বর্ষাকাল রচনা ক্লাস ২-১০খুবই সহজ

রচনা

বর্ষাকাল রচনা

সংকেত : *সূচনা   *বর্ষার সময়   *বর্ষার আগমন   *বর্ষার দৃশ্য   *বর্ষাকালের যোগাযোগ ব্যবস্থা *উপকারিতা   *অপকারিতা   *উপসংহার।

সূচনা : গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষা। বর্ষা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ঋতু। আমাদের দেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ মিলে হয় বর্ষাকাল।

বর্ষার সময় : বর্ষার অঝোর বৃষ্টিপাতে শুকিয়ে যাওয়া নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর পানিতে হয়ে ওঠে ভরপুর। আষাঢ়-শ্রাবণ এ দু’মাস বর্ষাকাল। কিন্তু আমাদের দেশে বর্ষার আগমন অনেক আগেই ঘটে থাকে। কোনো কোনো সময় বর্ষা জ্যৈষ্ঠ মাসে শুরু হয়ে আশ্বিন মাস পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।

বর্ষার আগমন : গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহের পর বর্ষার আগমন ঘটে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপে যখন প্রকৃতি দগ্ধ হয়ে ওঠে ও মানুষজন, পশু-পাখি অসহ্য গরমে ছটফট করতে থাকে, ঠিক তখনই নেমে আসে বর্ষার অবিরল বৃষ্টির ধারা। তাই তো কবি বলেছেন—

নীল নবঘনে আষাঢ় গগন
তিল ঠাঁই আর নাহিরে
ওগো তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে ॥

বর্ষার দৃশ্য : বর্ষার পানিতে নদী-নালা ও খাল-বিল পানিতে থৈথৈ করতে থাকে। ব্যাঙ মুখ ফুলিয়ে মনের আনন্দে গান ধরে। গাছ-পালা, তরু-লতা পানি পেয়ে সতেজ ও সবল হয়ে ওঠে। মাছগুলো নতুন পানিতে ছোটাছুটি করে।

বর্ষাকালের যোগাযোগ ব্যবস্থা : বর্ষাকালে গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট ডুবে যায়। কোথাও পায়ে হেঁটে যাওয়ার উপায় থাকে না। তখন নৌকাই হয় বর্ষাকালের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।

উপকারিতা : বর্ষা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ঋতু। গ্রামবাংলার মানুষ অনেকাংশে বর্ষার ওপর নির্ভরশীল। বর্ষাকালে পায়ে চলার পথ অনায়াসে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করা যায়। এছাড়া বর্ষায় জমিতে প্রচুর পলি জমে জমিকে উর্বর করে তোলে।

অপকারিতা : বর্ষার অপকারিতাও কম নয়। বর্ষাকালে পথ-ঘাট ডুবে যায়। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে বন্যার সময় দূষিত পানি পান করে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়।

উপসংহার : বর্ষাকালে যতই অসুবিধা থাকে না কেন, বর্ষা আমাদের জন্য বড়ই উপকারী ঋতু। বর্ষা না হলে এ দেশ মরুভূমিতে পরিণত হতো। তাই বর্ষা আমাদের কাছে অতি আনন্দপূর্ণ ও প্রিয় ঋতু।

বর্ষাকাল রচনা

ভূমিকা : বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বিভিন্ন ঋতুতে এ দেশের প্রকৃতি বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। প্রত্যেকটি ঋতু তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগমন করে। এভাবে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত— এ ছয়টি ঋতুর একে একে আবির্ভাব ঘটে এখানে। প্রত্যেক ঋতুর নিজস্ব প্রকৃতি পৃথকভাবে ধরা পড়ে। তবে বাংলাদেশে বর্ষার রূপ যেরূপ প্রকট ও স্পষ্ট, অন্য কোনো ঋতু তেমনি স্পষ্ট বা প্রকটরূপে আবির্ভূত হয় না।

বর্ষার আগমনকাল : পঞ্জিকা অনুযায়ী বর্ষার কাল আষাঢ়-শ্রাবণ দুমাস। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিকে বর্ষা শুরু হয় এবং আশ্বিন মাসের প্রান্তভাগ পর্যন্ত তা বিস্তৃত থাকে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে বাংলাদেশের প্রকৃতি যখন উত্তপ্ত হয়ে থাকে, তখন বৃষ্টির শীতল ও স্নিগ্ধ স্পর্শ নিয়ে বর্ষা আসে। তাপদগ্ধ প্রকৃতি বৃষ্টির পানি পেয়ে শান্ত ও পরিতৃপ্ত হয়। বর্ষার বৈশিষ্ট্য : বর্ষার আগমনে নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠঘাট পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বর্ষার আকাশ প্রায় মেঘাচ্ছন্ন থাকে। কখনো কখনো প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। অনেক সময় মেঘের আড়ালে সূর্য ঢাকা পড়ে যায়। কখনো কখনো সারাদিন মুষলধারায় বৃষ্টি ঝরে। ঘরের বাইরে যাওয়া তখন অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের বর্ষণমুখর রূপটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বর্ষার এরূপ দেহ-মনে এক শিহরণ জাগায়। বর্ষা এ দেশের মানুষকে উদাস করে ফেলে, ভাবুক করে তোলে। বর্ষার রূপ মাধুর্য কবিকে মোহিত করে, শিল্পীকে দেয় সৃষ্টির প্রেরণা।

