সামাজিক প্রাণী বললেই প্রথমে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে মৌমাছিসহ একটি মৌচাকের ছবি। কিন্তু এদের সামাজিক জীবনযাত্রার গভীর কর্মকান্ড দেখার সুযোগ ও সময় আমাদের হয়না। একটি মৌচাকে যে সদস্যরা থাকে তারা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে অবস্থান ও কাজে নিযুক্ত থাকে। চাকের প্রত্যেক সদস্য নিজের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে অন্য সদস্যদের কল্যাণে একমনে কাজ করে যায় । সমাজের সদস্যদের এমন মনোভাবকে পারস্পরিক সহযোগিতা বা পরার্থিতা বা অ্যালট্রইজম (altruism) বলে ।
পরার্থিতা মৌমাছির সামাজিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুস্পষ্ট। যেমন-বিশেষ ধরনের নাচের মাধ্যমে সতর্ক ও শান্ত হওয়া কিংবা ফুলের দিকে নির্দেশনা পেয়ে সমস্ত মৌমাছি পারস্পরিক যোগাযোগের বিষয়টি সম্পন্ন করে। রাণী মৌমাছির দেহনির্গত ফেরোমোনের প্রভাবে একটিমাত্র চাকে প্রায় এক লক্ষ মৌমাছির সুশংখল হয়ে বাস করে। চাকের বিভিন্ন বয়সের ও গঠনের সদস্য ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে। রাণীর কাজ ডিম পেরে সেগুলো থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুরুষ ও কর্মী মৌমাছি সৃষ্টি করা। রাণীর সঙ্গে যৌন মিলন পুরুষ মৌমাছির একমাত্র কাজ, খাদ্যের জন্য কর্মী মৌমাছির উপর নির্ভরশীল । কর্মী মৌমাছি হচ্ছে বন্ধ্যা স্ত্রী সদস্য। এদের কাজ লার্ভার দেখভাল করা, মৌচাকের গড়ন ঠিক রাখা, চাক পাহারা দেওয়া, ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা প্রভৃতি। এভাবে সামাজিক বন্ধন অটুট রাখতে সব ধরনের মৌমাছি নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছে।