রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর

রাষ্ট্রবিজ্ঞান

রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নর পদ্ধতিসমূহ আলোচনা কর।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতি সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। এর ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতিতে অনেকটা পরিবর্তন সূচিত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের আধুনিক পদ্ধতিতে নতুন নতুন ধারণার উদ্ভব হয়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতিসমূহ : রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতিসমূহকে মূলত; দুইভাগে ভাগ করা যায়।
যথা : (ক) সনাতন বা গতানুগতিক পদ্ধতি এবং (খ) আধুনিক পদ্ধতি। নিম্নে এ পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা
করা হলো :

ক. সনাতন বা গতানুগতিক পদ্ধতি : রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের সবচেয়ে প্রাচীন ও উত্তম পদ্ধতি হিসেবে সনাতন
পদ্ধতিকে বিবেচনা করা হয়। নিম্নে এ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

১. দার্শনিক পদ্ধতি : রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের একটি অন্যতম পদ্ধতি হলো দার্শনিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতি অনুসারে
কতকগুলো বিষয়কে অনুমানের ভিত্তিতে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেয়া হয় এবং অবরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ পদ্ধতির প্রবক্তাদের মধ্যে প্লেটো, এরিস্টটল, হেগেল, কান্ট, বেন্থাম, হবস, রুশো, গ্রিন, ব্রাডলে প্রমুখ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা কর

২. ঐতিহাসিক পদ্ধতি : রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের আরেকটি অন্যতম পদ্ধতি হলো ঐতিহাসিক পদ্ধতি । অতীতের জ্ঞান এবং বর্তমানের পর্যালোচনা ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী আলোচনার পথ প্রশস্ত করে। রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃতি জানতে হলে তাদের উদ্ভব ও ক্রমবিবর্তনের ধারা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকা দরকার। আর ঐতিহাসিক পদ্ধতির মাধ্যমে তা লাভ করা সম্ভব।

৩.দৃষ্টিতে লাভ করতে পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি : বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গঠন, প্রকৃতি, কার্যাবলি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ করলে সাধারণ সূত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সাধারণ তত্ত্বের মর্যাদা
পারে। যার মাধ্যমে সুন্দরভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন করা সম্ভব। এ তত্ত্বের প্রবক্তাগণ হলেন লর্ড ব্রাইস, কতকগুলো লাওয়েল প্রমুখ ।

৪. তুলনামূলক পদ্ধতি : রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের আরেকটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হলো তুলনামূলক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও ঘটনাবলির বিশ্লেষণ করা হয় এবং তুলনামূলক আলোচনার ভিত্তিতে কার্যকারণ সূত্র নির্ধারণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে অতীত ও বর্তমানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যেও তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। কোন সুদৃঢ়

৫. অন্যান্য পদ্ধতি : উপর্যুক্ত পদ্ধতি ছাড়াও সনাতন পদ্ধতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পরীক্ষামূলক পদ্ধতি, আইনমূলক পদ্ধতি, জীববিজ্ঞানমূলক পদ্ধতি, মনোবিজ্ঞানমূলক পদ্ধতি, সমাজতত্ত্বমূলক পদ্ধতি ।
খ. রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের আধুনিক পদ্ধতি : রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে
আলোচনা করা হলো :

১. আচরণবাদী পদ্ধতি : পরীক্ষালব্ধ ও প্রায়োগিক তত্ত্ব উদ্ভাবন, সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ ও তাদের সত্যাসত্য
যাচাইয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের সুসমন্বিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ অনুসন্ধানই হলো আচরণবাদ । এ পদ্ধতি অনুসারে একটি তাত্ত্বিক কাঠামো গঠন করে সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিচার বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের কথা বলা হয় । এ পদ্ধতির প্রবক্তাগণ হলেন গ্রাহাম ওয়ালেস, চার্লস মেরিয়াম, রবার্ট ডাল, ল্যাসওয়েল প্রমুখ ।

২. ব্যবস্থা তত্ত্ব : এ তত্ত্বের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে এর সামগ্রিক পরিবেশের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করা হয় ।
এ তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তা ডেভিড ইস্টন রাজনৈতিক ব্যবস্থার কার্যাবলিকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা : ইনপুট (Input) এবং আউটপুট (Output) কার্যাবলি। এখানে Demand and Support থাকে। কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যেসব দাবি উত্থাপিত হয় তা হচ্ছে ইনপুট। সরকার সামর্থ অনুসারে দাবিগুলোকে Output-এ রূপান্তরিত করে। সরকার কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত দাবিগুলো ফলাবর্তন (Feedback) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরায় Input-এ চলে আসে।

৩. কাঠামো কার্যগত তত্ত্ব : এ তত্ত্বের মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামো ও কার্যকে বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়। এখানে কাঠামোর চেয়ে কার্যকে অধিকতর প্রাধান্য দেয়া হয়। এ তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা হলেন G. A. Almond। এছাড়া ডেভিড আপটার, পাওয়েল, প্যারেটো প্রমুখের নামও এ তত্ত্বের সাথে জড়িত।

৪. অন্যান্য : রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের আধুনিক পদ্ধতির মধ্যে আরো যেসব পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো হলো : গোষ্ঠী মতবাদ, যোগাযোগ তত্ত্ব, অভিজ্ঞতামূলক পদ্ধতি, সাক্ষাৎকার পদ্ধতি, পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতি ইত্যাদি

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতিকে উত্তম হিসেবে বিবেচনা করা হলেও আধুনিক পদ্ধতিকে অবহেলা করার কোন কারণ নেই। কেননা কোন একক পদ্ধতি রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য যথেষ্ট নয়। সুতরাং সকল পদ্ধতি অনুসরণ করা আবশ্যক। 



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

12 + 13 =