সমাস শব্দের অর্থ কী?
বা
সমাস কাকে বলে?
সমাস নতুন শব্দ গঠন করার একটি বিশিষ্ট উপায়। সমাসের সাহায্যে দুই বা ততোধিক পদের মিলনের ফলে একটি নতুন শব্দ বা পদ তৈরি হয়। যে পদগুলোর মিলনে সমাস হয়, তাদের পরস্পরের মধ্যে অন্বয় বা সম্পর্ক থাকে। সুতরাং পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুই বা ততোধিক পদকে একপদে পরিণত করার নাম সমাস।
সংক্ষেপে,বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।
যেসব পদে সমাস হয়, তাদের বিভক্তি সাধারণত লোপ পায় এবং সমাসবদ্ধ নতুন শব্দটির শেষে প্রয়োজন মতো নতুন বিভক্তি যুক্ত হয়। যে কয়েক পদে সমাস হয়, তাদের প্রত্যেককে সমস্যমান পদ বলে। সমস্যমান পদগুলোকে সমাসবদ্ধ করলে যে নতুন পদ তৈরি হয়, তাকে সমস্ত পদ বলে। সমস্ত পদের প্রথম শব্দকে পূর্বপদ ও পরবর্তী শব্দকে পরপদ বা উত্তর পদ বলে। সমস্যমান পদগুলোর পরস্পরের সম্পর্ক দেখাবার জন্য যে বাক্য ব্যবহার করা হয় তাকে ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহ বাক্য বা সমাস বাক্য বলে।
যেমন: সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন। এখানে,
সমস্যমান পদ—‘সিংহ’ ‘আসন’।
সমস্ত পদ—‘সিংহাসন’।
পূর্বপদ—‘সিংহ’।
পরপদ—‘আসন’।
ব্যাসবাক্য—‘সিংহ চিহ্নিত আসন’।
সমাসের আবশ্যকতা : ‘সমাস’ শব্দের অর্থ ‘সংক্ষেপ’। সমাস বাক্যের সংক্ষেপ সাধন করে। সমাসের ফলে ভাষা সরল ও শ্রুতিমধুর হয়। তাছাড়া সমাস ভাষায় নতুন শব্দ গঠন করে। ‘সিংহ চিহ্নিত আসনে উপবেশন করিয়া আছেন যে রাজা’ না বলে বলা যায় ‘সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজা’। ‘তিনটি বাহুর দ্বারা রচিত ক্ষেত্র’ না বলে বলা যায় ‘ত্রিভুজ’। এর ফলে বাক্য সরল, সংক্ষিপ্ত ও শ্রুতিমধুর হলো এবং ভাষায় নতুন শব্দ বেড়ে গেল। কাজেই সমাসের আবশ্যকতা অস্বীকার করা যায় না।
সমাস কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী
সমাসের প্রকারভেদ : সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথা : দ্বন্দ্ব, দ্বিগু, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, অব্যয়ীভাব ও বহুব্রীহি সমাস।

১। দ্বন্দ্ব সমাস
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর প্রত্যেকটির অর্থই প্রধান থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন- সোনা ও রূপা=সোনা-রূপা, মা ও বাপ=মা-বাপ; লাভ ও লোকসান=লাভ-লোকসান।
প্রশ্ন: কুশীলব কোন সমাস ?
উত্তর: কুশীলব- দ্বন্দ্ব সমাস;
প্রশ্ন: দম্পতি কোন সমাস?
