হার্ট অ্যাটাক(heart attack) কি-what is heart attack
হার্ট অ্যাটাক(heart attack), যাকে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (MI) ও বলা হয়, এটি একটি চিকিৎসাগত জরুরি অবস্থা যেখানে হৃদয়ের মাংসপেশীর কিছু অংশে রক্ত সঞ্চালন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঐ অংশের টিস্যু অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। এটি সাধারণত করোনারি ধমনীতে ব্লকেজের কারণে ঘটে। এই ব্লকেজ সাধারণত চর্বি, কোলেস্টেরল ও অন্যান্য পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত প্ল্যাকের কারণে হয়, যা ধমনীতে জমে থাকে।
হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ(heart attack symptoms) বা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ(symptoms of heart attack)
heart attack symptoms bangla-mini heart attack symptoms-heart attack er lokkhon
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো(heart attack symptoms) বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ নিম্নরূপ:
প্রধান লক্ষণ
- বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি:
- বুকে কেন্দ্রীয়ভাবে তীব্র ব্যথা বা চেপে ধরা অনুভূতি।
- ব্যথা কয়েক মিনিট ধরে থাকতে পারে বা অস্থায়ীভাবে চলে যেতে পারে এবং পরে আবার ফিরে আসতে পারে।
- এই ব্যথা বা অস্বস্তি বাহু, ঘাড়, চোয়াল, পিঠ বা পেটে ছড়িয়ে যেতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণ
- শ্বাসকষ্ট:
- হঠাৎ করে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
- এই লক্ষণটি বুকে ব্যথার সাথে বা ব্যথা ছাড়াও হতে পারে।
- ঠাণ্ডা ঘাম:
- অস্বাভাবিকভাবে ঘাম হওয়া।
- শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া।
- বমি বমি ভাব বা বমি:
- পাকস্থলীতে অস্বস্তি বা বমি আসার মতো অনুভূতি।
- প্রকৃত বমি হওয়া।
- মাথা ঘোরা বা দুর্বল অনুভূতি:
- মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানোর মতো অনুভূতি।
- খুব দুর্বল লাগা বা মূর্ছা যাওয়া।
কম সাধারণ লক্ষণ
- পিঠ বা চোয়ালের ব্যথা:
- পিঠের উপরের অংশে বা চোয়ালে ব্যথা হতে পারে।
- পেট ব্যথা:
- উপরের পেটে ব্যথা বা চাপ অনুভূতি।
- অস্বাভাবিক ক্লান্তি:
- কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই খুব ক্লান্ত বা দুর্বল লাগা।
pre heart attack symptoms female-heart attack symptoms in women
নারীদের হৃদয়ঘাতের লক্ষণগুলি অন্ততঃপরিপূর্ণ হতে পারে এবং এগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- সাধারণ সমস্যা বা অসুস্থতা, সাধারণত স্থল এবং ব্যাথা
- অচেতন বা মাথা চক্ষু অচেতনা
- শ্বাসকষ্ট
- অকারণে বা সাময়িক শ্বাসবন্ধি এবং
- বমিচা
প্রতিটি ব্যক্তির লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। মহিলারা অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের সময় অস্বাভাবিক ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, পিঠ বা চোয়ালের ব্যথা এবং বমি বমি ভাব বেশি অনুভব করতে পারেন।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে জরুরি চিকিৎসা সাহায্য নেওয়া উচিত। দেরি করলে হৃদয়ের ক্ষতি বাড়তে পারে এবং প্রাণহানির সম্ভাবনাও থাকতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক কেন হয়-হার্ট অ্যাটাকের কারণ
হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (MI) ঘটে যখন হৃদয়ের মাংসপেশীতে রক্ত সঞ্চালন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রধান কারণ হলো করোনারি ধমনীতে ব্লকেজ তৈরি হওয়া। এই ব্লকেজের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেগুলি নিচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:
করোনারি ধমনীতে ব্লকেজ
- অ্যাথেরোসক্লেরোসিস:
- এটি একটি অবস্থায় যেখানে ধমনীগুলোতে চর্বি, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থের সমন্বয়ে প্ল্যাক তৈরি হয়।
- সময়ের সাথে সাথে এই প্ল্যাকগুলো শক্ত হয়ে ধমনীগুলোর ভেতরের অংশ সংকুচিত বা বন্ধ হয়ে যায়, ফলে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়।
- প্ল্যাকের ফেটে যাওয়া:
- যখন একটি প্ল্যাক ফেটে যায়, তখন এর ভেতরের পদার্থ রক্তপ্রবাহে চলে আসে এবং রক্ত জমাট বেঁধে যায় (থ্রম্বাস)।
- এই থ্রম্বাস পুরোপুরি ধমনীর রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে, ফলে হৃদয়ে অক্সিজেন পৌঁছাতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
অন্যান্য কারণ
- করোনারি আর্টারি স্পাজম:
- ধমনীর দেয়ালগুলি হঠাৎ করে সংকুচিত হয়ে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- এটি সাধারণত মাদক সেবন, ধূমপান, বা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে হতে পারে।
- কখনো কখনো মানসিক চাপ বা শারীরিক স্ট্রেস:
- চরম মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম হৃদয়ের রক্তপ্রবাহে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ঝুঁকির কারণ
