স্ত্রী প্রজননতন্ত্র নিচে বর্ণিত অংশগুলো নিয়ে গঠিত :
১। ডিম্বাশয় (Ovary) ঃ শ্রোণীর পেছনে ফাঁপা গহ্বরে জরায়ুর দুপাশে ইউরেটারের নিচে বাদাম আকৃতির একজোড়া
ডিম্বাশয় অবস্থিত। প্রত্যেক ডিম্বাশয় ২.৫-৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ১.৫-৩ সেন্টিমিটার চওড়া ও ০.৬-১.৫ সেন্টিমিটার পুরু এবং জরায়ু ও ফেলোপিয়ান নালিসহ উদরে একটি পেরিটোনিয়াম পর্দার ভাঁজ করা টিস্যুর সাহায্যে আটকে থাকে। এদের ওজন ২.০-৩.৫ গ্রাম।
কাজ ঃ ডিম্বাণু উৎপন্ন করা ডিম্বাশয়ের প্রধান কাজ। তাছাড়া স্ত্রী যৌন হরমোন-ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরণ ক্ষরণ
করে থাকে। এসব হরমোনের প্রভাবে রজঃচক্র, গভ, অমরা, জননেন্দ্রিয়, মাতৃস্তন পুষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
২। ডিম্বনালি বা ফেলোপিয়ান নালি (Fallopian tube) ঃ এরা জরায়ুর দুপাশে অবস্থিত দুটি পেশল ও ১২
সেন্টিমিটার লম্বা নালি। নালির একপ্রান্ত ডিম্বাশয়ের কাছে পেরিটোনিয়াল গহ্বরে ও অন্যপ্রান্ত জরায়ু-গহ্বরে উন্মুক্ত।
ডিম্বাশয় সংলগ্ন প্রান্তটি অসংখ্য আঙ্গুলের মতো প্রবর্ধনযুক্ত হয়ে ঝালর বা ফিমব্রি (fimbriae)-তে পরিণত হয়। পরের ফানেলাকার অংশটি ইনফান্ডিবুলাম (infundibulum)। এর স্ফীত অংশ অ্যাম্পুলা (ampulla) এবং যে মধ্য অংশটি জরায়ু-প্রাচীরের কাছে থাকে তা ইসথমাস (isthmus)।
কাজ ঃ ডিম্বনালি ডিম্বাশয় থেকে মুক্ত পরিণত ডিম্বাণুকে গ্রহণ করে জরায়ুতে পৌঁছে দেয় এবং রস ক্ষরণ করে
শুক্রাণুকে ঊর্ধ্বপ্রান্তে উঠে ডিম্বাণুকে নিষিক্তকরণে সাহায্য করে।
৩। জরায়ু (Uterus) : এটি দেখতে উল্টানো নাশপতির মতো, ফাঁপা, মাংসল অঙ্গ এবং মূত্রাশয়ের পেছনে ও
মলাশয়ের সামনে শ্রোণীগহ্বরে অবস্থিত। জরায়ু-প্রাচীর বহিঃস্থ পেরিটোনিয়াম (peritoneum), মধ্যস্থ মায়োমেট্রিয়াম
(myometrium) এবং অন্তঃস্থ এন্ডোমেট্রিয়াম (endometrium)-এ গঠিত। জরায়ুর উপরের অংশকে জরায়ুদেহ
(body of uterus) এবং নিচের অংশকে সারভিক্স (cervix) বলে। বয়ঃসন্ধিক্ষণে জরায়ু পূর্ণতা লাভ করে, কিন্তু গর্ভাবস্থায় এটি প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পায়।
কাজ ঃ জরায়ু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ভ্রূণকে আগলে রক্ষা করে এবং পরিস্ফুটন সম্ভবপর করে তোলে । এখান থেকে অমরা সৃষ্টি হয়ে ভ্রূণের পুষ্টি, রেচন ও শ্বসন সম্পন্ন করে। শুক্রাণুর আগমনকে ত্বরান্বিত করে। সারভিক্সের (জরায়ুকণ্ঠের) নিঃসৃত ক্ষারকীয় রস শুক্রাণুর চলৎশক্তি বৃদ্ধি করে৪। যোনি (Vagina)ঃ এটি শুক্রাণু গ্রহণের সাথে সম্পর্কযুক্ত স্ত্রীদেহের একটি মাংসল, ৮-১০ সেন্টিমিটার লম নলাকার খাদ যা মূত্রাশয়ের নিচ দিয়ে দেহের অভ্যন্তরে অবস্থিত জরায়ু থেকে বাইরে উন্মুক্ত। যোনির প্রাচীরে রুগী (rugae) নামক অসংখ্য ভাঁজ থাকে।
কাজ ঃ যোনি মাংসল প্রাচীরের সাহায্যে যে কোনো আকারের শিশুকে গ্রহণ করে। বীর্য স্খলনের জন্য প্রয়োজনীয় উত্তেজনা প্রদান করে। স্খলিত বীর্য গ্রহণ করে এবং প্রসব ফেলোপিয়ান নাদি ঝামেলামুক্ত করে।
৫। বহিঃযৌনাঙ্গ (External genitalia) : এগুলো যোনিমুখে অবস্থিত সংবেদী স্নায়ুপ্রান্তসমৃদ্ধ দুটি মাংসল ভাঁজ ও
ভগাংকুর। ভাঁজদুটি কপাটের মতো যোনিপথকে ঢেকে রাখে। এদের একটি বড় ও একটি ছোট এবং যথাক্রমে লেবিয়া মেজরা ও লেবিয়া মাইনরা নামে পরিচিত। দুই লেবিয়া মেজরার সন্ধিস্থলের উপরের অংশের ভেতর মেদ টিস্যু থাকায় ঐ অংশ বেশ উঁচু এবং চুলে ভরা থাকে। এ উঁচু অংশকে মন্স ভেনেরিস বা মন্স পিউবিস বলে । লেবিয়া মেজরার একেবারে উপরে জোড়ের কাছে যে উঁচু ছোট মাংসপিন্ড দেখা যায়, তাকে ক্লাইটোরিস (বা ভগাংকুর) বলে । যোনি ও ইউরেথ্রা এখানে উন্মুক্ত হয় । ইউরেথ্রার চারদিকে এবং ক্লাইটোরিসের উপরে কতকগুলো ক্ষুদ্র গ্রন্থি
অবস্থিত। লেবিয়া মাইনরা-র অন্তর্তলে বার্থোলিন-এর গ্রন্থি নামে দুটি বড় গ্রন্থি উন্মুক্ত হয়েছে।
কাজ : লেবিয়া মেজরা ও মাইনরা যোনিদ্বারকে ঢেকে রাখে। বার্থোলিন-এর গ্রন্থিক্ষরণ যৌনমিলনের সময় যোনিপথকে পিচ্ছিল করে তোলে। ক্লাইটোরিস যৌনমিলনকে আনন্দঘন করে তোলে।