উত্তর: দম্পতি– দ্বন্দ্ব সমাস;
ও, এবং, আর –ইত্যাদি সংযোজক অব্যয় দ্বারা দ্বন্দ্ব সমাসের ব্যাসবাক্য গঠিত হয়। দ্বন্দ্ব সমাস নানা প্রকারে সাধিত হয়ে থাকে; তার মধ্যে নিচের কয়টিই প্রধান :
(ক) মিলনাৰ্ধক দ্বন্দ্ব : ভাই ও বোন=ভাই-বোন। ছেলে ও মেয়ে-ছেলে-মেয়ে। মশা ও মাছি=মশা-মাছি। হাত ও পা=হাত-পা।
এরূপ—হাত-মুখ, গাড়ি-ঘোড়া, দুধ-ভাত, রাজা-প্রজা, রুই-কাতলা, আইন-আদালত, দোয়াত-কলম ইত্যাদি।
(খ) বিরোধার্ধক দ্বন্দ্ব : দা ও কুমড়া=দা-কুমড়া। স্বর্গ ও নরক=স্বর্গ-নরক। জমা ও খরচ=জমা-খরচ। বাদী ও বিবাদী=বাদী— বিবাদী। ভালো ও মন্দ=ভালো-মন্দ। ছোট ও বড়-ছোট-বড়।
এরূপ—লেন-দেন, আসা-যাওয়া, ইতর-ভদ্র, শত্রু-মিত্র, লাভ-লোকসান, কম-বেশি, কেনা-বেচা,
(গ) সমার্থক দ্বন্দ্ব: হাট ও বাজার=হাট-বাজার। ধন ও দৌলত=ধন-দৌলত। বই ও পুস্তক=বই-পুস্তক। রাজা ও বাদশা=রাজা-বাদশা।
এরূপ—কল-কারখানা, খাতা-পত্র, মণি-মুক্তা, উজির-নাজির, লোক-লস্কর, চালাক-চতুর, কাগজ-পত্র, দীন-দুঃখী, পাইক-পেয়াদা।
(ঘ) অলুক দ্বন্দ্ব : যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলোর বিভক্তির লোপ হয় না, তাকে অলুক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন—বুকে ও পিঠে=বুকে-পিঠে। হাতে ও পায়ে-হাতে-পায়ে। পথে ও ঘাটে=পথে-ঘাটে। দুধে ও ভাতে=দুধে-ভাতে। এরূপ–জলে-কাদায়, ঝোপে-ঝাড়ে, বনে-বাদাড়ে, দেশে-বিদেশে, ঘরে-বাইরে, হাতে-কলমে, যাকে-তাকে, জলে- স্থলে ইত্যাদি।
২। দ্বিগু সমাস
সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস সমাহার বা সমষ্টি বোঝায়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। যেমন— দ্বি (দুই) ‘গো’র (গরুর) সমষ্টি=দ্বিগু। ত্রি (তিন) কালের সমাহার— ত্রিকাল। সপ্ত অহের সমাহার— সপ্তাহ।
এরূপ—শতাব্দী, পঞ্চবটী, পঞ্চনদ, চৌরাস্তা, ত্রিভুজ, তেমাথা, তেরনদী, ত্রিভুবন, তেপান্তর, ষড়ঋতু, পাঁচজন, দু’আনি, চৌমুহনী ইত্যাদি।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
প্রশ্ন: তেপান্তর কোন সমাস ?
উত্তর: তেপান্তর- দ্বিগু সমাস।
প্রশ্ন: ত্রিভুবন কোন সমাস ?
উত্তর: ত্রিভুবন– দ্বিগু সমাস।
প্রশ্ন: লেনদেনকোন কোন সমাস ?
উত্তর: লেনদেন– দ্বিগু সমাস।
প্রশ্ন: শতাব্দী কোন সমাস ?
উত্তর: শতাব্দী– দ্বিগু সমাস।
প্রশ্ন: স্মৃতিসৌধ কোন সমাস ?
উত্তর: স্মৃতিসৌধ– দ্বিগু সমাস।
৩। কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাস চেনার উপায়
বিশেষ্য পদের সঙ্গে বিশেষণ পদের যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থই প্রধান থাকে, তাকে কর্মধারয় বলে। যেমন— নীল যে মানিক=নীলমানিক। যিনি মৌলভী তিনিই সাহেব=মৌলভী সাহেব। যে চালাক সেই চতুর=চালাক-চতুর। বিশেষণ ও বিশেষ্য, বিশেষ্য ও বিশেষণ, বিশেষণ ও বিশেষণ এবং বিশেষ্য ও বিশেষ্য পদযোগে কর্মধারয় সমাস হয়।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
প্রশ্ন: চিকিৎসাশাস্ত্র কোন সমাস ?
