্ব ও তার ইতিহাস
২.রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ; সংবিধান, সরকার পরিচালনা ও বিভিন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা।
রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী ও জনমত।
৩. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক আইন ও সংগঠন।
নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো :
১. রাষ্ট্র : রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিজ্ঞান। সে সূত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও কার্যাবলি, রাষ্ট্রে ব্যক্তির ভূমিকা,রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার ইত্যাদি আলোচনা করে। রাষ্ট্র যেহেতু রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত, সেহেতু এর আলোচনা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত । তাই অধ্যাপক গার্নার বলেন, “Political science begins and ends with state.”
২. সমাজ : রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের একটি অংশ। সুতরাং সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞান, সমাজের
উৎপত্তি, সমাজে ব্যক্তির ভূমিকা, সমাজের ভূমিকা, সামাজিক জীব হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যক্তির ভূমিকা ইত্যাদি
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।
৩. সরকার : রাষ্ট্র যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয়, সরকার তেমনি রাষ্ট্রের আলোচ্যবিষয়। কারণ সরকারের
মাধ্যমে রাষ্ট্র তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবতা দান করে এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়। তাই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ অধিকাংশই সরকারের আলোচনাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত পক্ষপাতী। এ বিষয়ে গিলক্রিস্ট, গেটেল, পল জানে, লাস্কি প্রমুখ চিন্তাবিদরা সুস্পষ্ট অভিমত দিয়েছেন। পল জানে (Paul Janet) বলেছেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সামাজিক বিজ্ঞানের সে অংশ, যা রাষ্ট্রের ভিত্তি ও সরকারের নীতিসমূহের আলোচনা করে।”
৪. নৈতিকতা : রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী হওয়া উচিত, কী অনুচিত তাও স্থির করে দেয়। রবসন (Robson) বলেন, “মানুষের
নৈতিক সমস্যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয় হিসেবে গণ্য হয়।” (It is concerned both with what is and also with what should be) সুতরাং মানুষের ভালোমন্দ দিক নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক আইন ও সংগঠন
নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো :
১. রাষ্ট্র : রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিজ্ঞান। সে সূত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের লক্ষ্য ও কার্যাবলি, রাষ্ট্রে ব্যক্তির ভূমিকা, রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার ইত্যাদি আলোচনা করে। রাষ্ট্র যেহেতু রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত, সেহেতু এর আলোচনা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত । তাই অধ্যাপক গার্নার বলেন, “Political science begins and ends with state.”
২. সমাজ : রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজবিজ্ঞানের একটি অংশ। সুতরাং সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞান, সমাজের
উৎপত্তি, সমাজে ব্যক্তির ভূমিকা, সমাজের ভূমিকা, সামাজিক জীব হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যক্তির ভূমিকা ইত্যাদি
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।
৩. সরকার : রাষ্ট্র যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয়, সরকার তেমনি রাষ্ট্রের আলোচ্যবিষয়। কারণ সরকারের
মাধ্যমে রাষ্ট্র তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবতা দান করে এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটায়। তাই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ অধিকাংশই সরকারের আলোচনাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত পক্ষপাতী। এ বিষয়ে গিলক্রিস্ট, গেটেল, পল জানে, লাস্কি প্রমুখ চিন্তাবিদরা সুস্পষ্ট অভিমত দিয়েছেন। পল জানে (Paul Janet) বলেছেন, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সামাজিক বিজ্ঞানের সে অংশ, যা রাষ্ট্রের ভিত্তি ও সরকারের নীতিসমূহের আলোচনা করে।”
৪. নৈতিকতা : রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী হওয়া উচিত, কী অনুচিত তাও স্থির করে দেয়। রবসন (Robson) বলেন, “মানুষের
নৈতিক সমস্যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয় হিসেবে গণ্য হয়।” (It is concerned both with what is and also with what should be) সুতরাং মানুষের ভালোমন্দ দিক নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান আলোচনা করে।
৫. ক্ষমতা : আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ ক্ষমতার আলোচনাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনাভুক্ত করেছেন। আধুনিক
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতানুসারে সমাজে ক্ষমতার ভিত্তি, ক্ষমতার দ্বারা প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি ও ক্ষমতা প্রয়োগের ফলাফল। অনুসন্ধান করাই হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূখ্য উদ্দেশ্য। অধ্যাপক বল (Alan R. Ball) বলেছেন, রাজনীতি অধ্যয়নের মূল বিষয়ই হলো রাজনৈতিক ক্ষমতা। (It is a key concept in the study of politics)
৬. রাজনৈতিক দল : রাজনৈতিক দল হলো এমন এক জনসমষ্টি যারা নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে বৈধ উপায়ে শাসন
ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এ সূত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি, দলব্যবস্থার শ্রেণিবিভাগ, বিরোধী দলের ভূমিকা, রাজনৈতিক দলব্যবস্থা, উন্নয়নশীল দেশে এবং উন্নত দেশে কিভাবে ভূমিকা পালন করছে তা নিয়ে আলোচনা করে।
৭. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী : স্বার্থগোষ্ঠী হলো এমন এক জনসমষ্টি, যা তার সদস্যদের সরকারি পদে বসানোর চেষ্টা না
করে সরকারি সিদ্ধান্তসমূহকে প্রভাবিত করে। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ রাষ্ট্রীয় ক্রিয়াকলাপ তথা সমাজকে প্রভাবিত করে, তাই চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাষ্ট্রের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৮. আইন : সার্বভৌমের নির্দেশকেই আইন বলে। রাষ্ট্র ও সরকার ছাড়াও সরকার প্রণীত আইনও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের
আলোচনার অন্তর্ভুক্ত । রাষ্ট্রের পক্ষেই সরকার আইন প্রণয়ন করে, শাসনকার্য পরিচালনা এবং শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করে। তাই আইনের আলোচনা করা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূখ্য বিষয়।
৯. জনমত : জনমত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার মূল বিষয়। রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণকামী মতই হলো জনমত।
জনমত আধুনিক শাসনব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক। জনমতের গুরুত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের বাহন ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল কাজ। সুতরাং জনমত হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মূল আলোচ্যবিষয়।
১০. শাসনতন্ত্র বা সংবিধান : শাসনতন্ত্র হলো সরকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতি। শাসনতন্ত্র অনুযায়ী রাষ্ট্র
ও সরকার পরিচালিত হয়। শাসনতন্ত্রের প্রকৃতি অনুযায়ী সরকারের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। শাসনতন্ত্র ব্যক্তি, রাষ্ট্র,
সরকারকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। তাই এটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্র শুধু যে ব্যাপক তাই নয়,
বরং তা আরও দিনদিন ব্যাপকতর হচ্ছে। অনেকে বলেছেন, মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কার্যকলাপই হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিধির অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং Prof. Bryce এর সাথে একমত হয়ে বলা যায়, “Political science is a progressive science. So its scope is increasing day by day by nature.”