প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্ক একটি উজ্জ্বল নাম। বাংলার শাসকগণের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। আপন মেধা ও যোগ্যতা বলে তিনি শূন্যস্থান থেকে সাফল্যের চরম সীমা পর্যন্ত অতিক্রম করেন। মহাবীর কর্ণের ন্যায় তিনি প্রমাণ করেন যে, জন্ম দৈব্যের অধীনে হলেও পৌরষ নিজের অধীন। তিনি একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণ। নিম্নে শশাঙ্ক সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
শশাঙ্ক : শশাঙ্কের বাল্যকাল ও বংশ পরিচয় সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। পর্যাপ্ত উৎস বা উপাদান না থাকায় শশাঙ্ক সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা সম্ভব হয় না। তার সম্পর্কে জানার জন্য বৌদ্ধগ্রন্থ ‘আর্যমঞ্জুশ্রী মূলকল্প’ এর ওপর নির্ভর করতে হয়। এছাড়া বানভট্টের হর্ষচরিত, হিউয়েন সাং এর বিবরণ, শশাঙ্কের শিলালিপি ও হর্ষবর্ধনের শিলালিপি থেকে শশাঙ্ক সম্পর্কে জানা যায়। শশাঙ্কের কিছু মুদ্রা বাংলা ও গঞ্জামে পাওয়া যায়। তবে তাঁর সম্পর্কে অনেক মুদ্রা যশোর জেলায় পাওয়া গেছে এছাড়া প্রাচীন রোহিশ্বরের গিরিগাত্রে একটি ছাঁচ পাওয়া গেছে। তাতে শ্রী
মহাসামন্ত শশাঙ্কের কথা উল্লেখ আছে। ধারণা করা হয় যে, শ্রী মহাসামন্ত শশাঙ্ক ও গৌড়রাজ শশাঙ্ক একই ব্যক্তি। যশোর জেলার মুদ্রায় তাঁর উপাধি ছিল ‘নরেন্দ্রগুপ্ত’। কেউ কেউ মনে করেন যে, শশাঙ্ক মৌখরীরাজের সামন্ত ছিলেন। তবে বেশিরভাগ পণ্ডিত মনে করেন যে, শশাঙ্ক ছিলেন পরবর্তী গুপ্ত বংশীয় মহাসেন গুপ্তের সামন্ত। ড. আর, জি বসাকের মতে, শশাঙ্ক ছিলেন গৌড়ের রাজা জয়নাগের বংশধর । যাহোক ইতিহাসবেত্তাদের মতে, তিনি ছিলেন গৌড়রাজ শশাঙ্ক । তিনি সম্ভবত সপ্তম শতাব্দীর প্রথমে গৌড়ের শাসক হন এবং তাঁর রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ জেলার কর্ণসুবর্ণ নগরে।
পরিশেষে বলতে পারি যে, বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্ক একটি আলোকবর্তিকার নাম। তিনিই বাংলার শাসকদের মধ্যে প্রথম শক্তিশালী স্বাধীন শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন বাঙালিদের প্রথম জাতীয় রাজা।