উত্তর: চিকিৎসাশাস্ত্র– কর্মধারয় সমাস।
প্রশ্ন: প্রাণভয় কোন সমাস ?
উত্তর: প্রাণভয়– কর্মধারয় সমাস।
প্রশ্ন: ক্ষুধিত পাষাণ কোন সমাস ?
উত্তর: ক্ষুধিত পাষাণ– কর্মধারয় সমাস।
প্রশ্ন: প্রাণভয় কোন সমাস ?
উত্তর: প্রাণভয়– কর্মধারয় সমাস।
প্রশ্ন: মৌমাছি কোন সমাস ?
উত্তর: মৌমাছি– কর্মধারয় সমাস।
কর্মধারয় সমাস প্রধানত পাঁচ প্রকার। যথা— (ক) সাধারণ কর্মধারয়, (খ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয়, (গ) উপমান কর্মধারয়, (ঘ) উপমিত কর্মধারয়, (ঙ) রূপক কর্মধারয়।
(ক) সাধারণ কর্মধারয়: (১) বিশেষণে-বিশেষ্যে : কানা যে কড়ি=কানাকড়ি। কাঁচা যে কলা=কাঁচকলা। উড়ো যে জাহাজ=উড়োজাহাজ। খাস যে মহল = খাসমহল। নীল যে উৎপল=নীলোৎপল। দুষ্ট যে মতি=দুষ্টমতি। মহান যে পুরুষ=মহাপুরুষ। ভাজা যে চাল=চালভাজা। অধম যে নর=নরাধম।
এরূপ—মহারানী, পূর্ণচন্দ্র, মহাকাল, মহাজন, মহর্ষি, আলুসিদ্ধ, নরসুন্দর, বেগুন-পোড়া, মাছভাজা, শ্বেতবস্ত্র, পরমাত্মা,হেড-মাস্টার, পুণ্যভূমি।
(২) বিশেষণে-বিশেষণে : যাহা মিঠা তাহাই কড়া = মিঠাকড়া। যে চালাক সে চতুর=চালাক-চতুর। যাহা হৄষ্ট তাহাই
পুষ্ট=হৄষ্টপুষ্ট। আগে ঘষা পরে মাজা=ঘষামাজা।
এরূপ—কাঁচামিঠা, টাটকা-ভাজা, ফিকা-লাল, আধফোটা, নিমরাজি, আধসিদ্ধ, সুস্থ সবল, মৃদু মন্দ, অম্লমধুর।
(৩) বিশেষ্যে-বিশেষ্যে : যাহা গোলাপ তাহাই ফুল=গোলাপ ফুল। যিনি রাজা তিনিই ঋষি=রাজর্ষি। যিনি জজ তিনিই সাহেব=জজসাহেব।
এরূপ—ঢাকা নগরী, গঙ্গানদী, পণ্ডিত মহাশয়, দেবর্ষি, লাটসাহেব, রাজাবাহাদুর, পিতৃদেব, ভূলোক, তমাললতা,মাস্টারমশাই ইত্যাদি।
(খ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় : কর্মধারয় সমাসে কোন কোন সময় ব্যাস বাক্যের মধ্যস্থিত পদ লোপ পায়। এরূপ ক্ষেত্রে, কর্মধারয়কে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় বলে। যেমন— ঘি মাখা ভাত=ঘিভাত। চালে ধরা কুমড়া= চালকুমড়া। ডাকবাহী গাড়ি=ডাকগাড়ি। সিংহ চিহ্নিত আসন=সিংহাসন। ছায়া প্রধান তরু=ছায়াতরু।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
প্রশ্ন: সংবাদপত্র কোন সমাস ?
উত্তর:সংবাদপত্র মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।
প্রশ্ন: সিংহাসন কোন সমাস ?
উত্তর: সিংহাসন মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।
প্রশ্ন: গোবর কোন সমাস ?