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- ধূমপান:
- ধূমপান করার কারণে ধমনীতে প্ল্যাক জমার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- উচ্চ রক্তচাপ:
- দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ রক্তচাপ ধমনীতে চাপ সৃষ্টি করে এবং প্ল্যাক জমতে সাহায্য করে।
- উচ্চ কোলেস্টেরল:
- রক্তে উচ্চ মাত্রার খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এবং কম মাত্রার ভালো কোলেস্টেরল (HDL) থাকলে ধমনীতে প্ল্যাক জমার সম্ভাবনা বাড়ে।
- ডায়াবেটিস:
- ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ধমনীতে প্ল্যাক জমার ঝুঁকি বাড়ায়।
- স্থূলতা:
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- পারিবারিক ইতিহাস:
- পরিবারের কারও হৃদরোগ থাকলে এই ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- অ্যাক্টিভিটি এবং খাদ্যাভ্যাস:
- শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- বয়স:
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত মদ্যপান:
- অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং ধমনীতে ক্ষতি করতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা পালন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধূমপান পরিত্যাগ, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
হার্ট অ্যাটাক কত প্রকার
হার্ট অ্যাটাক সাধারণত বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যা মূলত করোনারি ধমনীর ব্লকেজের ধরন ও আকার, ব্লকেজের অবস্থান, এবং ক্ষতির পরিমাণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, হার্ট অ্যাটাককে প্রধানত তিনটি প্রকারে ভাগ করা হয়:
১. এসটি-এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (STEMI)
- সংজ্ঞা: STEMI হল সবচেয়ে গুরুতর ধরনের হার্ট অ্যাটাক, যেখানে হৃদয়ের একটি প্রধান ধমনী সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
- লক্ষণ: বুকে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডা ঘাম, মাথা ঘোরা।
- ইসিজি ফলাফল: ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রামে (ইসিজি) ST সেগমেন্টে উঁচুতা দেখা যায়।
- চিকিৎসা: জরুরি ভিত্তিতে ধমনী খুলে দেওয়া (প্রাইমারি পিসিআই বা থ্রম্বলাইটিক থেরাপি)।
২. নন-এসটি-এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (NSTEMI)
- সংজ্ঞা: NSTEMI একটি প্রকার হার্ট অ্যাটাক যেখানে ধমনী আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং হৃদয়ের কিছু অংশে রক্ত সঞ্চালন হ্রাস পায়।
- লক্ষণ: ব্যথা STEMI-এর মতো তীব্র নাও হতে পারে, কিন্তু ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে।
- ইসিজি ফলাফল: ইসিজিতে ST সেগমেন্টে উঁচুতা দেখা যায় না, কিন্তু হৃদয় ক্ষতির চিহ্ন (ট্রোপোনিন) বৃদ্ধি পায়।
- চিকিৎসা: মেডিকেশন, পিসিআই, অথবা করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং (CABG) প্রয়োজন হতে পারে।
৩. সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক
- সংজ্ঞা: সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকের সময় রোগী সাধারণত কোনো লক্ষণ অনুভব করেন না বা সামান্য লক্ষণ থাকে, যা সাধারণ অসুস্থতা বা অন্য সমস্যার সাথে মিলে যেতে পারে।
- লক্ষণ: প্রায়শই লক্ষণহীন, কখনো কখনো হালকা অস্বস্তি বা ক্লান্তি।
- পরে ধরা পড়া: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা ইসিজি/ইকোকার্ডিওগ্রামে এই ধরনের হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়তে পারে।
- চিকিৎসা: সাধারণত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং জীবনধারার পরিবর্তন।
অন্যান্য প্রকার
- প্রিনজমেটাল অ্যানজাইনা (Prinzmetal’s Angina):
- সংজ্ঞা: এটি একটি অস্বাভাবিক প্রকারের অ্যানজাইনা যেখানে ধমনীতে হঠাৎ করে স্পাজম হয়, ফলে অস্থায়ীভাবে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়।
- লক্ষণ: সাধারণত বিশ্রামের সময় বুকে ব্যথা।
- মাইনর মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন:
- সংজ্ঞা: মৃদু ধমনী ব্লকেজের কারণে ছোটখাট হার্ট অ্যাটাক।
- লক্ষণ: হালকা থেকে মাঝারি বুকে ব্যথা, যা বিশ্রাম বা ওষুধে সেরে যেতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের প্রতিটি প্রকারের লক্ষণ, চিকিৎসা পদ্ধতি ও প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। উপযুক্ত চিকিৎসা এবং দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের ক্ষতি কমানো সম্ভব।
হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় কোন পরীক্ষার মাধ্যমে
হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি পরীক্ষা হল:
১. ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি)
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম বা ইসিজি হল একটি সাধারণ পরীক্ষা যা হৃদপিণ্ডের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ নিরীক্ষণ করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের বিভিন্ন অংশের কার্যকলাপের সময় পরিবর্তনগুলি নির্ধারণ করা যায়। হার্ট অ্যাটাকের সময় হৃদপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলি স্বাভাবিক বৈদ্যুতিক কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটায়, যা ইসিজিতে ধরা পড়ে।
