যে প্রক্রিয়া একেক সদস্যের আচরণে অভিজ্ঞতার আলোকে অভিযোজনিক পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় সে প্রক্রিয়া শিখন নামে অভিহিত । মূলত পারিপার্শ্বিক কারণে অনুশীলন প্রক্রিয়ায় প্রাণীর আচরণে পরিবর্তন ঘটে ।

নিচে শিখন আচরণ থেকে সিলেবাসভুক্ত অভ্যাসগত ও অনুকরণজনিত শিখন সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।


অভ্যাসগত (Habituation)

অভ্যাসগত আচরণ হচ্ছে সরলতম ধরনের শিক্ষণ। এ ধরনের আচরণে কোনো পুরস্কার বা তিরস্কারের (শাস্তির) সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন একটি উদ্দীপনার ঘন ঘন পুনরাবৃত্তির ফলে আচরণগত সাড়াদানে ক্রমশ ভাটা পড়ে যায়, এক সময় প্রাণী ওই উদ্দীপনায় আর কোনো সাড়াই দেয় না। এ আচরণের মাধ্যমে প্রাণী নতুন পরিবেশে ক্রমান্বয়ে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে অভিযোজিত হয়। অভ্যাসগত আচরণে প্রাণী শুধু নতুন উদ্দীপনায় অভ্যস্তই হয় না, বরং কম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দীপনা বর্জনেও উদ্যোগী হয়।

যেমন— একটি পোষা কুকুরের উপস্থিতিতে শব্দ করলে কুকুরটি মাথা উঁচু করে সাড়া দেয়।’যদি ঘন ঘন শব্দ সৃষ্টি করা হয় তখন আর তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। এ পরিবর্তন অবসাদগ্রস্ততার কারণে কিংবা সংবেদগ্রাহকগুলোর অভিযোজনের ফলে ঘটে না, বরং অভ্যাসজনিত কারণে ঘটে থাকে। এ সাড়াদান দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, এমনকি সম্পূর্ণ অভ্যস্ত হলে প্রাণীটি ওই উদ্দীপনায় আর কখনওই সাড়া দেবে না। তা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পর প্রয়োগ করলেও কাজ হবে না । প্রাণিজগতের তথা জীবজগতের সব গোষ্ঠীতেই, অভ্যাসগত শিক্ষণ আচরণ দেখা যায় । শস্যক্ষেতে আপদ পাখি তাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের সবখানে মাটির হাড়িতে রং মেখে যে ভয়াল চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয় তা দেখে আপদ পাখি কিছুদিন ভয়ে থাকে। পরে চলৎশক্তিহীন গড়নটিকে আর আমলে নেয় না, বরং ফিঙ্গে পাখির বসার জায়গা হয় (পোকা-মাকড় খাওয়ার জন্যে উড়তে সুবিধা হয়)। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও এমন ঘটনা ঘটে। রেলস্টেশনের পাশে অবস্থিত বাসা বাড়ীতে ট্রেনের শব্দে রাত যাপনের কথা অনেকে চিন্তাই করতে পারবে না, কিন্তু কিছুদিন বাস করলে ট্রেনের শব্দ বা হুইসেল কোনোটাই আর ঘুমের ব্যাঘাতের কারণ হবে না। এটাই অভ্যাসগত আচরণ। মাথার উপরে বিরক্তিকর শোঁ শোঁ শব্দে ঘুরতে থাকা ফ্যানের শব্দে আমরা এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বা আলোচনা সভা কোনটিতেই এর প্রভাব পড়ে না। এ আচরণের সমস্ত আদর্শ, বৈশিষ্ট্য ও পুনরুদ্ধার (recovery) একটি নিউরোন ও নিউরোমাসক্যুলার সংযোগেও প্রদর্শিত হতে পারে।

অনুকরণ (Imprinting )

অনুকরণ অন্যতম শিক্ষণ আচরণ। এটি হচ্ছে প্রাণীর পরিস্ফুটনকালে তরুণ প্রাণীতে অত্যন্ত সংবেদনশীল ধাপে (critical period) একটি নির্দিষ্ট উদ্দীপনার প্রতি সৃষ্ট স্থায়ী আচরণ । ডিম ফুটে সদ্যসৃষ্ট হাঁসশাবক নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে হাটতে সক্ষম হলেই নীড় ছেড়ে কেবল মাকে অনুকরণ করে দূরে চলে যায়, অন্য কাউকে অনুসরণ করে না। কিন্তু ডিম যদি ইনক্যুবেটারে ফুটানো হয় কিংবা ডিমফুটে হাঁসশাবক বের হওয়ার পরপরই মা-হাঁসকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে শাবকগুলো চোখ মেলে প্রথম যে বড় সচল বস্তু দেখবে তাকেই অনুসরণ করবে। তরুণ বয়সেও ওই সচল বস্তুকে অনুসরণ করে চলবে। তখন আসল মাকে ফিরিয়ে দিলেও ‘নকল’ মা-ই ওদের কাছে আসল বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ নকল মা-ই হাঁস শাবকদের কাছে আসল মা হিসেবে স্থায়ীভাবে ‘মুদ্রিত’ হয়ে যাবে। এভাবে পরিস্ফুটনের মুহূর্তে কোনো সচল বস্তু, ব্যক্তি কিংবা গন্ধ-ও উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করতে পারে। পরিস্ফুটনকালে সংবেদনশীল মুহূর্ত প্রজাতিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। এ সময়কাল জন্মের কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন বা মাস এমনকি কয়েক বছরও হতে পারে। তবে জন্মের পর পাখি বা স্তন্যপায়ীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালনের উদ্যোগ নিলে পোষ মানানো সহজ হয় । সার্কাসে পশু নিয়ে খেলা দেখানোর প্রাণিগুলোকে একারণে খুব কম বয়সে আসল মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

শুধু সচল বড় বস্তুই নয়, আগেই বলা হয়েছে যে, গায়ের গন্ধও শাবকরা অনুসরণ করে। চিকা (shrew) নামে পরিচিত গন্ধ মুষিকের শাবকেরা মায়ের গায়ের গন্ধে উদ্দীপ্ত হয় । বাচ্চাসহ কোথাও যেতে চাইলে মায়ের গা থেকে ক্ষরিত গন্ধে শাবকরা একজন আরেকজনের শরীর কামড়ে ধরে রেলের বগির মতো পরস্পরের পেছনে থেকে অগ্রসর হয়, মায়ের অবস্থান থাকে একেবারে সামনে। গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের পর ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে মুষিকশাবকেরা গন্ধে- আকৃষ্ট হয়ে যায় । কিন্তু ৫-৬ দিন বয়সি শাবকদের যদি অন্য প্রজাতির মা-মুষিককে বিকল্প হিসেবে দেওয়া হয় তাহলে ‘বিকল্প’ বা ‘নকল’ মাকেই আসল মনে করে দিন কাটায়। দিন ১৫ পর যদি শাবকগুলোর কাছে আসল মাকে ফেরত দেওয়া হয় তাহলেও আর গৃহীত হয় না। কিন্তু বিকল্প মায়ের গায়ের গন্ধে মাখানো কাপড়ের টুকরাকেও তারা অনুসরণ
করতে রাজী থাকে।

ReplyForwardAdd reaction


About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us




Leave a Reply

12 − 11 =