ভূমিকা : শিক্ষা সফর অর্থ শিক্ষার লক্ষ্যে ভ্রমণ। শ্রেণিকক্ষে অর্জিত পুঁথিগত বিদ্যা হলো তত্ত্বীয় জ্ঞান। জ্ঞানের বাস্তব উপলব্ধি ছাড়া তত্ত্বীয় জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা দুরূহ। জ্ঞান অর্জনের জন্যে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হলেও জ্ঞানের পূর্ণ উপলব্ধির জন্যে শিক্ষাসফরের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। বই পড়ে দীর্ঘদিনে যা শেখা সম্ভব নয়, শিক্ষা সফরের মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে তার চেয়ে বেশি শেখা যায়। চোখে দেখে বা সামনাসামনি দাঁড়িয়ে অনুভব করে যতটুকু বোঝা যায়, বই পড়ে বা লোকমুখে শুনে ততটুকু বোঝা কখনোই সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে স্পষ্টতা ও পূর্ণতা প্রদানের জন্যে সফরের আয়োজন করা হয়ে থাকে। একে শিক্ষা সফর বলে।
শিক্ষা সফরের গুরুত্ব : অজানাকে জানার জন্যে, অদেখাকে দেখার জন্যে মানবমনের কৌতূহল চিরন্তন। শিক্ষাসকর শিক্ষার্থীর জীবনে মুক্তির স্বাদ এনে দেয়—নিত্যনতুন করে অজানার রুদ্ধ দুয়ার খুলে দেয়। তারা নতুনকে দেখে, জানে, অনুভব করে। অচেনার সান্নিধ্যে এসে তারা আনন্দিত হয়। অজানাকে মুগ্ধ বিস্ময়ে বরণ করে নেয়। সফরের মধ্যদিয়ে অপরিচয়ের বেড়াজাল প্রতি মুহূর্তে উন্মোচিত হয়, রহস্যময় পৃথিবী তার অনুপম রূপ, রস, গন্ধ, বর্ণ, স্পর্শ নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ধরা দেয়। অপরূপ এই পৃথিবী থেকে রং-রস আহরণ করে শিক্ষার্থীরা জীবনকে রাঙিয়ে তোলে। কোনো বস্তু বা দৃশ্যকে বই পড়ে করনা করা আর চোখে দেখে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। যে মানুষ তাজমহল দেখেনি, শুধু বই পড়ে বা বর্ণনা শুনে সে তাজমহলের মহিমা উপলব্ধি করতে পারবে না; যে ব্যক্তি দুঃসহ মরুভূমি, উত্তাল সমুদ্র বা অত্যুচ্চ পর্বত প্রত্যক্ষ করেনি, অপরের বর্ণনা থেকে এগুলোর বৈশিষ্ট্য সে কখনোই হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে না। আসলে সরাসরি দেখার মধ্যে বাস্তবের যে স্পষ্টতা জড়ানো থাকে, অন্য কোনোমতেই তার বিকল্প হয় না। তাই যুগে যুগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সফরের গুরুত্ব স্বীকার করা হয়েছে। পৃথিবীর বহু উন্নত দেশেই একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহু বিষয়েই পাঠ দান করা হয়ে থাকে, যার প্রতিটিই আমাদের জীবন ও জীবনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই তত্ত্বগত জ্ঞানের বাইরে সেসব বিষয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কোনো কিছু হাতে-কলমে শেখার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার পূর্ণতা। এজন্যেই শিক্ষা সফরের এত গুরুত্ব।
সফরের সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্ক: শিক্ষার্থীদের পঠিত ইতিহাস-ভূগোল শিক্ষা সফরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার জাদুস্পর্শে প্রাণময় হয়ে ওঠে। সফরের অভিজ্ঞতায় ইতিহাসের কত অতীত কীর্তি, কত কাহিনি মানুষের কাছে জীবন্ত রূপ ধারণ করে। শিক্ষা সফর শিক্ষার্থীর জ্ঞানকে অর্থময় ও পরিপূর্ণ করে তোলে। শিক্ষাকে মনোজ্ঞ ও বাস্তবভিত্তিক করার জন্যে শিক্ষা সফর অপরিহার্য। পৃথিবীতে বহু বিচিত্র স্থান আছে যার বৈচিত্র্যের কথা বই পড়ে সবটুকু জানা যায় না, চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার দ্বারাই তা নতুনভাবে মানুষের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। পৃথিবীতে বহু বিচিত্র দেশ আছে, যার বিচিত্র মানুষের বিচিত্র সাংস্কৃতিক জীবনধারা ও সামাজিক রীতি-নীতি রয়েছে। সেগুলোকে পূর্ণভাবে উপলব্ধি করার জন্যে শিক্ষা সফরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। গ্রন্থপাঠের মাধ্যমে যে শিক্ষা গ্রহণ করা হয়, তার মধ্যে একটা সীমাবন্ধতা আছে। কিন্তু নির্ধারিত পুস্তকের বাইরে জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার
দ্বারা যে শিক্ষা লাভ করা যায় তা সীমিত গভীর মধ্যে আবদ্ধ নয়। এই শিক্ষা অর্জনের জন্যে শিক্ষা সফর অতি আবশ্যক। জীবনের সঙ্গে শিক্ষার যেমন সম্পর্ক আছে, শিক্ষার সঙ্গে সফরেরও তেমনি সম্পর্ক রয়েছে। এজন্যে সফর শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফরের গুরুত্ব আছে। যেমন- ইতিহাস। ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিলালিপি, পাণ্ডুলিপি ইত্যাদির। বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনের বাস্তব পরিচয় জানা ইতিহাস শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ভূগোলের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন বিভিন্ন দেশের মাটি, শিলা, পাথর ইত্যাদির প্রত্যক্ষ পরিচয় জানা। প্রাণিবিজ্ঞানের ছাত্রদের প্রয়োজন বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় রক্ষিত জীবজন্তু সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করা।
শিক্ষা সফরের প্রক্রিয়া : শিক্ষা সফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানানোর কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা আছে। এক একটি বিষয় সম্পর্কে পরিচয় গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ঐ বিষয়ের একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের পাঠাতে হবে। কোনো স্থানের দর্শনীয় বস্তু বা দৃশ্য দেখতে হলে ঐ বস্তু বা দৃশ্য সম্পর্কে অভিজ্ঞ একজন গাইড সঙ্গে রাখতে হবে। এভাবে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বছরে অন্তত একবার শিক্ষা সফরের আয়োজন করতে হবে। পরিকল্পনায় ত্রুটি থাকলে সম্পূর্ণ সফর কর্মসূচি বার্থ হতে পারে।
উপসংহার: শিক্ষা সফরের বাঁধা-ধরা নিয়মের মধ্যে আনন্দ থাকে না। শুধু পড়া মুখস্থ করলেই চলে না, পড়ার ফাঁকে ছুটিও চাই। কাজের মধ্যে আনন্দের প্রয়োজন। তাই শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরের জন্যে উদগ্রীব হয়ে থাকে। শিক্ষা সফরে ছাত্ররা নতুন নতুন জায়গায় গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে; দলবদ্ধ হয়ে সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। শিক্ষাসফর নানা ধরনের মানুষকে জানতে এবং তাদের জীবনধারার সঙ্গে, তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে সাহায্য করে। শিক্ষাসফর শুধু যে বাস্তব জ্ঞানের আধার তা-ই নয়, এটি একধরনের বিশুদ্ধ চিত্তবিনোদনও। তাই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদানের গতানুগতিক ধারার বাইরে শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে বার্ষিক শিক্ষা সফরের আয়োজন করা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
shakil1:27 am
Assalamualaikum 😍😍😍😍😍😍😍❤️❤️❤️❤️❤️☺️☺️🥰
Nice… awesome 😎😎😎😎 is a great 😃 thanks 🙏 is a lot