২. রক্ত পরীক্ষা
হার্ট অ্যাটাকের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হৃদপেশী থেকে বিভিন্ন প্রোটিন রক্তে নিঃসরিত হয়। এই প্রোটিনগুলির মাত্রা নির্ধারণের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। প্রধান প্রোটিনগুলি হল:
- ট্রোপোনিন: এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সাধারণভাবে ব্যবহৃত মার্কার।
- ক্রিয়েটিন কাইনেজ-মায়োগ্লোবিন (CK-MB): এটি হার্টের ক্ষতির সূচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- মায়োগ্লোবিন: এটি দ্রুত বৃদ্ধি পায় কিন্তু নির্দিষ্টতা কম।
৩. ইকোকার্ডিওগ্রাম
ইকোকার্ডিওগ্রাম হল একটি আল্ট্রাসাউন্ড ভিত্তিক পরীক্ষা যা হৃদপিণ্ডের চিত্র ধারণ করে। এর মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের গঠন, কার্যকলাপ এবং ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলি নির্ধারণ করা যায়। হার্ট অ্যাটাকের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হৃদপেশীর কার্যকলাপ কমে যায়, যা ইকোকার্ডিওগ্রামে ধরা পড়ে।
৪. কোরোনারি এঞ্জিওগ্রাম
কোরোনারি এঞ্জিওগ্রাম একটি বিশেষ এক্স-রে পরীক্ষা যা কোরোনারি ধমনীগুলির ভিতরের চিত্র ধারণ করে। এই পরীক্ষায়, একটি রঞ্জন রঞ্জিত পদার্থ ধমনীগুলির মধ্যে ইনজেক্ট করা হয় এবং এক্স-রে এর মাধ্যমে ধমনীগুলির বদ্ধতা বা সংকীর্ণতা নির্ধারণ করা হয়।
৫. নিউক্লিয়ার স্ক্যান
নিউক্লিয়ার স্ক্যানের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ এবং ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের অবস্থান নির্ধারণ করা যায়। এতে একটি ট্রেসার পদার্থ শরীরে ইনজেক্ট করা হয় এবং একটি বিশেষ ক্যামেরা এর মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের চিত্র গ্রহণ করা হয়।
৬. এমআরআই এবং সিটি স্ক্যান
এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) এবং সিটি (কম্পিউটেড টমোগ্রাফি) স্ক্যান হৃদপিণ্ডের বিস্তারিত চিত্র প্রদান করে। এর মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের গঠন, কার্যকলাপ এবং ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলি নির্ধারণ করা যায়।
এই পরীক্ষাগুলি একত্রে ব্যবহৃত হয় হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত করতে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নির্ধারণ করতে।
হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয়
হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জীবন রক্ষা করতে পারে। নিচে হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয় পদক্ষেপগুলি বর্ণনা করা হলো:
১. লক্ষণগুলি চিহ্নিত করা
হার্ট অ্যাটাকের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- বুকে প্রচণ্ড ব্যথা বা চাপ অনুভব করা
- শরীরের উপরের অংশে (গলা, চোয়াল, কাঁধ, বাহু) ব্যথা ছড়িয়ে পড়া
- শ্বাসকষ্ট
- ঠান্ডা ঘাম
- মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়া
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
২. জরুরি সেবা ডাকা
জরুরি নম্বরে ফোন করা: যদি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি দেখা দেয়, তবে দেরি না করে তৎক্ষণাৎ ৯১১ বা স্থানীয় জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করুন।
৩. নিজে থেকে চালানোর চেষ্টা না করা
হার্ট অ্যাটাক হলে নিজে থেকে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। এ অবস্থায় দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স ডাকা সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর পদ্ধতি।
৪. এসপিরিন গ্রহণ
যদি রোগী এসপিরিন সহ্য করতে পারে এবং এলার্জি না থাকে, তবে তৎক্ষণাৎ ১৬২-৩২৫ মি.গ্রা এসপিরিন চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে এবং হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ উন্নত করতে সহায়ক।
৫. বিশ্রাম ও শান্ত থাকা
রোগীকে শুয়ে বা বসে বিশ্রাম নিতে বলুন এবং যতটা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত আন্দোলন বা উত্তেজনা হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ বাড়াতে পারে।
৬. সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন)
যদি রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় এবং শ্বাস নিচ্ছে না বা পালস নেই, তবে সিপিআর শুরু করুন। সিপিআর করার সঠিক পদ্ধতি জানলে তা দ্রুত প্রয়োগ করুন:
- রোগীকে শক্ত মাটিতে শুইয়ে দিন।
- দুই হাতের তালু একের ওপর রেখে, বুকে চাপ দিন। প্রতি মিনিটে ১০০-১২০ বার।
- মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বজায় রাখার জন্য চেস্ট কম্প্রেশন চালিয়ে যান যতক্ষণ না জরুরি সেবা আসে।
৭. অ্যাডভান্সড মেডিকেল ট্রীটমেন্ট