উত্তর:গোবর গণেশ মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।
উপমান কর্মধারয়
দুটো বস্তুর মধ্যে একটি গুণ সমানভাবে পাওয়া গেলে, তাদের মধ্যে তুলনা চলে। যে বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাকে উপমান বলে। যাকে তুলনা করা হয়, তাকে উপমেয় বলে। উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে যে গুণ ধর্মটি সাধারণ, তাকে সাধারণ ধর্ম বলে। যেমন— ‘চাঁদের ন্যায় সুন্দর মুখ’– এখানে ‘চাঁদ’ উপমান, ‘মুখ’ উপমেয় এবং উভয়ের মধ্যে সাধারণ গুণ ‘সৌন্দর্য’ হল সাধারণ ধর্ম।
উপমান পদের সাথে সাধারণ ধর্মবোধক পদের যে সমাস, তাকে উপমান কর্মধারয় বলে। উপমান সমাসে উপমেয় পদের উল্লেখ থাকে না। যেমন— মিশির ন্যায় কালো=মিশকালো। তুষারের ন্যায় ধবল=তুষার-ধবল। শশকের ন্যায় ব্যস্ত=শশব্যস্ত।
এরূপ— কাঠ-কঠিন, গোলাপ-রাঙা, বক-ধার্মিক, কাচভঙ্গুর, বজ্রকঠোর, কাজল-কালো, গো-বেচারী, ঘনশ্যাম, কুসুম-কোমল ইত্যাদি।
(ঘ) উপমিত কর্মধারয় : সাধারণ ধর্মের উল্লেখ না করে উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন— পুরুষ সিংহের ন্যায়=পুরুষসিংহ। মুখ চন্দ্রের ন্যায়=মুখ-চন্দ্র; বাহুলতার ন্যায়=বাহুলতা।
এরূপ—–করপল্লব, করকমল, পদ্মআঁখি, পাল্কিগাড়ি, চরণকমল, চাঁদবদন, পটলচোখ ইত্যাদি।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
প্রশ্ন: সোনামুখী কোন সমাস ?
উত্তর: সোনামুখী উপমিত কর্মধারয় সমাস।
প্রশ্ন: অরুণরাঙা কোন সমাস ?
উত্তর: অরুণরাঙা উপমান কর্মধারয় সমাস।
(ঙ) রূপক কর্মধারয় : উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হয় যে সমাসে, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে।
যেমন— বিষাদ রূপ সিন্ধু=বিষাদসিন্ধু। জ্ঞানরূপ আলোক=জ্ঞানালোক।
এরূপ—প্রাণপাখি, দিলদরিয়া, প্রেমডোর, সুখ-সাগর, ভবনদী, মনমাঝি, বিদ্যাধন, বিরহ-সাগর, ইত্যাদি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নাবলী
প্রশ্ন: সংখ্যালঘু কোন সমাস ?
উত্তর: সংখ্যালঘু– কর্মধারয় সমাস।
প্রশ্ন: পরপদ কোন সমাস ?
উত্তর: পরপদ– কর্মধারয় সমাস।
প্রশ্ন: বিষবৃক্ষ কোন সমাস ?
উত্তর: বিষবৃক্ষ– কর্মধারয় সমাস।
প্রশ্ন: সুবর্ণ কোন সমাস ?
উত্তর: সুবর্ণ– কর্মধারয় সমাস।
প্রশ্ন: মহানবী কোন সমাস ?
উত্তর: মহানবী– কর্মধারয় সমাস।
৪। তৎপুরুষ সমাস: পূর্ব পদের দ্বিতীয়া, তৃতীয়া ইত্যাদি বিভক্তির লোপ পেয়ে পরপদের সঙ্গে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থই প্রধান থাকে, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।
প্রশ্ন: ইহকাল কোন সমাস ?
উত্তর: ইহকাল তৎপুরুষ সমাস।
প্রশ্ন:অনুচিত কোন সমাস ?
