সমগ্র জীবজগতকে প্রধানত প্রাণী ও উদ্ভিদ-জগতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো আবার পর্ব (Phylum), শ্রেণি (Class), বৰ্গ (Order), গণ (Genus), প্রজাতি (Species) ইত্যাদি উপবিভাগে বিভক্ত। এ ভাগগুলো খেয়াল খুশীমত করা হয়নি। ভাগগুলো প্রকৃতই সম্পর্ক নির্ভর। একই রকম বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রাণিদের একটি প্রজাতিভুক্ত করা হয়। একই ধরনের অনেক প্রজাতি মিলে একটি “গণ”, কয়েকটি গণের সমষ্টি একটি “বর্গ”, অনেক বর্গের সমষ্টি মিলে একটি “শ্রেণি” এবং কয়েকটি শ্রেণি মিলে “পর্ব” এবং কয়েকটি “পর্ব” একত্র করে প্রাণিদের ক্ষেত্রে “প্রাণিজগত” এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্র “উদ্ভিদজগত” সৃষ্টি করা হয়েছে। বিবর্তনবিজ্ঞানীদের ধারনা জীবজগতে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বৈশিষ্ট্যসমূহের সমতার কারণ বৈশিষ্ট্যগুলো একই পূর্বপুরুষ থেকে বংশাধিকার সূত্রে পাওয়া ।
৫। শারীরবৃত্তীয় ও জীবরসায়নঘটিত প্রমাণ (Physiological and Biochemical Evidences) নিচুশ্রেণির প্রাণীর জৈবনিক প্রক্রিয়া উচু শ্রেণির প্রাণীর মত জটিল নয় । তথাপিও একই শ্রেণির প্রাণিদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ বহুলাংশে একই ধরনের। এদের খাদ্যগ্রহণ, খাদ্য পরিপাক, রেচন, শ্বসন প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে অনেক সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়।
জীব রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের একই ধরনের কতকগুলো জৈবিক উপাদান বিদ্যমান। যেমন—আমিষ, নিউক্লিক এসিড, এনজাইম, হরমোন ইত্যাদি। এসব উপাদানগুলোর আণবিক গঠনগত মিলগুলোও লক্ষণীয় । আদিতম জীব থেকে জাটিলতম জীবে এসব উপাদানের উপস্থিতিই বিতর্তনের প্রমাণ বহন করে।
৬। কোষতাত্ত্বিক প্রমাণ (Cytological Evidences) উদ্ভিদ ও প্রাণীর কোষের মৌলিক গঠন ও বিভাজন পদ্ধতি প্রায় একই রকম। আণবিক পর্যায়ে সজীব কোষ-অঙ্গাণুগুলো, যেমন-মাইটোকন্ড্রিয়া, রাইবোজোম, লাইসোজোম, গলজিবস্তু, ক্রোমোজোম প্রভৃতির গঠন প্রায় সদৃশ । তাই বলা যায়, উদ্ভিদ ও প্রাণী একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
৭। জিনতাত্ত্বিক প্রমাণ (Genetical Evidences) বিভিন্ন জীবের মধ্যে সমতা ও বৈষম্যের কারণ যে জিনগত গড়ন (genetic consitution) তা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত। জিনগত এ বৈশিষ্ট্যই বিবর্তনের ভিত্তি এবং কীভাবে এটি পরিবর্তিত হয়ে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি হয় তাও বিজ্ঞানীদের কাছে আর অজানা নয়। Drosophila (ড্রসোফিলা)-র বিভিন্ন প্রজাতির ক্রোমোজোমগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তাদের পূর্বপুরুষ নির্ধারণ করা যায় এবং এ সত্যই প্রকাশিত হয় যে ওরা একই পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্য উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করছে।
৮। জীব ভৌগোলিক প্রমাণ (Evidence from Geographical Distribution) প্রাণিদের বিস্তারের উপর ভিত্তি করে আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস (Alfred Russel Wallace) ১৮৭০ সালে পৃথিবীকে ৬টি অঞ্চলে ভাগ করেছেন। একটি অঞ্চলের জীবের সাথে অন্যটির সাদৃস্য খুব কমই। জীবের এমন ভৌগোলিক বিস্তার অভিব্যক্তিরই ধারা নির্দেশ করে। একমাত্র অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে প্রাপ্ত মারসুপিয়াল (marsupial) স্তন্যপায়ীদের উপস্থিতি ও অতীত বিস্তারকে বিবর্তনের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করা যায় । ভূত্তাত্ত্বিক তথ্য থেকে জানা গেছে যে, অস্ট্রেলিয়া অন্যান্য ভূখণ্ড থেকে এমন এক সময় আলাদা হয়ে গিয়েছিল যখন মারসুপিয়ালরা পৃথিবীর অনেকাংশে বিস্তৃত ছিল এবং তখনও অমরাধর (placental) স্তন্যপায়ীদের উদ্ভব ঘটেনি। সম্পূর্ণ আলাদা হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় সম্ভবত গুটিকয়েক ধরনের আদি স্তন্যপায়ী বাস করত । মূল ভূখন্ডে তখন অমরাধর স্তন্যপায়ীদের আবির্ভাবের ফলে আদি প্রাণীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরাজিত ও বিলুপ্ত হয়ে যায় । অমরাধর প্রাণী অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে না পারায় মারসুপিয়ালরা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বিভিন্নভাবে বিবর্তিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে পরিবেশের প্রতিটি অংশে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে সক্ষম হয়েছে।