জরুরি সেবা আসার পর, তাদের রোগীর অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দিন। হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার পর, তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়া হবে যেমন:
- ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি) করা
- রক্ত পরীক্ষা
- কোরোনারি এঞ্জিওগ্রাম করা
- থ্রম্বোলাইটিক ওষুধ প্রয়োগ করা
- কোরোনারি এঞ্জিওপ্লাস্টি এবং স্টেন্টিং করা
৮. দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া
হার্ট অ্যাটাকের পর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা শুরু করা অত্যন্ত জরুরি। সময়মত চিকিৎসা রোগীর জীবন রক্ষা করতে এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতি কমাতে সহায়ক।
হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জীবন রক্ষা করতে পারে। পরিস্থিতি অনুযায়ী এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন এবং জরুরি সেবা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন।
হার্ট অ্যাটাকের পর করণীয়
হার্ট অ্যাটাকের পর রোগীর যত্ন নেওয়া এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হার্ট অ্যাটাকের পর করণীয় পদক্ষেপগুলি নিচে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:
১. হাসপাতাল বা জরুরি সেবা
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা জরুরি চিকিৎসা সেবা নেওয়া অত্যাবশ্যক। জরুরি বিভাগে রোগীর অবস্থা মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হবে।
২. চিকিৎসা প্রক্রিয়া
মেডিকেশন: হার্ট অ্যাটাকের পর বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, যেমন:
- এসপিরিন: রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে।
- থ্রম্বোলাইটিক ওষুধ: রক্তনালীতে জমাট বাঁধা রক্ত গলানোর জন্য।
- বেটা-ব্লকারস: হৃদপিণ্ডের চাপ কমাতে।
- এসিই ইনহিবিটরস: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদপিণ্ডের কাজকে সহায়তা করে।
- স্ট্যাটিনস: কোলেস্টেরল কমাতে।
প্রসিডিউরস: প্রয়োজনীয় হলে নিম্নলিখিত প্রক্রিয়াগুলি প্রয়োগ করা যেতে পারে:
- কোরোনারি এঞ্জিওপ্লাস্টি এবং স্টেন্টিং: বদ্ধ ধমনীগুলি খুলতে।
- কোরোনারি বাইপাস সার্জারি: ব্লকেজ বাইপাস করতে।
৩. পুনর্বাসন
হার্ট রিহ্যাবিলিটেশন: এটি একটি বিশেষ প্রোগ্রাম যা রোগীর ফিজিক্যাল, ইমোশনাল এবং সামাজিক পুনর্বাসন নিশ্চিত করে। এই প্রোগ্রামে শরীরচর্চা, ডায়েট, জীবনধারা পরিবর্তন, এবং মানসিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
৪. জীবনধারা পরিবর্তন
ডায়েট: হৃদয়বান্ধব খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কম সোডিয়াম এবং প্রচুর পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খাওয়া উচিৎ।
শরীরচর্চা: নিয়মিত ব্যায়াম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করা উচিত।
ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান হার্টের জন্য ক্ষতিকর। এটি বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা প্রয়োজন।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা থেরাপি উপকারী হতে পারে।
৫. নিয়মিত চেকআপ
হার্ট অ্যাটাকের পর নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে চেকআপ করা প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার।
৬. সামাজিক এবং মানসিক সমর্থন
হার্ট অ্যাটাকের পর মানসিক সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীদের সহায়তা পাওয়া উচিত। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে থেরাপি বা কাউন্সেলিং সহায়ক হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের পর সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া দ্রুত এবং কার্যকরী হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনধারা পরিবর্তন এবং নিয়মিত চেকআপ নিশ্চিত করতে হবে।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়-হার্ট অ্যাটাক থেকে বাচার উপায়
how to prevent heart attack
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে। এগুলি অনুসরণ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এখানে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের কিছু উপায় বর্ণনা করা হলো:
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
সুষম খাদ্য গ্রহণ: হৃদয়বান্ধব খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা উচিত। খাদ্য তালিকায় প্রচুর ফল, শাকসবজি, সম্পূর্ণ শস্য, লীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (যেমন অলিভ অয়েল) অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট: এসব ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যেমন পলিআনস্যাচুরেটেড এবং মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ করা উচিত।
কম সোডিয়াম: উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের জন্য সোডিয়াম গ্রহণ কমানো উচিত। প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত লবণ পরিহার করা উচিৎ।