উত্তর: অনুচিত তৎপুরুষ সমাস।
প্রশ্ন: কদাচার শব্দটি কোন সমাস ?
উত্তর: কদাচার তৎপুরুষ সমাস।
তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথা :
(ক) দ্বিতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদে দ্বিতীয়া বিভক্তির লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন— বিপদকে আপন্ন—বিপদাপন্ন। বধূকে বরণ=বধূবরণ।
এরূপ— ফুলতোলা, গা-ঢাকা, গা-টেপা, ঘাসকাটা, ছেলে-ভুলানো, নভেল-পড়া, লক্ষ্মীছাড়া, ভাতরাঁধা, রথদেখা, কলাবেচা।
(খ) তৃতীয়া তৎপুরুষ : পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন— ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা=ঢেঁকিছাঁটা। মন দ্বারা গড়া=মনগড়া।
এরূপ—– হাতগড়া, কালিমাখা, বাদুড়চোষা, ঝাঁটাপেটা, মধুমাখা, হস্তচালিত, ছায়াশীতল, বুদ্ধিহীন, শোকাকুল।
(গ) চতুৰ্থী তৎপুরুষ : পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তির লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন- মড়ার জন্য কান্না=মড়াকান্না। বিয়ের জন্য পাগলা=বিয়েপাগলা। রান্নার জন্য ঘর রান্নাঘর। গুরুকে ভক্তি=গুরুভক্তি।
এরূপ— আরামচেয়ার, বসতবাড়ি, হজযাত্রা, ডাকমাশুল, মালগাড়ি, এতিমখানা, বালিকা বিদ্যালয়, মরণকাঠি, দেবদত্ত, যুদ্ধযাত্রা, ছাত্রাবাস, শিশুসাহিত্য ইত্যাদি।
প্রশ্ন: ফৌজদারি আদালত শব্দটি কোন সমাস ?
উত্তর: ফৌজদারি আদালত শব্দটি চতুর্থী তৎপুরুষ তৎপুরুষ সমাস।
প্রশ্ন: দেবদত্ত আদালত শব্দটি কোন সমাস ?
উত্তর: দেবদত্ত শব্দটি চতুর্থী তৎপুরুষ তৎপুরুষ সমাস।
(ঘ) পঞ্চমী তৎপুরুষ : পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তির লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তা পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস। যেমন— বিলাত হতে ফেরত=বিলাতফেরত। লোক হতে ভয়=লোকভয়। বিপদ হতে মুক্ত=বিপদমুক্ত। জেল হতে মুক্ত-জেলমুক্ত।
এরূপ—স্কুল পালানো, আগাগোড়া, দুগ্ধজাত, পদচ্যুত, যুদ্ধবিরতি, স্বর্গভ্রষ্ট, বোঁটাখসা, শাপমুক্ত, জেলখালাস।
(ঙ) ষষ্ঠী তৎপুরুষ : পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তির লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তা ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস। যেমন—ধানের ক্ষেত=ধানক্ষেত।
প্রশ্ন: রাজপুত্র কোন সমাস ?
