আধুনিক বিশ্বের সকল প্রকার শাসনব্যবস্থা শাসক ও শাসিতের আইনগত সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর শাসক ও শাসিতের মধ্যে এ সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে সাংবিধানিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। সংবিধান হচ্ছে একটি রাষ্টের চালিকা শক্তি। তাই সংবিধান ছাড়া কোনো রাষ্ট্রই সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে না। তাই সংবিধান প্রতিটি স্বাধীন দেশের জন্য অত্যাবশ্যক।
সংবিধানের সংজ্ঞা : নিয়ে সংবিধানের সংজ্ঞা সম্পর্কিত বর্ণনা দেওয়া হলো :
মূল সংজ্ঞা : সাধারণত সংবিধান বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার কতকগুলো মূলনীতিকে বুঝায় যা দ্বারা রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। অন্যভাবে বলা যায়, সংবিধান বলতে সেসব লিখিত ও অলিখিত মৌল বিধানাবলিকে বুঝায়, যা রাষ্ট্রের ক্ষমতার ব্যবস্থা ও বণ্টন রীতিকে প্রভাবিত করে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্বন্ধ নির্ণয় করে। সংবিধান দুইটি অর্থে
ব্যবহৃত হয়। যথা-
১. ব্যাপক অর্থে : ব্যাপক অর্থে সংবিধান বলতে দেশের শাসন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী লিখিত ও অলিখিত সব রকম নিয়মকানুনকে বুঝায় । এ ক্ষেত্রে লিখিত নিয়ম-কানুন অর্থে আইন এবং অলিখিত নিয়মকানুন অর্থে প্রচলিত প্রথা রীতিনীতি, আচার ব্যবস্থা প্রভৃতিকে বুঝানো হয়।
২. সংকীর্ণ অর্থে : সংকীর্ণ অর্থে সংবিধান বলতে কতকগুলো লিখিত মৌলিক আইন-কানুনকে বুঝায়। যেগুলোর ভিত্তিতে সরকার গঠন, সরকারের বিভাগসমূহের সংগঠন, ক্ষমতা ও পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ এবং রাষ্ট্রের নাগরিকদের সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয় নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : সংবিধানের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যায়। নিম্নে এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন চিন্তাবিদদের সংজ্ঞা প্রদান করা হলো :
এরিস্টটল সংবিধানকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, “সংবিধান এমন একটি জটিল পদ্ধতি যা রাষ্ট্র নিজের জন্য বেছে নিয়েছে।’
সি. এফ. স্ট্রং বলেছেন, “সংবিধান হচ্ছে সেই সকল নিয়মকানুনের সমষ্টি যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কাজ পরিচালিত হয়।”
অধ্যাপক কে. সি. হুইয়ারের মতে, “সংবিধান হচ্ছে সে সকল নিয়মের সমষ্টি যা কি উদ্দেশ্যে এবং কোনো বিভাগের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতা পরিচালিত হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গিলক্রাইস্ট এর মতে, “লিখিত বা অলিখিত বিধিবিধান আইনের সমষ্টি যা সরকারের সংগঠন, সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যকার ক্ষমতার বণ্টন এবং উক্ত ক্ষমতা কার্যকর
করার সাধারণ নীতিমালা হচ্ছে সংবিধান।”
পরিশেষে বলা যায় যে, সকল নিয়মকানুন ও বিধিবিধান সরকার কিভাবে সংগঠিত হবে, সরকারের ক্ষমতাই বা কি থাকবে কিভাবে, এ ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে কিভাবে ক্ষমতা বণ্টন হবে এবং এদের পারস্পরিক সম্পর্ক বা কি হবে তা নির্ধারণ করে এদের সমষ্টিগত রূপকেই সংবিধান বলে।