২. নিয়মিত ব্যায়াম
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত। হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি ব্যায়াম হার্টের জন্য উপকারী। ব্যায়াম হৃদপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৩. ধূমপান ত্যাগ
ধূমপান হার্টের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ধূমপান ত্যাগ করলে হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। ধূমপায়ীদের জন্য তামাক ছাড়ার বিভিন্ন পদ্ধতি এবং সহায়তা প্রোগ্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. অ্যালকোহল সীমিতকরণ
অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত করা উচিত। পুরুষদের জন্য দিনে ২ গ্লাস এবং মহিলাদের জন্য দিনে ১ গ্লাস অ্যালকোহল গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। এসব উপাদান হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৬. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
মানসিক চাপ হৃদরোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, থেরাপি ইত্যাদি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
৭. পর্যাপ্ত ঘুম
পর্যাপ্ত এবং গুণগত মানের ঘুম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিরাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমের পরামর্শ দেওয়া হয়।
৮. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ১৮.৫ থেকে ২৪.৯ এর মধ্যে থাকা উচিত।
৯. পর্যাপ্ত জলপান
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ জলপান করা উচিত। এটি শরীরের মেটাবলিজম ভালো রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
এই উপায়গুলো অনুসরণ করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সঠিক জীবনধারা গ্রহণ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পার্থক্য-স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের পার্থক্য
হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক দুটি ভিন্ন চিকিৎসা অবস্থা, যদিও উভয়ই গুরুতর এবং জীবনহানির ঝুঁকি বহন করে। এই দুটি অবস্থা সম্পর্কে পার্থক্যগুলি বোঝা জরুরি:
হার্ট অ্যাটাক
কারণ: হার্ট অ্যাটাক (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) ঘটে যখন হৃদপিণ্ডের একটি অংশে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এটি সাধারণত করোনারি ধমনীতে প্লাক (ফ্যাটি ডিপোজিট) জমে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে ঘটে।
লক্ষণ:
- বুকে প্রচণ্ড ব্যথা বা চাপ
- বাহু, গলা, চোয়াল বা পিঠে ব্যথা ছড়ানো
- শ্বাসকষ্ট
- ঠান্ডা ঘাম
- মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়া
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
পরিণাম: হৃদপিণ্ডের পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা মারা যেতে পারে, যার ফলে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
স্ট্রোক
কারণ: স্ট্রোক ঘটে যখন মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এটি দুটি প্রধান কারণে হতে পারে:
- ইস্কেমিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কের রক্তনালী ব্লক বা সংকুচিত হয়ে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এটি সবচেয়ে সাধারণ।
- হেমোরেজিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তপাত হয়, যার ফলে মস্তিষ্কের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লক্ষণ:
- মুখ, হাত বা পায়ের হঠাৎ দুর্বলতা বা অসাড়তা, বিশেষ করে শরীরের একপাশে
- কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধা
- দৃষ্টি সমস্যা
- হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা
- ভারসাম্য বা সমন্বয় হারানো
পরিণাম: মস্তিষ্কের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত বা মারা যেতে পারে, যার ফলে শারীরিক, মানসিক এবং ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা হতে পারে।
পার্থক্য
- অবস্থান: হার্ট অ্যাটাক হৃদপিণ্ডে ঘটে, আর স্ট্রোক মস্তিষ্কে।
- কারণ: হার্ট অ্যাটাকের কারণ হল হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া, আর স্ট্রোকের কারণ হল মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হওয়া বা রক্তপাত হওয়া।
- লক্ষণ: হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ মূলত বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের সাথে সম্পর্কিত, আর স্ট্রোকের লক্ষণ মুখ, হাত বা পায়ের দুর্বলতা, কথা বলতে অসুবিধা এবং দৃষ্টি সমস্যার সাথে সম্পর্কিত।
চিকিৎসা
হার্ট অ্যাটাক:
- এসপিরিন এবং অন্যান্য রক্ত পাতলা করার ওষুধ
- থ্রম্বোলাইটিক ওষুধ
- কোরোনারি এঞ্জিওপ্লাস্টি এবং স্টেন্টিং
- কোরোনারি বাইপাস সার্জারি
স্ট্রোক:
- ইস্কেমিক স্ট্রোকে থ্রম্বোলাইটিক ওষুধ (যদি সময়মতো প্রয়োগ করা যায়)
- হেমোরেজিক স্ট্রোকে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য সার্জারি
- পুনর্বাসন থেরাপি (ফিজিক্যাল, অকুপেশনাল, এবং স্পিচ থেরাপি)
হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক উভয়ই জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন এবং দ্রুত চিকিৎসা পেলে জীবন রক্ষা এবং ক্ষতি কমানো সম্ভব। এই দুটি অবস্থার লক্ষণ ও কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং জরুরি অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা(heart attack treatment)-হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক চিকিৎসা
হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা(heart attack treatment) দ্রুত এবং সঠিকভাবে দেওয়া হলে রোগীর জীবন রক্ষা এবং হৃদপিণ্ডের ক্ষতি কমানো সম্ভব। নিচে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
১. প্রাথমিক চিকিৎসা
জরুরি সেবা ডাকা: হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ ৯১১ বা স্থানীয় জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করুন। রোগীকে হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যাওয়া জরুরি।
এসপিরিন গ্রহণ: যদি রোগী এসপিরিন সহ্য করতে পারে এবং এলার্জি না থাকে, তবে তৎক্ষণাৎ ১৬২-৩২৫ মি.গ্রা এসপিরিন চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে এবং হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ উন্নত করতে সহায়ক।
নাইট্রোগ্লিসারিন: রোগীর প্রেসক্রিপশনে নাইট্রোগ্লিসারিন থাকলে, এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি রক্তনালীগুলি প্রসারিত করে এবং বুকে ব্যথা কমাতে সহায়ক।
২. হাসপাতালের চিকিৎসা
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি): হাসপাতালে পৌঁছানোর পর ইসিজি করা হয়, যা হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক নির্ণয়ে সহায়ক।
রক্ত পরীক্ষা: ট্রোপোনিন এবং অন্যান্য হার্ট এনজাইমের মাত্রা নির্ধারণের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
থ্রম্বোলাইটিক ওষুধ: রক্তনালীতে জমাট বাঁধা রক্ত গলানোর জন্য থ্রম্বোলাইটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত ইস্কেমিক হার্ট অ্যাটাকের প্রথম ঘণ্টাগুলিতে প্রয়োগ করা হয়।
কোরোনারি এঞ্জিওপ্লাস্টি এবং স্টেন্টিং: বদ্ধ বা সংকুচিত ধমনীগুলি খুলতে এঞ্জিওপ্লাস্টি এবং স্টেন্টিং করা হয়। এ প্রক্রিয়ায়, একটি বিশেষ বেলুন ব্যবহার করে ব্লকেজ খোলা হয় এবং একটি স্টেন্ট স্থাপন করা হয় যাতে ধমনী খোলা থাকে।
কোরোনারি বাইপাস সার্জারি: যদি একাধিক ধমনীতে ব্লকেজ থাকে বা এঞ্জিওপ্লাস্টি সম্ভব না হয়, তবে কোরোনারি বাইপাস সার্জারি করা হয়। এতে ব্লকেজ বাইপাস করে অন্য রক্তনালী থেকে রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করা হয়।
৩. পুনর্বাসন এবং ফলো-আপ
হার্ট রিহ্যাবিলিটেশন: হার্ট রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রামে রোগীর ফিজিক্যাল, ইমোশনাল এবং সামাজিক পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হয়। এতে শরীরচর্চা, ডায়েট, জীবনধারা পরিবর্তন, এবং মানসিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
জীবনধারা পরিবর্তন: হার্ট অ্যাটাকের পর জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে। এতে অন্তর্ভুক্ত:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
- নিয়মিত ব্যায়াম
- ধূমপান ত্যাগ
- অ্যালকোহল সীমিতকরণ
- ওজন নিয়ন্ত্রণ
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
মেডিকেশন: হার্ট অ্যাটাকের পর দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, যেমন:
- বেটা-ব্লকারস
- এসিই ইনহিবিটরস
- স্ট্যাটিনস
- রক্ত পাতলা করার ওষুধ
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে চেকআপ করা এবং ওষুধ গ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।
৪. জরুরি সেবার জন্য প্রস্তুতি
এডভান্সড ডাইরেকটিভস: রোগীর চিকিৎসা বিষয়ক অগ্রিম নির্দেশনা এবং জরুরি কন্টাক্ট নম্বর প্রস্তুত রাখা উচিত।
সচেতনতা: পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ এবং প্রাথমিক পদক্ষেপ সম্পর্কে সচেতন করা গুরুত্বপূর্ণ।
হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা দ্রুত এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে জীবন রক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি কমানো সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনধারা পরিবর্তন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি।
হার্ট অ্যাটাক রোগীর খাবার
হার্ট অ্যাটাকের পর রোগীর খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করতে এবং পুনরায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে। নিচে হার্ট অ্যাটাকের পর রোগীর জন্য উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ দেওয়া হলো:
১. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ
উপযুক্ত ফ্যাট: অলিভ অয়েল, ক্যানোলা অয়েল, অ্যাভোকাডো, বাদাম এবং বীজের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করুন। পরিহার: স্যাচুরেটেড ফ্যাট (যেমন: রেড মিট, বাটার) এবং ট্রান্স ফ্যাট (প্রক্রিয়াজাত খাবার, হাইড্রোজেনেটেড অয়েল) এড়িয়ে চলুন।