উত্তর: রাজপুত্র ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস।
পুকুরের ঘাট=পুকুরঘাট। পরের অধীন=পরাধীন। দেশের সেবা=দেশসেবা।
এরূপ— ঠাকুরবাড়ি, বটতলা, হাতঘড়ি, তালপাতা, মৌচাক, বাঁদর-নাচ, ফুলবাগান, চা-বাগান, গঙ্গাজল, ঘোড়দৌড়, মাঝদরিয়া ইত্যাদি।
(চ) সপ্তমী তৎপুরুষ : পূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তির লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তা সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস। যেমন—ঘরে পাতা=ঘরপাতা। গোলায় ভরা=গোলাভরা। গাছে পাকা=গাছপাকা। জলে মগ্ন=জলমগ্ন।
এরূপ—ইংরেজি শিক্ষিত, পকেট-জাত, রণ-ধীর, বন-জাত, মাথা-ব্যথা, রাতকানা, মনমরা, ভূতপূর্ব।
নঞ তৎপুরুষ : নঞ অব্যয় (না, নাই, নয়) পূর্বপদ হিসেবে থেকে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে নঞ্ তৎপুরুষ সমাস বলে।
যেমন— নাই জানা=অজানা। নাই আদব=বেয়াদব। ন অতি দীর্ঘ=নাতিদীর্ঘ। নয় হাজির গরহাজির।
এরূপ— আঁকাড়া, নিখোঁজ, অচেনা, অকেজো, বেসরকারি, বেরসিক, গরমিল, অনেক, অনাদর, অনধিকার, অধর্ম, অসুখ,অবিশ্বাস, অভদ্র ইত্যাদি।
অলুক্ তৎপুরুষ : পূর্বপদে বিভক্তির লোপ না হয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তা অলুক্ তৎপুরুষ সমাস। যেমন—গায়ে
হলুদ=গায়েহলুদ। হাতে কাটা=হাতকাটা। গরুর গাড়ি=গরুর গাড়ি। মামার বাড়ি=মামার বাড়ি। পাথরের বাটি=পাথরের বাটি।এরূপ— গায়ে পড়া, পায়ে পড়া, হাতে গড়া ইত্যাদি।
৫। অব্যয়ীভাব সমাস
যে সমাসে পূর্বপদে অব্যয় থাকে এবং অব্যয়ের অর্থই প্রধান থাকে, তার নাম অব্যয়ীভাব সমাস। যেমন—কূলের
সমীপে=উপকূল। বিভিন্ন অর্থে অব্যয়ীভাব সমাস হয় :
(ক) নৈকট্য বা সামীপ্য অর্থে— কণ্ঠের নিকটে=উপকণ্ঠ। কূলের সমীপে=উপকূল।
(খ) বীপ্সা অর্থে— দিন দিন=প্রতিদিন। বছর বছর=ফিবছর। জন জন=প্রতিজন। রোজ রোজ=হররোজ। ক্ষণক্ষণ=অনুক্ষণ।
(গ) অভাব অর্থে— ভাতের অভাব-হা-ভাত। ভিক্ষার অভাব=দুর্ভিক্ষ। আমিষের অভাব=নিরামিষ। জনের অভাব=নির্জন।
(ঘ) পর্যন্ত অর্থে— সমুদ্র পর্যন্ত=আসমুদ্র। কণ্ঠ পর্যন্ত=আকণ্ঠ। মৃত্যু পর্যন্ত=-আমৃত্যু।
(ঙ) সাদৃশ্য অর্থে— বনের সদৃশ=উপবন। মূর্তির সদৃশ=প্রতিমূর্তি। দ্বীপের সদৃশ=উপদ্বীপ। কথার সদৃশ=উপকথা।
(চ) যোগ্যতা অর্থে—রূপের যোগ্য=অনুরূপ।
(ছ) পশ্চাৎ অর্থে— গমনের পশ্চাৎ=অনুগমন। সরণের পশ্চাৎ=অনুসরণ।
(জ) অনতিক্রম অর্ধে— রীতিকে অতিক্রম না করে=যথারীতি। শক্তিতে অতিক্রম না করে=যথাশক্তি।
প্রশ্ন: অনুতাপ কোন সমাস ?
উত্তর: অনুতাপ ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস।
প্রশ্ন: দিন দিন প্রতিদিন কোন সমাস ?
উত্তর: দিন দিন= প্রতিদিন অব্যয়ীভাব সমাস।
প্রশ্ন: বেহায়া কোন সমাস ?