বর্ষায় পল্লীর অবস্থা : পল্লী অঞ্চলেই বর্ষার প্রকৃত রূপ দেখতে পাওয়া যায়। বর্ষার প্রবল বর্ষণে গ্রামের রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত থাকে। কৃষকেরা মাথাল মাথায় দিয়ে মাঠে কাজ করে। গ্রাম্য রমণীরা বৃষ্টিতে ভিজে নদীর ঘাটে পানি আনতে যায়। গ্রামবাসীদের চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়ে; বহু কষ্টে তারা হাটবাজারে যায়। বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলসমূহে নৌকা, ডিঙ্গি, ভেলা ইত্যাদির ব্যবহার বেড়ে যায়। বর্ষার পানিতে নিচু এলাকা একাকার হয়ে গ্রামগুলোকে ছোট ছোট দ্বীপের মতো প্রতীয়মান হয়। বর্ষা প্লাবিত গ্রাম-বাংলার সৌন্দর্যের কোনো তুলনা নেই। পথের ধারে ছোট ছোট ডোবা-নালার পানিতে ছেলে মেয়েরা আনন্দের সঙ্গে মাছ ধরায় মেতে ওঠে। শিশুরা পানিতে ভিজে ভেলা ও কাগজের নৌকা ভাসিয়ে আনন্দ উপভোগ করে। বর্ষাকালে পল্লী অঞ্চলে সত্যি এক অপরূপ ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা হয়।

উপকারিতা : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি মূলত বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। ধান ও পাট চাষ বৃষ্টিপাত ছাড়া সম্ভব নয়। আর বৃষ্টিপাত হয় বর্ষাকালে। পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হলে ফসল কখনোই ভালো হতে পারে না। বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা হয়। বন্যার একটি ভালো দিক আছে। বন্যার ফলে জমিতে পলিমাটি পড়ে; পলি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। তাছাড়া চারদিক প্লাবিত-করা বন্যা স্থলভাগের ময়লা-আবর্জনা ধৌত করে ফেলে। এতে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন হয় এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জনগণের প্রভূত উপকার সাধিত হয়ে থাকে। বর্ষায় নদী পথের দৈর্ঘ্য বেড়ে যায়। যে সকল অঞ্চলে যোগাযোগের জন্য জলপথের প্রয়োজনীয়তা বেশি, সে সকল অঞ্চলে বর্ষাকালে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা বৃদ্ধি পায়। রপ্তানির দিকও উন্নত হয়।

অপকারিতা : বর্ষার কিছু কিছু মন্দ দিকও আছে। অনাবৃষ্টি, খরা যেমন কৃষির জন্য দুর্দশা ডেকে আনে, তেমনি অতিবৃষ্টিও কৃষিতে প্রভূত ক্ষতিসাধন করে থাকে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দেয়; বন্যার ফলে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যা যদি কখনো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, তখন সে বন্যা ঘর-বাড়ি, পশু-পাখি ইত্যাদি ভাসিয়ে নিয়ে যায়; মাঠের ফসল বিনষ্ট হয়। জনগণের যোগাযোগ ও চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরিবেশ দূষণ বাড়ে ও দুর্ভিক্ষ মহামারির প্রাদুর্ভাব হয়। এরূপ অবস্থা শহর জীবনেও দেখা দেয়। শহর-জীবনে বর্ষার বৃষ্টিপাত অনেক সময় দুঃসহ ও পীড়াদায়ক পরিস্থিতির জন্ম দেয়। বিশেষ করে বস্তিবাসীদের দুর্দশার অন্ত থাকে না। শহরের নিচু এলাকার জলাবদ্ধতা দুঃসহ ও বেদনাদায়ক অবস্থার সৃষ্টি করে। নালা-নর্দমার দূষিত ও নোংরা পানি বস্তিবাসীদেরকে এক অসহনীয় ও শোচনীয় অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়। এসবই বর্ষার অপকারিতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

উপসংহার : বাংলাদেশে বর্ষাকাল জনগণের জন্য বিধাতার আশীর্বাদ। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বর্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। যে ফসল সারাদেশের মানুষের খাদ্য যোগায়, সে ফসলের উৎপাদন হয় বর্ষাকালে। এই একটি কারণের জন্যেও বর্ষাকাল আমাদের জীবনে অপরিহার্য। বর্ষাই এ দেশকে সুজলা, সুফলা ও শস্যশ্যামলা করে থাকে। বাংলাদেশের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও বর্ষাঋতুরই অবদান। বর্ষার সঙ্গে এ দেশের মানুষের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বর্ষা বাংলাদেশের জন্য এক অমূল্য সম্পদ।



About author

saikat mondal

Welcome to www.banglashala.com. Banglashala is a unique address for Bengali subjects. banglashala is an online learning platform for Bengalis. So keep learning with us



3 Comments

GHOST10:03 am

Very good for Assingments

Reply

Ghost4:04 pm

😈😈😈😈😈

Reply

homepage10:45 pm

levitra original en france

Reply

Leave a Reply

ten − 5 =