২. প্রচুর শাকসবজি এবং ফলমূল
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: বিভিন্ন রকম শাকসবজি এবং ফলমূল গ্রহণ করুন। এগুলি ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেলে সমৃদ্ধ এবং হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী। উদাহরণ: পালং শাক, ব্রকোলি, বেল মরিচ, কমলা, আপেল, বেরি ইত্যাদি।
৩. সম্পূর্ণ শস্য গ্রহণ
কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট: সম্পূর্ণ শস্য যেমন ব্রাউন রাইস, ওটমিল, কোয়িনোয়া, বার্লি এবং সম্পূর্ণ শস্যের রুটি ও পাস্তা গ্রহণ করুন। পরিহার: প্রক্রিয়াজাত শস্য যেমন সাদা রুটি, সাদা পাস্তা, সাদা চাল ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
৪. লীন প্রোটিন গ্রহণ
উপযুক্ত প্রোটিন: লীন প্রোটিন যেমন চিকেন ব্রেস্ট, টার্কি, মাছ (বিশেষ করে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ যেমন স্যামন, ম্যাকারেল), ডাল, ছোলা, মটর, টোফু ইত্যাদি। পরিহার: চর্বিযুক্ত মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, বেকন) এবং ভাজা মাংস এড়িয়ে চলুন।
৫. কম সোডিয়াম গ্রহণ
সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ: সোডিয়াম গ্রহণ সীমিত করুন। রান্নায় কম লবণ ব্যবহার করুন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। লেবেল দেখে খাবারের সোডিয়াম পরিমাণ যাচাই করুন। বিকল্প: হালকা লবণ বা সোডিয়াম-মুক্ত সিজনিং ব্যবহার করুন।
৬. পর্যাপ্ত জলপান
জলপান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করুন। চা, কফি (সীমিত পরিমাণে) এবং ডিক্যাফিনেটেড পানীয় গ্রহণ করা যেতে পারে। পরিহার: চিনি যুক্ত পানীয় এবং অ্যালকোহল সীমিত বা পরিহার করুন।
৭. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন যা হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। উদাহরণ: বেরি, চেরি, ডার্ক চকলেট (মডারেশনে), বাদাম, সবুজ চা ইত্যাদি।
৮. মডারেশন এবং পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: খাদ্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ছোট ছোট ভাগে খাবার খান এবং ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়া উচিত।
৯. ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টস (প্রয়োজনে)
চিকিৎসকের পরামর্শ: কিছু ক্ষেত্রে ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টস (যেমন: ওমেগা-৩, কিউ১০, ভিটামিন ডি) গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে, এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।
১০. খাদ্যাভ্যাসে নিয়মিততা
নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণ করুন এবং রাতের খাবার খুব দেরিতে না খাওয়া উচিত।
এই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে হার্ট অ্যাটাকের পর হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব এবং পুনরায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি।
হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেইলিউর এর মধ্যে পার্থক্য
হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিউর দুটি ভিন্ন চিকিৎসা অবস্থা, যদিও উভয়ই হৃদপিণ্ডের সাথে সম্পর্কিত। এই দুটি অবস্থার মধ্যে পার্থক্যগুলি নিচে বর্ণনা করা হলো:
হার্ট অ্যাটাক (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন)
কারণ: হার্ট অ্যাটাক ঘটে যখন হৃদপিণ্ডের কোনো অংশে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এটি সাধারণত করোনারি ধমনীগুলিতে প্লাক জমে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে ঘটে।
লক্ষণ:
- বুকে তীব্র ব্যথা বা চাপ, যা বাহু, ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে
- শ্বাসকষ্ট
- ঠান্ডা ঘাম
- মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়া
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- ক্লান্তি
পরিণাম: হার্ট অ্যাটাকের ফলে হৃদপিণ্ডের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা মারা যেতে পারে, যার ফলে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
চিকিৎসা:
- এসপিরিন ও অন্যান্য রক্ত পাতলা করার ওষুধ
- থ্রম্বোলাইটিক ওষুধ
- কোরোনারি এঞ্জিওপ্লাস্টি এবং স্টেন্টিং
- কোরোনারি বাইপাস সার্জারি
- জীবনধারা পরিবর্তন ও পুনর্বাসন
হার্ট ফেইলিউর (হার্টের অক্ষমতা)
কারণ: হার্ট ফেইলিউর ঘটে যখন হৃদপিণ্ড যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এটি হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, কার্ডিওমায়োপ্যাথি, বা অন্যান্য হৃদরোগের ফল হতে পারে।
লক্ষণ:
- শ্বাসকষ্ট, বিশেষ করে শারীরিক কার্যকলাপের সময় বা শুয়ে থাকার সময়
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- পায়ের গোড়ালি, পা ও পেট ফোলা
- দ্রুত বা অনিয়মিত হার্টবিট
- স্থায়ী কাশি বা শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় হাঁচি
- বমি বমি ভাব ও ক্ষুধামান্দ্য