উত্তর:বেহায়া অব্যয়ীভাব সমাস।
৬। বহুব্রীহি সমাস
বহুব্রীহি সমাস কত প্রকার
যে সমাসের সমস্ত পদটি সমস্যমান পদ দুটোর কোনটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্য একটি তৃতীয় অর্থ প্রকাশ করে, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন— দশ আনন যার=দশানন (বিশেষ অর্থ ‘রাবণ’)। বহুব্রীহি (ধান) যার=বহুব্রীহি (বহু ধান আছে যার সে লোক’কে বোঝাচ্ছে)। বহুব্রীহি সমাস নানা প্রকারের হয়। তার মধ্যে নিচের কয়টিই প্রধান :
(ক) সমানাধিকরণ বহুব্রীহি— পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি হয়। যেমন— বদমেজাজ যার=বদমেজাজী। হত ভাগ্য যার=হতভাগ্য।
এরূপ— নীলকণ্ঠি, পিতাম্বর, সুশীল, সুশ্রী, জিতেন্দ্ৰিয়।
(খ)ব্যধিকরণ বহুব্রীহি– সমস্যমান পদ দুটোর কোনটিই বিশেষণ না হলে ব্যধিকরণ বহুব্রীহি হয়। যেমন— আশীতে বিষ যার=আশীবিষ।
এরূপ— শূলপানি, বীণাপাণি, পদ্মনাভ, চন্দ্রচূড়া, খড়গহস্ত। এ সমাসে পূর্বপদ ও পরপদ দুটোই বিশেষ্য হয়।
(গ) ব্যতিহার বহুব্রীহি— ক্রিয়ার পারস্পরিকতা বোঝালে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। যেমন— কানে কানে যে কথা-কানাকানি। হাতে হাতে যে যুদ্ধ=হাতাহাতি। লাঠিতে লাঠিতে যে মারামারি= লাঠালাঠি। চুলে চুলে যে ঝগড়া=চুলাচুলি।
(ঘ) মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি— যে বহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যে ব্যাখ্যার জন্য আনীত পদের লোপ হয়, তা মধ্যপদলোপী বহুব্রীহ।
যেমন— পাঁচ হাত পরিমাণ যার=পাঁচহাতী। গোঁফে খেজুর পড়ে থাকলেও খায় না যে— গোঁফ খেজুরে। এরূপ—– হাতেখড়ি, ভাইফোঁটা, রাখী ভাই, পাঁচ বছরে।
(ঙ)নঞ্ বহুব্রীহি— নঞ্ (‘না’ অর্থবোধক) অব্যয় পূর্বপদ হয়ে পরপদের সাথে যে বহুব্রীহি সমাস হয়, তার নাম নঞ্ বহুব্রীহি। যেমন— নাই জ্ঞান যার=অজ্ঞান। নাই ভুল যাতে=নির্ভুল।
এরূপ— বেতার, বেহুঁশ, নিরুপায়, অবুঝ, অকেজো, বেপরোয়া ইত্যাদি।
(চ)অলুক বহুব্রীহি—যে বহুব্রীহি সমাসে বিভক্তির লোপ হয় না, তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে। যেমন—কানে কলম যার=কানে-কলম। মাথায় পাগড়ি যার=মাথায়-পাগড়ি।
এরূপ— জুতা পায়ে, গায়ে-পড়া, ছড়ি-হাতে, ঘাড়ে-পড়া, কানে-খাটো, মুখে-ভাত ইত্যাদি।
প্রশ্ন: কৃতবিদ্যা কোন সমাস ?
উত্তর:কৃতবিদ্যা শব্দটি হলো বহুব্রীহি সমাস।
প্রশ্ন: অল্পপ্রাণ কোন সমাস ?
উত্তর:অল্পপ্রাণ শব্দটি বহু ব্রীহি সমাস।
প্রশ্ন: সুগন্ধি কোন সমাস ?
উত্তর: সুগন্ধি বহু ব্রীহি সমাস।
প্রশ্ন: গায়ে হলুদ কোন সমাস ?
উত্তর: গায়ে হলুদ বহু ব্রীহি সমাস।
প্রশ্ন: নীলাম্বর কোন সমাস ?
উত্তর: নীলাম্বর বহু ব্রীহি সমাস।
প্রশ্ন: আশীবিষ কোন সমাস ?
উত্তর: আশীবিষ বহু ব্রীহি সমাস।
প্রশ্ন: কানাকানি কোন সমাস ?
উত্তর: কানাকানি বহু ব্রীহি সমাস।