পরিণাম: হার্ট ফেইলিউর একটি দীর্ঘমেয়াদী অবস্থা, যেখানে হৃদপিণ্ড যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে পারে না। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং পুষ্টি পায় না।
চিকিৎসা:
- ওষুধ (এএফসিই ইনহিবিটরস, বেটা-ব্লকারস, ডিউরেটিক্স, ডিজিটালিস)
- জীবনধারা পরিবর্তন (খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ধূমপান ত্যাগ)
- ডিভাইস থেরাপি (পেসমেকার, আইসিডি)
- সার্জারি (বাইপাস সার্জারি, হার্ট ভ্যালভ সার্জারি)
- অগ্রিম থেরাপি (হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট, মেকানিকাল সার্কুলেটরি সাপোর্ট)
মূল পার্থক্য
- অবস্থান ও কারণ: হার্ট অ্যাটাক হৃদপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ঘটে, যেখানে হার্ট ফেইলিউর ঘটে যখন হৃদপিণ্ড যথেষ্ট পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।
- লক্ষণ: হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডা ঘাম, যেখানে হার্ট ফেইলিউরের প্রধান লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোলা।
- চিকিৎসা: হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা তাত্ক্ষণিক এবং রক্তপ্রবাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকে মনোনিবেশ করে, যেখানে হার্ট ফেইলিউরের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করে।
এই পার্থক্যগুলি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাতে সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়।
6 signs of heart attack a month before
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি প্রায়ই তীব্র বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের মতো তাত্ক্ষণিক লক্ষণগুলির সাথে যুক্ত থাকে, তবে কিছু লক্ষণ এক মাস আগে থেকেই প্রকাশ পেতে পারে। এগুলি চিহ্নিত করা এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাব্য ছয়টি লক্ষণ উল্লেখ করা হলো, যা এক মাস আগেও দেখা দিতে পারে:
১. বুকে অস্বস্তি
বুকে চাপ, টান বা ব্যথা অনুভব করা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। এটি হালকা থেকে তীব্র হতে পারে এবং স্থায়ী বা আসা-যাওয়া হতে পারে।
২. ক্লান্তি
অসাধারণ ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা, বিশেষ করে যদি এটি দৈনন্দিন কার্যকলাপের জন্য অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়, এটি হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাভাস হতে পারে।
৩. শ্বাসকষ্ট
স্বাভাবিক কাজকর্মের সময় বা বিশ্রামের অবস্থায় শ্বাসকষ্ট অনুভব করা। এটি হার্টের রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টির ইঙ্গিত হতে পারে।
৪. ঘাম
অসাধারণ বা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বিশেষ করে যদি এটি শারীরিক কার্যকলাপ ছাড়াই ঘটে এবং ঠান্ডা ঘামের মতো অনুভূত হয়।
৫. পেটের সমস্যা
বমি বমি ভাব, হজমে সমস্যা, অথবা পেটে ব্যথা বা চাপ অনুভব করা। মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি সাধারণত বেশি দেখা যায় এবং প্রায়ই অন্য কারণে ভুল বোঝা হতে পারে।
৬. মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়া
মাথা ঘোরা, চেতনা হারানো বা হালকা লাগা। এটি হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাভাস হতে পারে এবং রক্তচাপ কমে যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
এই লক্ষণগুলি দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপান ত্যাগ করার মতো জীবনধারা পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
cardiac arrest vs heart attack
কার্ডিয়াক আরেস্ট এবং হার্ট অ্যাটাক হলো সম্পর্কিত তবে পৃথক চিকিত্সায় অবস্থান করানো সমস্যা:
- হার্ট অ্যাটাক (মাইওকার্ডিয়াল ইনফার্কশন):
- কারণ: সাধারণত এক বা একাধিক করোনারি ধমনীতে অবরোধ সৃষ্টি করে, যা হৃদয়ের মাংসপেশীতে রক্ত পরিপ্রেয়ণ দেয়।
- ফলাফল: রক্তপ্রবাহ এবং অক্সিজেন অভাবের কারণে হৃদয়ের এক অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- লক্ষণ: সীনার ব্যথা বা অসুবিধা, শ্বাসকষ্ট, ঘৃণা, এবং উপরোধক অন্যান্য অংশে ব্যথা বা অসুবিধা।
- চিকিৎসা: সঙ্গীবাদ, এঞ্জিওপ্লাস্টি, বা অপারেশন এর মাধ্যমে সূচিতভাবে সংশোধনী করার জন্য অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন।
- কার্ডিয়াক আরেস্ট:
- কারণ: হৃদয়ে একটি বিপদ অপসারণ হওয়ার ফলে সাধারণত একটি গোলায় হৃদয় এক্ষত থাকে।
- ফলাফল: মনে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়, যা যদি চিকিৎসা না দেওয়া হয় তাহলে কিছু মিনিটের মধ্যে মারাত্মক হতে পারে।
- লক্ষণ: অকারণে পড়ুয়া, বিচেতন, ও শ্বাস বন্ধ হওয়া।
- চিকিৎসা: চিকিৎসার দ্রুত অবস্থান, একত্রিত করোনোপাম্য শ্বাসকষ্ট ও বিদ্যুত দ্বারা হৃদয়ের সাধারণ রক্ত গতি এবং চর্চা পুনরুদ্ধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
heart attack meaning in bengali
“Heart attack” in Bengali can be translated as “হৃদয়ঘাত” (Hridoyghat).